ঝিনাইদহ প্রতিনিধি:
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে দারুস শেফা প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে লাভলী বেগম (২৬) নামে এক প্রসুতি মা অপচিকিৎসায় মারা যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। লাভলী বেগম কালীগঞ্জ পৌরসভাধীন বলিদাপাড়ার বাসিন্দা। স্বামী এনামুল কবিরের চাকরি কারনে কালীগঞ্জে বসবাস করেন। তাদের গ্রামের বাড়ি জেলার হরিণাকুন্ডু উপজেলার তৈলটুপি।
সংবাদ পেয়ে শনিবার বেলা ৩টার দিকে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসরাত জাহানের নেতৃত্বে ক্লিনিকে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয়। এসময় ক্লিনিকের মালিক ডাক্তার জহুরুল ইসলামকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও ওটিসিলগালা করে দেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন কালীগঞ্জ উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার আলমগীর হোসেন ও কালীগঞ্জ থানার পুলিশ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লাভলী বেগম দ্বিতীয়বারের মতো সন্তান জন্ম দিতে ২৯ মার্চ সকালে কালীগঞ্জ শহরের কালিবাড়ি মোড় এলাকার দারুস শেফা প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি হন। সেখানে বিকাল ৪টার দিকে তার শরীরে অস্ত্রপ্রচার করেন ডাক্তার রেক্সোনা পারভীন। অস্ত্রপ্রচারের মাধ্যমে লাভলী বেগম কন্যা সন্তানের জন্ম দেন কিন্তু তার শরীর থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে থাকে। রক্ত বন্ধ না হওয়ায় লাভলী বেগমকে নেওয়া হয় অপারেশন থিয়েটারে। রাত ৮ টা পর্যন্ত রোগীকে দ্বিতীয় অপারেশনের কথা বলে অপারেশন থিয়েটারেই রাখা হয়। স্বজনরা এ সময় রোগীর অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে অপারেশন থিয়েটারের ভেতর থেকে বার বার জানানো হয় রোগী ভালো আছে। সেলাই শেষ করেই তাকে বেডে দেওয়া হবে। দীর্ঘ সময় পার হলেও রোগীকে অপারেশন থিয়েটার থেকে বের না করাই স্বজনদের মনে সন্দেহ হয়। এরপর একজন অপারেশন থিয়েটারে প্রবেশ করে দেখেন রোগী অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে। অপারেশন থিয়েটারের মেঝে রক্তে ভরে গেছে। এ সময় ডাক্তার রেক্সোনা রোগীর স্বজনদের বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য লাভলী বেগমকে এখনই যশোরে নেওয়া প্রয়োজন। রাতেই ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ জোর করেই যশোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। শনিবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান লাভলী বেগম।
রোগীর স্বজন সাদ্দাম হোসেন এই প্রতিবেদককে জানান, দারুশ শেফা প্রাইভেট হাসপাতালের ডাক্তারের অপচিকিৎসায় লাভলী বেগম মারা গেছে। হাসপাতালের ডাক্তার রেক্সোনা পারভীন অপ্রয়োজনে তার জরায়ু কেটে ফেলেছেন। জরায়ু কেন কাটা হলো এমন প্রশ্নের কোন উত্তর তিনি দিতে পারেননি ডাক্তার। রোগীর শরীরের রক্তক্ষরণ দেখে ডাক্তার রেক্সোনা নিজেই ঘাবড়ে যান। তিনি আমাদেরকে বলেন এই রোগীর সব দায়-দায়িত্ব আমি নেব। আমি সাথে লোক দিচ্ছি আপনারা দ্রæত যশোর নিয়ে যান বলে গাড়িতে উঠিয়ে দেন। আমরা এ অপচিকিৎসকের বিচার চাই ।
এ ব্যাপারে শেফা প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডা: রেক্সোনা পারভীনের সাথে মুঠোফোনে কথা বলার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। পরে ডায়গনষ্টিক সেন্টারে গেলে নিরাপত্তারক্ষীরা বলেন ম্যাডাম আজ আসেননি ।
কালীগঞ্জ উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার আলমগীর হোসেন বলেন, দারুস শেফা প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে প্রায়ই রোগী মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। প্রতিবারই ভুক্তভোগীরা বিভিন্ন সময় অভিযোগ করলেও প্রাইভেট হাসপাতাল মালিক পক্ষের সাথে সমঝোতা করাই শেষ পর্যন্ত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয় না। আজকের ঘটনা শুনলাম, আমি অবশ্যই এ ব্যাপারে তদন্ত করে প্রয়োজনীও ব্যবস্থা গ্রহণ করব।