হোম Uncategorizedবাংলাদেশ নিরবের স্বপ্ন পূরন করলেন সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার

নিরবের স্বপ্ন পূরন করলেন সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 99 ভিউজ

চন্দন চৌধুরী, বিশেষ প্রতিনিধি : চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমীতে পড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন সাতক্ষীরার মেধাবী যুবক শামীম কবির নিরব। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন পূরন হচ্ছিলো না। স্বপ্ন পূরনে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলো ১ লাখ টাকা। দরিদ্র পরিবারের সন্তান হওয়ায় তার পক্ষে এই টাকা যোগাড় করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। অথচ নির্ধারিত সময়ে টাকা জমা না দিতে পারলে আসনটি শূন্য ঘোষনা করা হবে বলে জানায় চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমী।
নিরবের সেই স্বপ্ন পূরনে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোঃ মতিউর রহমান সিদ্দিকী। এক লক্ষ টাকা দিয়ে নিরবের মৃতপ্রায় স্বপ্নটিকে পুনরায় উজ্জীবিত করেছেন।
সোমবার (২৬ ফেব্রæয়ারি) বিকালে পুলিশ সুপারের পক্ষ থেকে নিরবকে ১ লাখ টাকা সহায়তা প্রদান করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সজীব খান। এসময় বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সংবাদকর্মীগন সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
আগামীকাল ২৭ ফেব্রæয়ারি নিরবের ভর্তির শেষ দিন। তড়িঘড়ি করে তাই সন্ধ্যা ৬টার গাড়িতে চট্টগ্রাম যাবেন বলে চলে গেলেন। যাবার আগে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন নিরব।
নিরব বলেন, মনে হচ্ছে নতুন জীবন পেয়েছি। মেরিন একাডেমীতে পড়ার সুযোগ পেয়েও টাকার অভাবে ভর্তি হতে পারছিলেন না কারন তার বাবা সিদ্দিক মোড়ল একজন চায়ের দোকানী। অতিকষ্টে তাদের সংসার চলে। এমতাবস্থায় পুলিশ সুপার মহোদয়ের কাছ থেকে এক লক্ষ টাকা সহযোগিতা পেয়ে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছেন তিনি।
পুলিশ সুপারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে নিরব আরও বলেন, উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশ ও জাতির মুখ উজ্জ্বল করাই তার একমাত্র লক্ষ্য। সুযোগ পেলে তার মত গরীব ও আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল ছাত্রছাত্রীদের জন্য কিছু একটা করতে চান তিনি।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার সিদ্দীক মোড়লের ছেলে শামীম কবির নিরব। অত্যন্ত মেধাবী এই যুবক ২০২০ সালে পুলিশ লাইন্স স্কুল থেকে এসএসসিতে জিপিএ-৫ ও যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে ২০২২ সালে এইচএসসিতেও জিপিএ-৫ পেয়ে নিজের মেধার পরিচয় দিয়েছেন। গত ২৭ জানুয়ারি তারিখে চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমীতে ভর্তি পরীক্ষায় ৩৫তম স্থান অধিকার করেন তিনি। তবে ভর্তি হতে গেলে ভর্তি ফি ৫০ হাজার টাকা সহ আনুষঙ্গিক খরচ দিয়ে মোট ১ লাখ টাকা লাগবে বলে জানায় মেরিন একাডেমী কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তার কাছে এই টাকার যোগান না থাকায় বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তা নিয়ে রিপোর্ট ছাপা হয়। এরই প্রেক্ষিতে পুলিশ সুপারের কাছ থেকে আজ তিনি এই সহযোগিতা পেলেন।
এ ব্যাপারে নিরবের বাবা সিদ্দিক মোড়ল বলেন, তার ছেলে অত্যন্ত মেধাবী। ইতিপূর্বে সে এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে। বর্তমানে সে মেরিন একাডেমীতে পড়তে যাচ্ছে। চায়ের দোকানী হওয়ায় তার পক্ষে ছেলের লেখাপড়ার খরচ চালানো প্রায় অসম্ভব। কারন এই রোজগারে সংসার চালানোই অনেক কষ্ট। তার পরও এতদিন অর্ধাহারে অনাহারে থেকে কোনরকমে ছেলের লেখাপড়ার খরচ যুগিয়েছেন। তাকে যদি শিক্ষাবৃত্তির আওতায় আনা হয় কিংবা কোন সহৃদয়বান ব্যক্তি তার ছেলের লেখাপড়ার খরচ বহন করে তবে তার প্রতি তিনি সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকবেন।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সজীব খান বলেন, পুলিশ সুপারের এ ধরনের কাজ অত্যন্ত প্রশংসনীয়। দেশ ও জনগনের সেবায় পুলিশ যে সবসময় নিয়োজিত, এটি তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আশা করি নিরব নামের ছেলেটি ভবিষ্যতে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশের কল্যানেই কাজ করবে। সে পরপর দুটি পাবলিক পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ন হয়েছে। এতেই বোঝা যায় সে কতটা মেধাবী ও পরিশ্রমী। তার মত মেধাবী অথচ আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল ছেলেমেয়েদেরও উচিত শামীম কবির নিরবের পদাঙ্ক অনুসরন করা, নিজেদের মেধার স্বাক্ষর রাখা। তাকে দেখে উৎসাহিত হলেই দেশ ও সমাজের চিত্র বদলে যাবে বলেও মন্তব্য করেন জেলা পুলিশের এই কর্মকর্তা।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন