হোম খুলনাবাগেরহাট ১৪ ফেব্রয়ারী জাতীয়ভাবে সুন্দরবন দিবস পালনের দাবি পুরণ হয়নি ২৪ বছরেও

১৪ ফেব্রয়ারী জাতীয়ভাবে সুন্দরবন দিবস পালনের দাবি পুরণ হয়নি ২৪ বছরেও

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 76 ভিউজ

জসিম উদ্দিন,বাগেরহাট:

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন ও বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ সুন্দরবন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অতুলনীয় ও অসাধারণ জীব-বৈচিত্রে ভরপুর এখানে। এটি শুধু বাংলাদেশের মানুষের কাছে নয়, বিশ্বের প্রকৃতি প্রেমীদের কাছে একটি আকর্ষণীয় স্থান। সুন্দরবন প্রশস্ত বনভূমি যা বিশ্বের প্রাকৃতিক বিস্ময়াবলীর অন্যতম। সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে সুন্দরবন বিশ্বের সর্ববৃহৎ অখ- বনভূমি। ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কোর ২১তম অধিবেশনে সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়।

২০০১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের আওতায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের আরও ৭০টি পরিবেশবাদী সংগঠনের অংশগ্রহণে প্রথম জাতীয় সুন্দরবন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই সম্মেলনে ১৪ ফেব্রয়ারীকে ‘সুন্দরবন দিবস’ ঘোষণা করা হয়। এবনের জীব-বৈচিত্র সংরক্ষণে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতিবছর ১৪ ফেব্রয়ারি পালিত হয়ে আসছে সুন্দরবন দিবস। এরই ধারাবাহিকতায় আজ পালিত হচ্ছে ২৪তম সুন্দরবন দিবস। উপকূলীয় এলাকায় দিবসটি পালিত হয়ে আসছে গেল ২৩ বছর ধরে।

খুলনা বিশ্ব বিদ্যালয়ের ফরেষ্ট এন্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিন বিভাগের প্রফেসর ড. মোঃ ওয়াসিউল ইসলাম জানান,বাংলাদেশ অংশে সুন্দরবনের আয়তন প্রায় ৬ হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটার। বঙ্গোপসাগরের জোয়ারের পানিতে দিনে দুইবার প্লাবিত হয় সুন্দরবন। এই বনের আয়তনের ৩১ দশমিক ১৫ ভাগই হচ্ছে জলাভূমি। সুন্দরবনের মোট আয়তনের ৫২ ভাগই এখন ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইট (বিশ্ব ঐতিহ্য এলাকা)। বিশ্বের সর্ববৃহৎ এই জলাভূমি ‘রামসার’ এলাকা হিসেবে স্বীকৃত। সুন্দরবনে রয়েছে ৫ হাজার প্রজাতির সম্পূরক উদ্ভিদ, ১৯৮ প্রজাতির উভচর প্রাণী, ১২৪ প্রজাতির সরীসৃপ, ৫৭৯ প্রজাতির পাখি, ১২৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী ও ৩০ প্রজাতির চিংড়ি মাছ। সুন্দরীসহ এই বনে রয়েছে ৩৩৪ প্রজাতির গাছপালা, ১৬৫ প্রজাতির শৈবাল ও ১৩ প্রজাতির অর্কিড। বাঘ, হরিণ, কুমির, শুকর, গোখরো, বিলুপ্তপ্রায় ইরাবতীসহ ৬ প্রজাতির ডলফিনসহ ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণী ও ২১০ প্রজাতির মৎস্য সম্পদ। বিশ্বের অন্যান্য ম্যানগ্রোভ বনের তুলনায় সুন্দরবন জীব-বৈচিত্র্য অধিকতর সমৃদ্ধ। তাই সুন্দরবনকে বলা হয় জীব-বৈচিত্রের পাঠশালা। সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে সুন্দরবন বিশ্বের সর্ববৃহৎ অখ- বনভূমি।তাই সরকারী ভাবে দিবসটি পালন করা ও স্বীকৃত হওয়া উচিত। যাতে সুন্দরবন সংরক্ষনে আরও বেশি সচেতন করা যায়। তবে এর সাখে জড়িতরা সংরক্ষনের অংশ হতে পারেন। এর ফলে স্থানীয় সম্প্রদায়ের মানুষদের অর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নতি করতে পারবে।

সুন্দরবন রক্ষায় আমরা নামক সংগঠনের সম্মনয়কারী মোঃ নর আলম শেখ বলেন,পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন হচ্ছে সুন্দরবন। প্রাণ-বৈচিত্রে ভরপুর এই বন লাখো মানুষের জীবিকার সংস্থান করে চলেছে। ঝড়-জলোচ্ছাস এখনও দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে বাঁচাতে সুন্দরবনের ভূমিকা অপরিসীম। বনের প্রতি অতি-নির্ভরতা এবং মানুষের নির্বিচার আচরণে দিন দিন বিপন্ন হচ্ছে এর পরিবেশ ও প্রতিবেশ। প্রতিটি ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতবিক্ষত হয়ে মায়ের মত উপকূলের কোটি-কোটি মানুষকে নিরাপদে আগলে রাখে। । জলবায়ু পরিবর্তনের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি ও পরিবেশ দূষণসহ নানা কারনে সুন্দরবন এখন নিজেই ভালো নেই। তাই সুন্দরবন কে ভালোবেসে প্রতি বছর ১৪ ফেব্রয়ারী সুন্দরবন দিবস ঘোষনা করার দাবি জানাচ্ছি আবারও। তিনি বলেন,সরকারী ভাবে এ দিবসটি পালিত হলে, সুন্দরবনের প্রতি সবার ভালো বাসা বাড়বে,সচেতন হবে সবাই।

সুন্দরবন খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক- মিহির কুমার দো জানান, সরকারী ভাবে ১৪ ফেব্রয়ারী সুন্দরবন দিবস ঘোষনা করা হয়নি এখনো। বিভিন্ন সংগঠনের এ দাবি সরকারের সংশ্লিষ্ট দপÍরে পাঠানো হয়েছে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তিনি পাঠাননি। এর আগে কেউ পাঠিয়েছে কিনা জানেনা। যেহেতু সরকারী ভাবে দিবসটি ঘোষনা করা হয়নি,তাই বন বিভাগ এটি পালন করছেন না।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন