জাতীয় ডেস্ক:
আসন্ন রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন।
তিনি বলেন, রমজানকে সামনে রেখে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অধিক মুনাফা লাভের আশায় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়িয়ে দেন। এটি ধর্মীয় বা নৈতিকভাবে সমর্থনযোগ্য নয়।
সোমবার (১৫ জানুয়ারি) শিল্প ভবনে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি আশরাফ আহমেদের নেতৃত্বে সংগঠনটির পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে এ কথা বলেন শিল্পমন্ত্রী।
তিনি বলেন, বিদ্যমান বৈশ্বিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার বিষয়টি মোকাবিলায় দেশের অভ্যন্তরীণ সম্পদের সুষম ব্যবহার নিশ্চিতকল্পে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রণয়নের পাশাপাশি যথাযথ বাস্তবায়ন একান্ত অপরিহার্য। সারা দেশে বিসিকের অব্যবহৃত প্লটগুলোতে শিল্পকারাখানা স্থাপন ও বিনিয়োগে উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে।
এ ব্যাপারে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে জানিয়ে নূরুল মজিদ বলেন, এসএমই উদ্যোক্তারা দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি। এখাতের উদ্যোক্তাদের দক্ষতা উন্নয়নে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, বাজার সম্প্রসারণ, নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সরকার নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং আগামীতেও তা অব্যাহত থাকবে।
সাক্ষাৎকালে ডিসিসিআই সভাপতি আশরাফ আহমেদ পিপিপি মডেলের ভিত্তিতে বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহের অবকাঠামাসহ অন্যান্য পরিষেবার উন্নয়নে বেসরকারিখাতের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবং সারা দেশে বিসিকের শিল্প এলাকার অব্যবহৃত প্লটসমূহে অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের প্রস্তাব করেন।
তিনি বলেন, এলডিসি পরবর্তী সময়ে দেশের রফতানি পণ্যের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শিল্প নীতি, শ্রম নীতি, আমদানি-রফতানি নীতি এবং পরিবেশ সুরক্ষা বিষয়ক নীতিমালাগুলোর প্রয়োজনীয় সংস্কার ও নীতি সমন্বয় একান্ত অপরিহার্য।
দেশের সিএমএসএমই খাতের সার্বিক বিকাশের লক্ষ্যে এসএমই সংজ্ঞা পুননির্ধারণ করার প্রস্তাব করে ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, এটি কুটির, ক্ষুদ্র ও ছোট উদ্যোক্তাদের ঋণ এবং নীতি সহায়তা প্রাপ্তিতে সহযোগিতা করবে। এ ছাড়া তিনি স্থানীয় শিল্পের বিকাশে ‘এসএমই আইন’ প্রণয়নের প্রস্তাব করেন।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, প্রতিবছর বাংলাদেশ পণ্য উৎপাদনে ৬৮.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের কাঁচামাল আমদানি করে থাকে। এ অবস্থায় শিল্পখাতে আমদানি নির্ভরতা কমাতে তৈরি পোষাক, চামড়া, হালকা প্রকৌশলসহ সম্ভাবনাময় অন্যান্য খাতের কাঁচামাল উৎপাদনে নীতি সহায়তা ও সক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন।
তিনি বলেন, জিডিপিতে শিল্পখাতের অবদান ৩৭.৫৬ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যে সরকার-বেসরকারিখাতের সমন্বয় আরও বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। সেইসঙ্গে ক্লাস্টার ভিত্তিক শিল্পখাতের উন্নয়ন ও রফতানি খাতের বিকাশে ‘সেন্ট্রাল বন্ডেড ওয়ারহাউস’ স্থাপন করা দরকার।
আশরাফ আহমেদ আরও বলেন, বর্তমানে বৈশ্বিক হালাল পণ্যের বাজার প্রায় ৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ‘ইসলামিক এন্টারপ্রেনিউরশিপ অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট’-এর তথ্যমতে ২০৩০ সালে এর পরিমাণ হবে ১২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। সম্ভাবনাময় এ বাজারে বাংলাদেশি উৎপাদিত পণ্যের রফতানি বৃদ্ধিতে বিএসটিআই সনদের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি, পণ্য উৎপাদনে সক্ষমতা বৃদ্ধি, নীতি, অর্থ এবং প্রযুক্তিগত সহায়তাও প্রয়োজন।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ডিসিসিআইর ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি মালিক তালহা ইসমাইল বারী, সহ-সভাপতি মো. জুনায়েদ ইবনে আলী, পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. মুনিম হাসান, ন্যাশনাল প্রোডাক্টিভিটি অর্গানাইজেশনের (এনপিও) মহাপরিচালক মুহম্মদ মেসবাহুল আলম, শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মু. আনোয়ারুল আলম প্রমুখ।