রাজনীতি ডেস্ক:
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থক ও কর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে বাজিতপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-৫ (নিকলী-বাজিতপুর) আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পান বর্তমান সংসদ সদস্য মো. আফজাল হোসেন। এ সময় মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুব্রত পাল। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অনেকেই সুব্রত পালের নির্বাচনী সমর্থক ও কর্মী হিসেবে কাজ করে। নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আফজাল হোসেন বিজয়ী হয়। নির্বাচনের পর থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জের ধরে তাদের ওপর হামলা চালিয়ে আসছে। হামলা চালানো হয়েছে বাড়ি ঘরেও। আর এ ঘটনার নেতৃত্বে বর্তমান সংসদ সদস্য আফজাল হোসেনের ভাই বাজিতপুর পৌরসভার মেয়র আনোয়ার হোসেন আশরাফের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
নির্যাতনের শিকার গোলাপশাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী নিজাম উদ্দিন মাসুম কালবেলাকে বলেন, গত ৩ জানুয়ারি স্বতন্ত্র প্রার্থী (ঈগল প্রতীক) সুব্রত পালের নারী কর্মীরা গ্রামে ওয়ার্ক করতে যায়। এ সময় নৌকা প্রার্থীর সমর্থক রিপন গ্রুপের লোকজন অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। বিষয়টি জানার পর স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে ওই জায়গায় গেলে ফেরার পথে পাগলারচর আমার বাড়ির সামনে সালামত শাহ নামে একজন কর্মীকে ফেলে দিয়ে শারীরিক নির্যাতন করেছে নৌকা প্রার্থীর কর্মীরা। নির্বাচনের আগের দিন ৬ জানুয়ারি রাত পৌনে ১০টার সময় স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থিত পান্না বণিকের বাসায় যাওয়ার পর সেখান থেকে ফেরার পথে রিপন গ্রুপের লোকজন আমার ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে ৭ জানুয়ারি স্বতন্ত্র প্রার্থীর এজেন্ট হিসেবে কাজ করি। ভোট গণনার শেষে আবারও আক্রমণ করার পরিকল্পনা করে ব্যর্থ হয়। গত ১০ জানুয়ারি বিকেল পৌনে তিনটার সময় বাড়ির পাশে আবারও অতর্কিত হামলার শিকার হয়। তাদের ভয়ে কোনো আশ্রয়স্থল খুঁজে পাচ্ছি না। উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের ঘর বন্দি করে রেখেছে। আমাদের বাড়িঘর আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি প্রদান করেছে। তাদের ব্যপারে থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
ভুক্তভোগী গাজীরচর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার অপরাধে এরই সূত্র ধরে পৌর মেয়র আনোয়ার হোসেন আশরাফের ক্যাডার বাহিনী আমার ওপর অত্যাচার করেছে। শারীরিকভাবে আঘাত করেছে। গত ১০ জানুয়ারি বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে পালপাড়া এলাকায় আমার ওপর আক্রমণ করে। এ সময় পুলিশ এসে আমাকে উদ্ধার করে। বাজিতপুর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছি।
যুবলীগ কর্মী সোহেল মিয়া বলেন, দিলালপুর গ্রামে নির্বাচনের দিনে রাতে গুলাগুলি হয়েছে। এ ঘটনায় চারজন আহত হয়েছে। এরমধ্যে রাব্বি নামে একজন গ্রেপ্তার হয়েছে গুলির খোসাসহ। আহত হয়েছে আলামিন, তুষার, মানিক ও বাছির। আক্রমণকারীরা সকলেই নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর ভাই মেয়র আনোয়ার হোসেন আশরাফের লোক। স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচন করায় তাদের ওপর অত্যাচার করা হয়েছে। এ ঘটনায় অজ্ঞাত মামলা হয়েছে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুব্রত পাল বলেন, নির্বাচনের দিন থেকে মানুষের ওপর অত্যাচার শুরু হয়েছে। আমার এলাকায় কম করে হলেও ১০ জনকে আঘাত করেছে। তারা বাজিতপুর উপজেলার মাইজচর, হুমায়ুনপুর, কৈলাগ, সরারচর, হালিমপুর, দিঘীরপাড় এলাকায় নেতাকর্মীদের অত্যাচার করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে আমাদের নির্বাচন করতে অনুমোদন দিয়েছেন। নির্বাচনে আমার ঈগল মার্কা প্রতীকের পক্ষে যারা কাজ করেছে, সর্মথন দিয়েছে, প্রতিটি ইউনিয়নে নির্বাচনের রাত থেকে নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন শুরু হয়েছে। তাদের একটাই অপরাধ, তারা স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছে। এখন যে ঘটনা ঘটছে বিএনপির আমলেও এমন ঘটনা ঘটেনি।
বাজিতপুর পৌরসভার মেয়র আনোয়ার হোসেন আশরাফ বলেন, নির্বাচনের পরেরদিন আমি ঢাকায় চলে আসছি। আমার এমন কোনো বাহিনী নেই যে ওদেরকে মারবে। আমরা জয়ী হয়েছি। আমরা কেন মানুষের ওপর আক্রমণ করব। যদি কেউ ব্যক্তিগতভাবে হামলা করে থাকে তাহলে সেটা অন্য বিষয়। তারা আমাকে নিয়ে অযথা অভিযোগ দেয়। নির্বাচনের আগেও এমন ছিল, অভিযোগের শেষ নেই। এগুলো মিথ্যা কথা।
থানায় অভিযোগ দাখিলের বিষয়ে জানতে বাজিতপুর থানার ওসিকে একাধিকবার মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।