হোম জাতীয় বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে আন্দোলন করে জেল খেটেছিলেন উবায়দুল মোকতাদির

বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে আন্দোলন করে জেল খেটেছিলেন উবায়দুল মোকতাদির

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 157 ভিউজ

জাতীয় ডেস্ক:

নতুন মন্ত্রিসভায় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসন থেকে চতুর্থবারের মতো নির্বাচিত সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে শপথের পর তাকে এ দায়িত্ব দেয়া হয়।

র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী ১৯৫৫ সালের ১ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার মাছিহাতা ইউনিয়নের চিনাইর গ্রামে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মো. আবদুর রউফ চৌধুরী, মায়ের নাম মোসাম্মৎ হালিমা খাতুন চৌধুরী।

তিনি ঢাকা মাদরাসা-ই-আলীয়া থেকে ফাজিল পাস করার পর ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স ও মাস্টার্স করেন। ১৯৬৯ সালে ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদের ছাত্রদের প্রত্যক্ষ ভোটে প্রথম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

১৯৭০ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালের মুজিব বাহিনীর অধীনে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করলে পাকিস্তানি বাহিনীর গুলিতে তার একটি পা আঘাতপ্রাপ্ত হয়। ১৯৭৩-৭৪ সালে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং ১৯৭৫ সালে বাকশাল গঠন হলে ২১ সদস্যের জাতীয় ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মনোনীত হন।

১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হলে তিনি দেশব্যাপী গণতান্ত্রিক ছাত্র আন্দোলন ও প্রতিরোধ সংগ্রাম গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অবদান রাখেন। ১৯৭৫ সালের ২০ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিলের নেতৃত্বদান ও ৪ নভেম্বর ঢাকার রাজপথে প্রথম প্রতিবাদ মিছিলের অন্যতম সংগঠক হিসেবে ভূমিকা রাখেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৬ সালের অক্টোবরে গ্রেফতার হয়ে প্রায় ২ বছর কারাবরণ করেন এবং ১৯৭৮ সালের সেপ্টেম্বরে মাসে উচ্চ আদালতের নির্দেশে মুক্তি পান।

১৯৮৩ সালে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি প্রশাসন ক্যাডারে যোগদান করেন এবং ১৯৮৬ সালে জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনার একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৯৬ সালের একতরফা নির্বাচনের বিরুদ্ধে তিনি বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের অফিসারদের নিয়ে গঠিত জনতার মঞ্চের অন্যতম সংগঠক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত সচিবের দায়িত্ব পালন করেন।

পরবর্তীতে তিনি সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়ে রাজনীতিতে মনোনিবেশ করেন। ২০১০ সালের ২২ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট লুৎফুল হাই সাচ্চু মৃত্যুবরণ করলে এ আসনের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তিনি প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

পরে তিনি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দ্বিতীয়বার, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৃতীয় বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

মোকতাদির চৌধুরী এমপি নবম জাতীয় সংসদে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, দশম জাতীয় সংসদে পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং একাদশ জাতীয় সংসদে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

টানা তিনবার সংসদ সদস্য থাকার সুবাধে তিনি তার নির্বাচনী এলাকায় প্রায় সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকার ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করেন। বিশেষ করে নব-গঠিত বিজয়নগর উপজেলাকে তিনি ঢেলে সাজিয়েছেন। তিনি তার নির্বাচনী এলাকায় বেশ কিছু মেঘা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের টি.এ.রোডের মৌড়াইল রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণ করে শহরের গত কয়েক যুগের নিত্যদিনের যানজট দূর করেন।

বিজয়নগরের জনগণ যাতে সহজে জেলা সদরে আসা-যাওয়া করতে পারে, এজন্য তিনি হাওড়ের ওপর দিয়ে প্রায় ১০ কিলোমিটার রাস্তা (শেখ হাসিনা সড়ক) নির্মাণ করেন। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার মেড্ডা থেকে ভাদুঘর পর্যন্ত তিতাস নদীর পশ্চিমপাড়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেন। এছাড়াও শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সেক্টরে অভাবনীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করে ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে উন্নয়নের মহাসড়কে নিয়ে যান।

মোকতাদির চৌধুরী এমপি মাদক ব্যবসায়ী, ছিনতাইকারী, ভূমিদস্যু, টেন্ডারবাজসহ সমাজ বিরোধীদেরকে নিয়ন্ত্রণ করে জনগণের প্রশংসা কুড়িয়েছেন। এছাড়াও তিনি তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনকে সু-সংগঠিত করে গড়ে তোলেন।

সবশেষ গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বিশাল ভোটের ব্যবধানে টানা চতুর্থবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসনে (নৌকা প্রতীক) ১ লাখ ৫৮ হাজার ৮৭২ ভোট পেয়ে চতুর্থবারের মতো বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ফিরোজুর রহমান (কাঁচি প্রতিক) পান ৬৪ হাজার ৩৭ ভোট।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন