হোম জাতীয় ব্রিটেনে ভূমিমন্ত্রীর সম্পদের পাহাড়, দেশে তোলপাড়

ব্রিটেনে ভূমিমন্ত্রীর সম্পদের পাহাড়, দেশে তোলপাড়

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 111 ভিউজ

জাতীয় ডেস্ক:

সম্প্রতি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক ব্রিফিংয়ের পর জানা যায় এক মন্ত্রীর বিদেশে ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ ও ব্যবসা রয়েছে। তবে সংস্থাটি মন্ত্রীর নাম উল্লেখ করেনি।

পরবর্তীতে অনুসন্ধানে জানা যায় ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীই টিআইবির উল্লেখ করা ওই মন্ত্রী। ব্রিটেনে তার সম্পদের পাহাড় গড়ার তথ্য প্রকাশ্যে আসার পর দেশজুড়ে শুরু হয়েছে তোলপাড়। গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে খবর প্রকাশিত হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমগুলোতেও ভূমিমন্ত্রীর সম্পদ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।

ব্রিটেনে সাইফুজ্জামান নিজে পরিচালক এমন আটটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানির তথ্য পেয়েছে সময় সংবাদ।

টিআইবি ব্রিফিংয়ে জানিয়েছিল, এক মন্ত্রীর বিদেশে ছয় কোম্পানিতে বিনিয়োগ রয়েছে। এসব কোম্পানির সম্পদের মূল্য ১৬ কোটি ৬৪ লাখ পাউন্ড, বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ২ হাজার ৩১২ কোটি টাকা। এসব সম্পদের তথ্য তিনি নির্বাচনী হলফনামায় গোপন করেছেন।

ব্রিটেনে আসলে কত সম্পদ ভূমিমন্ত্রীর
অনুসন্ধানে জানা যায়, লন্ডনে মন্ত্রী জাবেদের কোম্পানি ছয়টি না; আটটি। কোম্পানিগুলোর সম্পদমূল্য ২০ কোটি ৩১ লাখ ব্রিটিশ পাউন্ড। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ২ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা। স্ত্রী রুখমিলা জামান এবং মেয়ে জেবা জামানের নামেও কোম্পানি রয়েছে। এ ছাড়া পারিবারিক মালিকানায় থাকা ব্যবসায়িক গ্রুপ আরামিটের নামেও রয়েছে একটি কোম্পানি।

এদিকে গণমাধ্যমে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, অনুমোদন ছাড়া বিদেশে বিনিয়োগ বেআইনি। নির্বাচনের পর তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন।

আর দুদকের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকে জানানো হয়েছে, বিষয়টি নিয়ে এখনই কোনো তদন্ত হবে কি না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি।

বাংলাদেশের আইন বলছে, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পূর্ব অনুমোদন ছাড়া বিদেশে বিনিয়োগ করতে পারেন না। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক মোট ২১টি প্রতিষ্ঠানকে বিদেশে বিনিয়োগের অনুমোদন দিয়েছে, সেই তালিকায় নেই সাইফুজ্জামান চৌধুরীর নাম।

এসব প্রতিষ্ঠানের অধীন যুক্তরাজ্যে অন্তত ২৬০টি সম্পত্তি রয়েছে ভূমিমন্ত্রীর। আওয়ামী লীগের তিনবারের এ সংসদ সদস্যের কোম্পানিগুলোর কাছে আরও অন্তত ৫৩৭টি সম্পদ মর্টগেজ রয়েছে। সম্পদগুলোর বেশিরভাগই লন্ডনে।

কোন কোম্পানির সম্পদমূল্য কত?
অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য বলছে, সাইফুজ্জামান চৌধুরী লন্ডনে নিউ ভেঞ্চার (লন্ডন) লিমিটেড নামে প্রথম কোম্পানি খোলেন ২০১০ সালে। সর্বশেষ ২০২১ সালে সাদাকাত প্রোপার্টিজ লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি খুলেছেন। কোম্পানিগুলোর সবই রিয়েল এস্টেট বা আবাসন খাতের। সব কোম্পানি ৮ ডেভোনশায়ার স্কয়ার, লন্ডনের একই ঠিকানায়।

১. যুক্তরাজ্য সরকারের ওয়েবসাইট বলছে, ২০১০ সালে খোলা নিউ ভেঞ্চার (লন্ডন) লিমিটেড নামে কোম্পানির মূল ব্যবসা বাড়িঘর কেনাবেচা। গত ২৩ জুন কোম্পানির পক্ষে দাখিল করা নথি অনুযায়ী, স্থায়ী ও চলতি সম্পদের মোট মূল্য ১ কোটি ১৭ লাখ পাউন্ড। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ১৬৪ কোটি টাকা।

২. জেডটিএস প্রোপার্টিজ নামে দ্বিতীয় কোম্পানিটি খোলা হয় ২০১৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি। চলতি বছরের ২৬ মে কোম্পানিটির ৩১ মার্চ, ২০২২ সমাপ্ত বছরের যে আর্থিক প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে, তাতে এর মোট স্থায়ী ও চলতি সম্পদ দেখানো হয়েছে ৭ কোটি ৩১ লাখ পাউন্ড, বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ১ হাজার ২৩ কোটি টাকা।

৩. ২০১৯ সালের ৬ জুলাই তার স্ত্রী রুখমিলা জামানের নামে খোলা হয় রুখমিলা প্রোপার্টিজ। রুখমিলা জামান বর্তমানে বেসরকারি ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) চেয়ারম্যান। গত ৩১ জুলাই ২০২২ সমাপ্ত হিসাব বছরের তথ্য অনুযায়ী, রুখমিলা প্রোপার্টিজের মোট স্থায়ী ও চলতি সম্পদ দেখানো হয়েছে ২ কোটি ৮০ লাখ পাউন্ড, বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৩৯১ কোটি টাকা।

৪. এছাড়া আরামিট প্রোপার্টিজ নামে চতুর্থ কোম্পানি খোলা হয় ২০২০ সালের ৬ মে। চলতি বছরের ৭ সেপ্টেম্বর এ কোম্পানির ৩১ মে ২০২২ সমাপ্ত হিসাব বছরের আর্থিক প্রতিবেদন সরকারি সংস্থায় জমা দেয়া হয়েছে। এ কোম্পানির মোট সম্পদ ২ কোটি ১৫ লাখ পাউন্ড। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা দাঁড়ায় ৩০১ কোটি টাকা।

৫. জেডটিজেড প্রোপার্টিজ নামের পঞ্চম কোম্পানিটি খোলা হয় ২০২০ সালের ৩০ জুলাই। চলতি বছরের ১২ সেপ্টেম্বর এ কোম্পানির ৩১ জুলাই ২০২২ সমাপ্ত হিসাব বছরের আর্থিক প্রতিবেদন সরকারি সংস্থায় জমা দেয়া হয়েছে। এতে কোম্পানির মোট সম্পদ ২ কোটি ৯৯ লাখ পাউন্ড দেখানো হয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ৪১৮ কোটি টাকা।

৬. মন্ত্রীর মেয়ে জেবা জামানের নামে জেবা প্রোপার্টিজ নামের একটি কোম্পানিও যুক্তরাজ্যে ব্যবসা করছে। ২০২১ সালের ২১ জুনে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিটি গত ৩০ জুন ২০২২ সমাপ্ত হিসাব বছরের আর্থিক প্রতিবেদন দাখিল করে। প্রতিবেদনে মোট সম্পদ ১ কোটি ২৯ লাখ পাউন্ড দেখানো হয়। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ১৮০ কোটি টাকা।

৭. জারিয়া প্রোপার্টিজ নামে আরেক কোম্পানির ৩০ জুন ২০২২ সমাপ্ত হিসাব বছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী সম্পদ ৬০ লাখ পাউন্ড, বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৮৪ কোটি টাকা।

৮. মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী লন্ডনে সর্বশেষ যে কোম্পানিটি খুলেছেন বলে তথ্য মিলেছে সেটি হলো সাদাকাত প্রোপার্টিজ লিমিটেড। কোম্পানিটি খোলা হয়েছে ২০২১ সালে। গত ৩১ জুলাই ২০২২ সমাপ্ত হিসাব বছরের আর্থিক প্রতিবেদনে সাদাকাতের সম্পদমূল্য দেখানো হয়েছে প্রায় ২ কোটি পাউন্ড। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ২৭৯ কোটি টাকা।

যা আছে হলফনামায়
চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসনে নৌকার প্রার্থী হিসেবে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। হলফনামা অনুযায়ী, ২০২২-২৩ আয়বর্ষ শেষে তার মোট সম্পদমূল্য ছিল ১৮ কোটি ৮৫ লাখ ৭৮ হাজার টাকা, যা আগের বছর ছিল ১৭ কোটি ২২ লাখ ৭০ হাজার টাকা।

হলফনামায় তিনি বলেছেন, তিনি গত বছর ৭৪ লাখ ১২ হাজার টাকা আয় করেছেন। হলফনামায় দেয়া তথ্য অনুযায়ী, তিনি ও তার স্ত্রী রুখমিলা জামানের নামে মোট ২৪ কোটি ১৮ লাখ টাকার অস্থাবর এবং ক্রয়মূল্যের হিসাবে ১২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। এর বাইরে অন্য কোনো সম্পদ নেই।

নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হলফনামায় তিনি যুক্তরাজ্যে তার আট কোম্পানির বিনিয়োগের কোনো তথ্য উল্লেখ করেননি। নির্বাচনী আইন ও বিধিবিধান অনুযায়ী, কোনো প্রার্থী নির্বাচনের হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দিলে বা সম্পদের তথ্য গোপন করলে, নির্বাচনের আগে এ বিষয়ে তথ্যপ্রমাণ মিললে তিনি প্রার্থী থাকার যোগ্যতা হারাবেন। নির্বাচিত হওয়ার পরও হলফনামায় সম্পদের তথ্য গোপন করলে সংসদ সদস্যপদ বাতিল হয়।

এসব বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য সাইফুজ্জামান চৌধুরীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

নির্বাচনের পর অ্যাকশনে যেতে পারে দুদক
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন দলের প্রার্থীদের দেয়া হলফনামা যাচাই-বাছাই করতে পারে দুদক। সোমবার (১ জানুয়ারি) দুদক কার্যালয়ে এমজিআই-র‍্যাক বেস্ট রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ড ২০২৩-এর পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ।

প্রার্থীদের অস্বাভাবিক সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আর মাত্র ৭ দিন বাকি। নির্বাচন শেষ হোক। নির্বাচন শেষে প্রার্থীদের সম্পদের হিসাবের সত্য-মিথ্যা যাচাই করার সুযোগ আছে আমাদের।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন