রাজনীতি ডেস্ক:
আচরণবিধি লঙ্ঘনের ব্যাপারে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির কাছে ব্যাখ্যা দিয়েছেন মাগুরা-১ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য প্রার্থী বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
নির্বাচনী এলাকা-৯১ ও মাগুরা-১ আসনের নির্বাচনী অনুসন্ধানী কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত বিচারক যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ সত্যব্রত শিকদারের আদালতে স্বশরীরে হাজির হয়ে তিনি ব্যাখ্যা দাখিল করেন।
ব্যাখ্যায় সাকিব আল হাসান বলেছেন, ‘আমি এই প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাগুরা-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছি। মনোনয়নপত্র দাখিলের জন্য আমি গত ২৯ নভেম্বর ঢাকা থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে মাগুরার উদ্দেশে রওনা হই। মাগুরার প্রবেশমুখে স্থানীয় উৎসুক এলাকাবাসী আমার অজান্তেই আমার গাড়ির পিছু নেয় এবং আমি সরাসরি মহাসড়ক ধরে মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে উপস্থিত হই এবং সেখান থেকে বের হয়ে মাগুরা বীর মুক্তিযোদ্ধা আছাদুজ্জামান স্টেডিয়ামের সামনে অবস্থিত স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে তার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করি।’
এতে আরও বলা হয়েছে, ‘আমি বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ও একজন ক্রিকেট খেলোয়াড়। যাতায়াত পথে উৎসুক জনতা আমার সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করে, যে কারণে জনগণের উপস্থিতির পরিমাণ বেশি হয়। যেহেতু আমি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথম বারের মতো প্রার্থী, নির্বাচন আচরণবিধি সম্পর্কে সবিস্তার জ্ঞাত না থাকার কারণে আপনার পত্রে উল্লেখিত আচরণবিধি লঙ্ঘনের যে কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেটি আমার ইচ্ছাকৃত ত্রুটি নয়। অনিচ্ছকৃতভাবে আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়ে থাকলে তার জন্য আমি অনুতপ্ত। ভবিষ্যতে নির্বাচনী আচরণবিধি সঠিকভাবে পালন করব।’
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) নির্বাচনী এলাকা-৯১ ও মাগুরা-১ আসনের নির্বাচনী অনুসদ্ধানী কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত বিচারক যুগ্ন জেলা ও দায়রা জজ সত্যব্রত শিকদার আচরণ বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে সাকিব আল হাসানকে তলব আদেশ দেন। তাকে শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) অনসুন্ধান কমিটির কাছে স্ব-শরীরে হাজির হয়ে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের কারণে কেন আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তার ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
তলব আদেশে বলা হয়, ‘আপনি জনাব সাকিব আল হাসান, মাগুরা-১ আসন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত এমপি পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণার পর গত ২৯/১১/২৩ ইং তারিখ বুধবার ঢাকা থেকে মাগুরা আগমনের সময় পথিমধ্যে কামারখালী এলাকা থেকে শোডাউন করে গাড়িবহর নিয়ে মাগুরা শহরে প্রবেশ করেন এবং নাগরিক গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। তাতে জনগণের চলাচলের পথে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেন। যা বিভিন্ন পত্রপত্রিকা, ইলেকট্রনিক মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এর মাধ্যমে আপনি সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা ২০০৮ এর ৬ (ঘ), ৮ (ক), ১০ (ক) এবং ১২ ধারার বিধান লঙ্ঘন করেছেন।’
তলবকৃত চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘উক্ত আইন ভঙ্গের কারণে কেন আপনার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তদমর্মে নিম্ন স্বাক্ষরকারী (সত্যব্রত শিকদার, নির্বাচনী অনুসদ্ধান কমিটি, নির্বাচনী এলাকা-৯১, মাগুরা-১ এবং জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালত, মাগুরা) দপ্তরে আগামী ১/১২/২০২৩ ইং তারিখ শুক্রবার বিকেল ৩টায় স্ব-শরীরে উপস্থিত হয়ে লিখিত ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো।
এর আগে বুধবার প্রথমবার নির্বাচনী এলাকায় যান সাকিব। মাগুরায় পৌঁছে একাধিকবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘন করেন বলে অভিযোগ ওঠে। তবে দুপুরে জেলার দলীয় কার্যালয়ে সবাইকে নির্বাচন আচরণবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান তিনি নিজে।
দলের নেতাকর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, বুধবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে বীর মুক্তিযোদ্ধা আছাদুজ্জামান স্টেডিয়ামে মাগুরাবাসীর ব্যানারে আয়োজিত এক নাগরিক গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন সাকিব। সেখানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে নিজের জন্য এবং আওয়ামী লীগের জন্য ভোট চান তিনি।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আচরণবিধিমালায় বলা হয়েছে, কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল কিংবা এর মনোনীত প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা তাদের পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি ভোট গ্রহণের জন্য নির্ধারিত দিনের তিন সপ্তাহ সময়ের আগে কোনো প্রকার নির্বাচনী প্রচার শুরু করতে পারবেন না। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে ৭ জানুয়ারি। সে হিসাবে ১৫ ডিসেম্বরের আগে কেউই নির্বাচনী প্রচার চালাতে পারবেন না।