জাতীয় ডেস্ক:
এবারও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
‘গণতন্ত্র, সুশাসন ও শুদ্ধাচার চর্চার রাজনৈতিক অঙ্গীকার : টিআইবির সুপারিশমালা’ তুলে ধরতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। টিআইবির গবেষক কাওসার আহমেদ সুপারিশমালা তুলে ধরেন। এতে ৯টি বিষয়ের ওপর ৭৬টি সুপারিশ করা হয়।
এ সময় ইফতেখারুজ্জামা বলেন, ‘সত্যিকার অর্থে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বলতে যা বোঝায়, তা এবারও হচ্ছে না; এটি উদ্বেগের। সে ক্ষেত্রে নির্বাচন হবে; ক্ষমতায় কারা থাকবে- সেটাও নির্ধারণ হবে। কিন্তু জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা পাবে না। জনগণের আস্থা নিশ্চিত করাও অসম্ভব হবে।’
তিনি বলেন, ‘আসনভিত্তিক সংসদীয় গণতন্ত্রের চর্চা হয়েছে। এখন সময় এসেছে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক সংসদ প্রতিষ্ঠা করার। এটি নিয়ে আলোচনা হওয়া প্রয়োজন। এর জন্য প্রয়োজন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন। এর জন্য অনেকগুলো উপাদান আছে। তার মধ্যে অন্যতম, নির্বাচনকালীন সরকারে দলীয় প্রভাবমুক্ত ও স্বার্থের প্রভাবমুক্ত ভূমিকা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন দরকার। সংসদে প্রান্তিক মানুষের প্রতিনিধি নিশ্চিত করতে হবে। গণতন্ত্র, সুশাসন, শুদ্ধাচারের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হচ্ছে রাজনৈতিক দল। এখানে তারা কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে, তাদের হাতে ক্ষমতা। এখানেও সংস্কারের প্রয়োজন আছে।’
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দলে মনোনয়নের ক্ষেত্রে দলের প্রতি আনুগত্যকে প্রাধান্য দিতে হবে। চট করে কেউ এলো, অর্থকড়ি, পেশিশক্তি আছে বা অন্য পরিচয়ের কারণে মনোনয়ন দিয়ে দেওয়া হলো। এতে যারা সত্যিকারের মূল ধারার রাজনীতির ধারকবাহক, তারা কিন্তু নিজেদের বিলুপ্তপ্রায় ভাবতে থাকে। দলগুলোকে এ অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে।’
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, নির্বাচন কমিশন, দুনীতি দমন কমিশন, মানবাধিকার কমিশনসহ রাষ্ট্রীয় যেসব প্রতিষ্ঠান আছে, তাদের সাময়িক রাজনৈতিক সুবিধার হাতিয়ার হিসেবে যেভাবে দলীয়করণ করা হয়েছে, তাতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা খাদের কিনারে পৌঁছেছে। এই সংস্কৃতি থেকে বের হতে হবে। যখন কোনো দল ক্ষমতায় যায়, তখন সেই সরকারের প্রধান যদি স্বপ্রণোদিতভাবে দলীয় প্রধানের পদ ত্যাগ করেন, তাহলে তিনি সবার সরকার হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করতে পারেন। স্পিকারের ক্ষেত্রেও একই বিষয় প্রযোজ্য। এই ভূমিকা নিশ্চিত করতে পারলে স্বার্থের দ্বন্দ্বমুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়।’
ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, সাইবার নিরাপত্তা আইন, ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা আইন সবার মতামত বিবেচনায় নিয়ে সংস্কার করতে হবে। এ ছাড়া গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, বাকস্বাধীনতা নিশ্চিতে আইনগুলোয় প্রয়োজনীয় সংস্কারের কথাও বলেন তিনি।