হোম অন্যান্যস্বাস্থ্য ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই চলছে কলাপাড়ায় ৭ ইউনিয়নের স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর চিকিৎসাসেবা

স্বাস্থ্য ডেস্ক:

গ্রামের সাধারণ মানুষের আস্থা ও ভরসার জায়গা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র। সাধারণত অন্তঃসত্ত্বা মা ও শিশু সুরক্ষায় এখন অনবদ্য ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। সহজে ও হাতের নাগালে চিকিৎসাসেবা মিলে বিধায় এটি দিনে দিনে আস্থা কুড়িয়েছে সবার। কিন্তু জনবল সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যায় গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবার মান খুবই নাজুক হয়ে পড়েছে। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রগুলোতে জনবল ও চিকিৎসক না থাকায় রোগীরা পাচ্ছেন না কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসাসেবা। ফলে গ্রাম্য চিকিৎসক বা ওষুধের দোকানদাররাই রোগীদের ভরসা। রোগীদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাদের ছুটতে হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এদিকে তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয় করলেও বাস্তবে এর প্রতিফলন নেই বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যায়ে রয়েছে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র। সরকারিভাবে এসব স্বাস্থ্য কেন্দ্রে বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ ও প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য জনবলের সৃষ্ট পদ রয়েছে। কিন্তু জনবল সংকটে গ্রামের সরকারি এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত হচ্ছে। সৃজনকৃত পদ আছে কিন্তু জনবল নেই।

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় ৭ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র মধ্যে ৫টির ভবন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। চাকামইয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র, লালুয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, মিঠাগঞ্জ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র, নীলগঞ্জ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র, লতাচাপলী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রের ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

এসব ভবনেই আতঙ্ক নিয়ে সেবা দিচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। ভবন ধসের আশঙ্কায় থাকেন রোগীরাও। পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় সূত্র জানা গেছে, উপজেলা ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ৭টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র আছে। পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়গুলো ৬ কক্ষ বিশিষ্ট। বসবাসের কোয়ার্টার অবস্থা ভালো নেই।

পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় গুলো ১৯৮৭ সালে ৪৫ শতাংশ জমির ওপর স্থাপিত হয়। উপজেলাবাসীর ভরসা ৭টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র। কিন্তু পদ থাকলেও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে অনেক চিকিৎসক নেই। ৭টি কেন্দ্রের মেইন ১৪ পদের ৯টিই শূন্য। এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রতিতে সৃষ্ট জনবলের পদ রয়েছে পাঁচটি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র জনবলের ঘাটতি রয়েছে। অন্যান্য স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে এনে সপ্তাহে পালন করে চালু রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে গর্ভবর্তী মায়েদের দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। গর্ভধারণ থেকে শুরু করে সন্তান জন্মদানের পুরো সময়টাতেই চিকিৎসা নিতে গিয়ে বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে তাদের। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রে মাতৃস্বাস্থ্য, শিশু স্বাস্থ্য, প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা, পিল, কনডম, ইমপ্লাসন, আইউডি এবং গর্ভকালীন ও প্রসব পরবর্তী অন্যান্য সেবা দেওয়া হয়। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়ে অন্তঃসত্ত্বা মায়েরা। কেন্দ্রগুলোতে ২৪ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন প্রসবকালীন সেবা প্রদান করার কথা। কিন্তু জনবল সংকটের কারণে কেন্দ্রগুলো ২৪ ঘণ্টা সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিদিন এলাকার রোগীদেরও নিরুপায় হয়ে যেতে হচ্ছে শহর কিংবা অন্য কোনো প্রাইভেট ক্লিনিকে।

ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, কলাপাড়ায় ৭টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র বিভিন্ন রোগের প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। এসব ক্লিনিকের মধ্যে চাকামইয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র, লালুয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র, মিঠাগঞ্জ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র, নীলগঞ্জ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র, ধানখালী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র, ধুলাসার ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র, লতাচাপলী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। জরাজীর্ণ এসব ক্লিনিক ৩৬ বছর আগে নির্মিত হয়। এরপর আর সংস্কার না করায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে।

সরেজমিন নীলগঞ্জ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রে দেখা গেছে, ভবনগুলোর ছাদ ও চারপাশের দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। পলেস্তারা খসে পড়ছে। দরজা-জানলা ভাঙা। কোনো কোনো ভবনের মেঝে দেবে গেছে। বৃষ্টি পানি ছাদ চুইয়ে শ্যাওলা পড়েছে। বর্ষাকালে দেয়াল ও ছাদ চুইয়ে বৃষ্টির পানি পড়ে। পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থাও নেই। যে কোনো সময় পুরো ভবনটি ধসে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। এভাবে একই অবস্থা মিঠাগঞ্জ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র। চিকিৎসাসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর জন্য সরকার ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্য কেন্দ্র স্থাপন করে। এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্বাস্থ্য বিভাগ ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। তবে ইউনিয়ন সংখ্যা অনুসারে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ঘাটতি রয়েছে। কেননা সব ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র নেই। আর যেগুলো রয়েছে তাতেও নানা সংকটে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী আশানুরূপ সেবা পাচ্ছেন না। জনবলের ঘাটতি সেবা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

নীলগঞ্জ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা ডা. মোসা. আয়শা আক্তার বলেন, গড়ে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৪৫ জন রোগী ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। নানা সমস্যার মধ্যে তাদের সেবা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে বড় সমস্যা ঝুঁকিপূর্ণ ভবন। কয়েক দিনের বৃষ্টিতে ভবন আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ছাদ থেকে বড় বড় পলেস্তারা খসে পড়ছে। কর্তৃপক্ষ এসব মেরামতের উদ্যোগ নিচ্ছে না।

লালুয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা ডা. ছগির হোসেন বলেন, প্রতিদিনই ভয়ে ভয়ে থাকি, কখন মাথায় পলেস্তারা খসে পড়ে। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় জরাজীর্ন ভবনে বসে অন্তঃস্বত্ত্বা মা ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা দিতে হচ্ছে।

উপজেলা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা ডা. মেহেদী হাসান রনি জানান, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা করে বেশ কয়েকবার হেলথ ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।

ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রগুলোতে জনবল কম থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জনবল কম থাকার বিষয়টি জানিয়েছি। আশা করছি দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন