হোম জাতীয় চুয়াডাঙ্গার ১৬৩ বছরের ঐতিহ্যবাহী রেলস্টেশনটি এখন ধ্বংসস্তূপ

জাতীয় ডেস্ক:

ভেঙে ফেলার কারণে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে চুয়াডাঙ্গার রেল স্টেশন। অচেনা অজানা পরিবেশে রূপ নিয়েছে স্টেশন এলাকা। ট্রেন আসা যাওয়ার কারণে হুইসেলের শব্দে সহজে বোঝা যাচ্ছে এটি চুয়াডাঙ্গা রেল স্টেশন। এছাড়া দূর থেকে দেখলে চেনার উপায় নেই।

নতুন রেল স্টেশন নির্মাণের কারণে ১৬৩ বছরের পুরাতন স্টেশনটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। সংরক্ষণ সম্ভব না হওয়ায় বাধ্য হয়েই ভেঙে ফেলা ঐতিহ্যবাহী স্টেশনটি এখন ইতিহাস। ভারতের কোলকাতা থেকে চুয়াডাঙ্গা হয়ে জগতি পর্যন্ত সর্ব প্রথম রেলপথ নির্মাণ করা হয়। সে সময় স্টেশনগুলোও নির্মাণ করা হয়। রেলপথ ও স্টেশন নির্মাণের দুবছর পর চালু হয় ট্রেন।

বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় নির্মাণ করা হচ্ছে আধুনিক মানের রেল স্টেশন। যাত্রী সেবার মান বাড়বে কয়েক গুণ। ১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর কোলকাতা থেকে চুয়াডাঙ্গা হয়ে প্রথম কুষ্টিয়ার জগতি পর্যন্ত ট্রেন চলাচল শুরু করে।

১৮৬০ সালে ভারতের কলকাতা থেকে চুয়াডাঙ্গা হয়ে পোড়াদহ পর্যন্ত প্রথম রেলপথ নির্মাণ করা হয়। সেসময় নির্মাণ করা হয় স্টেশনগুলো। এরপর ১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর কোলকাতা থেকে চুয়াডাঙ্গা হয়ে প্রথম কুষ্টিয়া পর্যন্ত ট্রেন চলাচল শুরু করে। যোগাযোগের সহজ মাধ্যম ছিল ট্রেন। ব্রিটিশ আমলে ইংরেজরা স্টেশন ভবনগুলো তাদের কাজে ব্যবহার করতেন।

১৬৩ বছরের পুরাতন এ রেলওয়ে স্টেশনটি জরাজীর্ণ ও ভগ্নপ্রায় অবস্থায় ছিল। পুরাতন এ ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সরকার নতুন করে রেল স্টেশন নির্মাণের অনুমোদন দেয়। নতুন স্টেশন নির্মাণ কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের উদ্বোধন হয়েছে ২০২৩ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর। তার পর থেকে ভেঙে ফেলা হয়েছে ঐতিহ্যবাহী রেল স্টেশনটি। স্টেশন ভবনটি চুন, সুড়কি, টালি ও ছোট ইট দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছিল। নির্মাণ শৈলী সব বয়সের মানুষকে মুগ্ধ করতো।

দোতলা বিশিষ্ট আধুনিক রেল স্টেশন নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। রেল স্টেশন ভবন, কার পার্কিং, প্লাটফর্ম ও শেড নির্মাণ করা হবে। ১০ কোটি ১৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা ব্যয়ে এ আধুনিক রেল স্টেশন নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে। এ রেলপথ দিয়ে খুলনা, ঢাকা, ফরিদপুর রাজশাহী ও পার্বতীপুরে মেইল এবং আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত ১৬৩ বছরের পুরাতন ঐতিহ্যবাহী রেল স্টেশনটি ভেঙে ফেলায় পুরাতন একটি নিদর্শন বিলুপ্ত হল।

মেহেরপুর মুজিবনগর উপজেলার মাহাজনপুর গ্রামের বাসিন্দা কামাল হোসেন বলেন, ৫ দিন আগে বেনাপোল ট্রেনে করে ঢাকায় যাওয়ার জন্য চুয়াডাঙ্গা স্টেশনে আসি। দেখতে পাই আগের ভবন ভেঙে ফেলা হয়েছে। মঙ্গলবার ঢাকা থেকে সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে করে চুয়াডাঙ্গায় ফিরে আসি। দেখি আগের ভবনের অবশিষ্ট অংশটুকুও ভেঙে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। এ স্থানটি দেখে মনে হচ্ছে অচেনা জায়গা।

চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার হাসপাতাল পাড়ার আব্দুস সামাদ বলেন, পুরনো একটি রেল স্টেশন। দীর্ঘ দিন ভবনগুলো ব্যবহার হয়েছে। এখন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সরকার নতুন স্টেশন নির্মাণ করছে। এটি সবার ভালো লাগার জায়গা। দৃষ্টিনন্দন স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে। নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হযরত আলী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে দেশে উন্নয়ন হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় চুয়াডাঙ্গায় নতুন রেল স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে। ট্রেনে চলাচলকারীরা অনেক সুবিধা পাবেন। আগের স্টেশন ভবনটি ভেঙে ফেলা হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গার স্টেশন মাস্টার মিজানুর রহমান বলেন, ১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর ভারতের কলকাতা থেকে চুয়াডাঙ্গা হয়ে কুষ্টিয়ার জগতি পর্যন্ত সর্ব প্রথম ট্রেন চলাচল শুরু করে। ব্রিটিশ আমলে রেল স্টেশনটি নির্মাণ করা হয়। সেই থেকে রেলপথে ট্রেন চলাচল করছে। সুনামের সাথে স্টেশনে কার্যক্রম চলছে। সাধারণ যাত্রী নিয়মিত ট্রেনে এ পথে চলাচল করেন। নতুন স্টেশন ভবন নির্মাণ করার কারণে ১৬৩ বছরের স্টেশনটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। সংরক্ষণ করার মত কোনো সুযোগ নেই। জেলার ঐতিহ্য বহন করত। আধুনিক স্টেশন নির্মাণ শেষ হলে যাত্রীদের সুযোগ সুবিধা বাড়বে কয়েক গুণ। সরকার রেলখাতে ব্যাপক উন্নয়ন করছে। আন্তঃনগর ও মেইল ট্রেন নিয়মিত চলাচল করছে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন