আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার কেপ ওকল্যান্ড বন্দরে একটি ইসরাইলগামী সামরিক রসদ সরবরাহকারী জাহাজ কয়েক ঘণ্টার জন্য আটকে দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। যদিও তারা শেষ পর্যন্ত জাহাজটি আটকে রাখতে পারেনি। তবে এ ঘটনা সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে মনে করছেন বিক্ষোভকারীরা।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় প্রায় এক মাস ধরে বর্বর বিমান হামলা ও ফিলিস্তিনি নিধনযজ্ঞ চালাচ্ছে ইসরাইল। অস্ত্র ও গোলাবারুদ দিয়ে এই হত্যাযজ্ঞে সহযোগিতা করছে যুক্তরাষ্ট্র।
অবিলম্বে এই হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা ও ইসরাইলকে মার্কিন সামরিক সহায়তা বন্ধের দাবিতে শুক্রবার (৩ নভেম্বর) সকালে ক্যালিফোর্নিয়ার ওই বন্দরে বিক্ষোভের আয়োজন করে আরব রিসোর্স অ্যান্ড অর্গানাইজিং সেন্টার (এআরওসি) নামে একটি সংগঠন। এদিন সংগঠনটির অন্তত এক হাজার সদস্য এই বিক্ষোভে অংশ নেন।
বিক্ষোভ-প্রতিবাদের অংশ হিসেবে এদিন কেপ ওকল্যান্ড বন্দরের বার্থ ২০ পোতাশ্রয়ের প্রবেশপথ বন্ধ করে দেয় বিক্ষোভকারীরা। এই পোতাশ্রয়েই নোঙ্গর করা ছিল ইসরাইলগামী মার্কিন সামরিক রসদ সরবরাহকারী জাহাজটি।
বিক্ষোভকারীরা জানান, তারা খবর পান, জাহাজটির শুক্রবার সকালে কেপ ওকল্যান্ড বন্দর থেকে রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির উদ্দেশে যাত্রা করবে। এরপর সেখান থেকে অস্ত্র ও সামরিক রসদ বোঝাই করার পর ইসরাইলের উদ্দেশে রওয়ানা হবে।
কিন্তু জাহাজ ছাড়ার আগেই কেপ ওকল্যান্ড বন্দরে অবস্থান নেয় বিক্ষোভকারীরা। এদিকে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কেপ ওকল্যান্ড বন্দরে প্রায় ২০০ পুলিশ মোতায়েন করা হয়। কিন্তু পুলিশের বাধা উপেক্ষা করেই বিক্ষোভকারীদের অনেকেই জাহাজের ওপর উঠে পড়ে এবং এটাকে আটকে দেয়।
কেপ ওকল্যান্ড বন্দরের এক মুখপাত্র জানান, বিক্ষোভ শুরু হয় সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে। তবে বিক্ষোভকারীরা একটি জাহাজ ছাড়া আর কোনো জাহাজকে বাধা দেয়নি। জাহাজ আটকে দেয়ার একটি ভিডিও আল জাজিরাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
তাতে দেখা যাচ্ছে, কয়েকজন বিক্ষোভকারী জাহাজের গায়ে থাকা একটি দড়ির মই ধরে ঝুলে আছে। এদিকে জাহাজ শ্রমিকরা সামরিক জাহাজটির দরজা বন্ধ করার চেষ্টা করছে। মার্কিন কোস্ট গার্ডের একজন কর্মকর্তা বিক্ষোভতারী জাহাজ থেকে নামার জন্য বোঝানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা তার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করছে।
জাহাজ আটকানোর বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেয়া অন্যতম হলেন মীনা আবু শামালা। গাজায় ইসরাইলের বিমান হামলায় বেশ কয়েকজন আত্মীয়-স্বজন হারিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘এটি একটি মার্কিন সামরিক জাহাজ। এটা এখন ওয়াশিংটনের টাকোমা যাবে। এরপর সেখান থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে ইসরাইলে যাবে।’
আবু শামালা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া এই অস্ত্র ব্যবহার করে ফিলিস্তিনিদের হত্যা করছে ইসরাইল। তিনি জানান, ইসরাইলের ছোঁড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্র এরই মধ্যে তার এক চাচা, তার দুই চাচাত ভাইকে হত্যা করেছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ তিনি বলেন, ‘আমি ক্ষুব্ধ যে আমাদের সরকার এখনও ইসরাইলকে সামরিক রসদ ও ক্ষেপণাস্ত্র পাঠাচ্ছে।’
আরেক ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারী নোরা খুরি জানান, তিনিও গত সপ্তাহে ইসরাইলের বোমা হামলায় এক আত্মীয়কে হারিয়েছেন। তার ভাষ্য, ‘এখন আমাদের কারো কারো জন্য ঘুমানো, খাওয়া, কাজ করা অর্থাৎ এক কথায় জীবন চালিয়ে যাওয়া আক্ষরিক অর্থেই অসম্ভব হয়ে পড়েছে।’
এদিন অনেক ইহুদিও এই বিক্ষোভে অংশ নেন। তাদের একজন হলেন আন্না বালতজার। তিনি বলছিলেন, ‘আমি এই বিক্ষোভে অংশ নিয়েছি একজন ইহুদি হিসেবে। আমি জার্মানির হলোকাস্টে বেঁচে যাওয়া একজনের নাতনি। আমার দাদি কিভাবে নাৎসিদের হাত থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন, দাদির থেকে সেই গল্প শুনে শুনে বড় হয়েছি। আজ ইসরাইল গাজার ফিলিস্তিনি পরিবারগুলোকে হত্যা করার জন্য আমার সেই ইতিহাস, আমার পরিবারের ইতিহাসকে হাতিয়ার করছে।’
সিবিএস নিউজের প্রতিবেদন মতে, সকালে শুরু হয়ে বিকাল ৩টা পর্যন্ত চলে এই বিক্ষোভ। অর্থাৎ বিক্ষোভকারীরা প্রায় ৮ ঘণ্টা রসদ সরবরাহকারী জাহাজটি আটকে রাখে। বিকাল ৩টার দিকে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করে বিক্ষোভকারীদের জাহাজ ও বন্দর থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। এরপরই জাহাজটি কেপ ওকল্যান্ড বন্দর ছাড়ে।
মার্কিন কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তে আবু শামালা ও অন্যান্য বিক্ষোভকারীরা হতাশ হলেও তারা বলছেন, তাদের এই প্রতিবাদ মার্কিন আইনপ্রণেতাদের ওপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলবে। আবু শামালা বলেন, ইসরাইলকে আর মার্কিন সামরিক সহায়তা নয়। আমরা এক্ষেত্রে সরকারকে বাধ্য করতে পারি। কোনো ভয়-ভীতিই আমাদের থামাতে পারবে না।’