হোম খুলনাঝিনাইদহ ঝিনাইদহ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী : আসন উদ্ধারে মরিয়া বিএনপি

ঝিনাইদহ অফিস :

ঝিনাইদহ সদরের একাংশ ও কালীগঞ্জ উপজেলা নিয়ে ঝিনাইদহ-৪ আসন গঠিত । নির্বাচন সামনে রেখে এ আসনে আওয়ামীলীগ ও বিএনপি রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়াচ্ছে ।২ লাখ ৮১ হাজার ৬২১ জন ভোটারের এ আসনে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৪১ হাজার ৭৭৫ জন ও নারী ভোটার ১ লাখ ৩৯ হাজার ৮৪৬ জন।এক সময়ের বিএনপি দূর্গ খ্যাত আসনটি ২০১৮ সালের পর চরম অরিক্ষত হয়ে পড়ে ,যখন সাবেক ছাত্রনেতা ও উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হামিদুল ইসলাম হামিদকে বাদ রেখে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজকে দলীয় প্রার্থী মনোনিত করে।

২০১৮ সালের নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর কাছে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজয় মেনে নিয়ে শহরের থানাপাড়ায় সাবেক পৌর মেয়র মাহবুবার রহমান বাড়ীতে আলাদা অফিস খুলে প্রকাশ্য গ্রুপিং শুরু করেন সাইফুল ইসলাম ফিরোজ ।অভিযোগ আছে ২০১৮ সালের নির্বাচনে সাইফুল ইসলাম ফিরোজ বিএনপি দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পরই কেন্দ্রীয় নির্দেশ অমান্য করে দলটির বড় অংশের নেতা হামিদ সমর্থিতদের বাদ রেখে নির্বাচনে অংশ নেয়।পরের বছর ২০১৯ সালে মাহবুবর রহমানকে আহ্বায়ক ও হামিদুল ইসলামকে হামিদকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে কমিটি দেয় জেলা ও কেন্দ্র। এ কমিটিতে সাইফুল ইসলাম ফিরোজ সমর্থীতদের যুগ্ম আহ্বায়ক কম রাখায় কেন্দ্রে অভিযোগের মাধ্যমে নতুন তিনজনকে যুগ্মআহ্বায়ক করে আনে ফিরোজ ।

পরে দলীয় প্যাডে ২০২০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারী নতুন তিন জনকে অর্ন্তভূক্ত করে কমিটি ঘোষনা করে বিএনপির যুগ্মমহাসচিব এ্যাডঃ রুহুল কবির রিজভী আহমেদ।কমিটির এক বছর পর সাইফুল ইসলাম ফিরোজ সমর্থীত নতুন যুগ্ম আহ্বায়ক ডাঃ নুরুল ইসলাম ইউপি নির্বাচনে নিজ ইউনিয়নে (২০২১ সালের ইউপি নির্বাচন) নৌকার পক্ষে ভোট চাওয়া শুরু করেন।সে সময় ডাঃ নুরুলের নৌকায় ভোট পাওয়া ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমলোচনার সৃষ্টি হয় ।খোজ নিয়ে জানাগেছে কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপি ,যুবদল ও ছাত্রদলের সর্বচ্চ পর্যায় সাইফুল ইসলাম ফিরোজের ঘনিষ্ট আত্মীয় দ্বারা বেষ্টিত কমিটিতে রাখা হয়েছেন ,যা নিয়ে ত্যাগী নেতা-কর্মীদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে ।তাছাড়া অধিকাংশ সময় ঢাকায় অবস্থানের কারনে এ উপজেলার তৃণমূল নেতাকর্মীরা সব সময় তাকে কাছে পায় না ।

দলীয় গ্রুপিং ও মনোনয়নের ব্যাপারে কথা বলার জন্য একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করে সাইফুল ইসলাম ফিরোজের সাথে যোগাযোগ করা যায়নি ।

যুবদল নেতা মিলন বলেন, এ সময়ে কালীগঞ্জের রাজনীতিতে দলের দুঃসময়ের ত্যাগী নেতা হামিদুল ইসলাম হামিদকে সর্বচ্চ মূল্যায়ন না করলে দলটি অচিরেই আরো ভাঙনের মুখে পড়তে পারে ।

দলীও গ্রুপিং ও মনোনয়ন নিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক হামিদুল ইসলাম হামিদ বলেন, বিএনপি একটি বৃহৎ গনতান্ত্রিক দল।এখানে নেত্বৃতের প্রতিযোগীতা থাকবেই । দলের দুঃসময়ে বহু মামলা নিয়ে আমি নেতাকর্মীর পাশে ছিলাম আছি এবং থাকবো ।আমরা এখন নির্বাচন নিয়ে ভাবছি না ।আমরা এই ফ্যাসিষ্ট সরকারের পদত্যাগ নিয়ে ভাবছি ।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে হামিদ বলেন ,আমার নেতা তারেক রহমান চাইলে আমি ঝিনাইদহ-৪ আসনে মনোনয়নের ব্যাপারে এবার সর্বচ্চ আশাবাদী । এছাড়া বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য চারবার সাবেক এমপি শহীদুজ্জামান বেল্টু গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি আবারও মনোনয়ন চাইবেন।

অপরদিকে এ আসনটিতে আওয়ামীলীগ মনোনিত বর্তমান সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার পর পর দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এ উপজেলায় চলতি বছরের জুন মাসে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ ১০ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষনা করে যেখানে প্রায়ত সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান সমর্থিত আইয়ুব হোসেন খানকে এ উপজেলা আওয়ামীলীগের কমিটিতে সাধারন সম্পাদক করা হয় ।এরপরই কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগ প্রকাশ্যে গ্রুপিংয়ে জড়িয়ে পড়ে । চলতে থাকে পাল্টা পাল্টি কর্মসুচি পালন ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একাধিক প্রার্থী এবার উপজেলাটিতে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশি ।বর্তমান সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আইয়ুব হোসেন খান ,সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামীলীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বিজু, প্রয়াত সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নানের স্ত্রী উপজেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি শামীম আরা মান্নান ,আওয়ামীলীগ নেতা ইঞ্জিনিয়ার আনোয়ার পারভেজ সাগর ও আওয়ামীলীগ নেতা তোফাজ্জেল হোসেন বাবু , যুবলীগ নেতা রুপক, আমেরিকা প্রবাসী অনু ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন চাইবে ।

মনোয়ন পাওয়া ও দলটির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বর্তমান সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার জানান, নেত্রীর সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত ।আমি বিগত সময় দলীয় নেতাকর্মীদের পাশে ছিলাম আছি এবং থাকবো ।আমি মনোনয়নের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী । আমি আমার নির্বাচনী এলাকায় অনেক উন্নয়ন করেছি ।

সাবেক মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান বিজু জানান ,বড় দলে গ্রুপিং থাকবেই ।তবে দিনশেষে দেশরত্ন শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত ।নেত্রী চাইলে আমি মনোনয়ন পাবো এটা বিশ্বাস করি ।

তবে এলাকার সাধারন ভোটাররা জানান, কর্মীবান্ধব বর্তমান সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার এ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেলে আসনটিতে নৌকা ও ধানেরশীষের ব্যাপক লড়াই হবে ।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন