আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধে অবশেষে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সংঘাতের ১২ দিন পর বুধবার (১৮ অক্টোবর) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক ব্যক্তিগত পোস্টে ‘অবিলম্বে মানবিক যুদ্ধবিরতির’র আহ্বান জানান তিনি।
এক এক্স (সাবেক টুইটার) বার্তায় গুতেরেস বলেন, মানুষের চরম দুর্ভোগ লাঘব করতে আমি অবিলম্বে মানবিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাচ্ছি। বহু মানুষের জীবন এবং পুরো অঞ্চলের ভাগ্য ঝুলে আছে।’
গত ৭ অক্টোবরে শুরু হওয়া ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধের ভয়াবহতা বেড়েই চলেছে। মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) গাজার একটি হাসপাতালে ইসরাইলের বিমান হামলায় শিশু ও নারীসহ পাঁচ শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। যার মধ্যদিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সাড়ে তিন হাজারে।
এদিকে বুধবার (১৮ অক্টোবর) ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাত ইস্যুতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষেদে ব্রাজিলের উত্থাপন করা একটি প্রস্তাবে ভোটাভুটি হওয়ার কথা রয়েছে। খসড়া প্রস্তাবে গাজা উপত্যকায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দেয়ার জন্য ইসরাইল ও হামাসের মধ্যকার সংঘাতে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হয়েছে।
গত সোমবার (১৬ অক্টোবর) প্রস্তাবটির ব্যাপারে ভোটাভুটি হওয়ার কথা ছিল। তবে আরও আলোচনার জন্য তা ২৪ ঘন্টার জন্য পিছিয়ে দেয়া হয়। জো বাইডেনের ইসরাইল সফরের কারণে ভোটাভুটি পিছিয়ে দেয়ার ব্যাপারে চাপ ছিল যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের গভীর উদ্বেগ উপেক্ষা করেই ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় বিরামহীন বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। হামলায় প্রতি মুহূর্তে প্রাণ হারাচ্ছে গাজাবাসী।
বেসরকারি দাতব্য সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন বলছে, ইসরাইলের বিমান হামলায় গাজা উপত্যকায় প্রতি ১৫ মিনিটে ১টি শিশুর মৃত্যু হচ্ছে। উপত্যকায় এই মানবিক সংকটের কথা বিবেচনা করে অবিলম্বে হামলা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
গত ১২ দিন ধরে গাজা উপত্যকায় বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। আবাসিক ভবন থেকে শুরু করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও অ্যাম্বুলেন্স কোনো কিছুই হামলা থেকে বাদ যাচ্ছে না। এদিকে এরই মধ্যে পানি, খাবার ও জ্বালানি ফুরিয়ে আসছে। যার ফলে গাজায় মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
সেক্ষেত্রে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছে সেভ দ্য চিলড্রেন। যুক্তরাজ্যভিত্তিক দাতব্য সংস্থাটি মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘গাজায় ১১ দিনের বিমান হামলায় ১ হাজারের বেশি শিশু নিহত হয়েছে। গাজায় মোট প্রাণহানির এক তৃতীয়াংশ শিশু।’
গাজার ২৩ লাখ মানুষ বিদ্যুৎ, পানি ও জ্বালানির জন্য ইসরাইলের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু হামাসের আকস্মিক অভিযানের পর এই অঞ্চলের ওপর নতুন সর্বাত্মক অবরোধ আরোপ করে বিদ্যুৎ, পানি ও জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু প্রশাসন।
জ্বালানির অভাবে এরই মধ্যে গাজার একমাত্র বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে পুরো গাজা এখন কার্যত অন্ধকারে। পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ায় এরই মধ্যে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। ফলে বাড়ছে পানিবাহিত রোগ। বিষয়টি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘও।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ’র এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গাজার অধিবাসীদের মধ্যে পানীয় জলের অভাব ও ডায়রিয়া ও কলেরার মতো পানিবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়ছে।