বাণিজ্য ডেস্ক:
দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে সরবরাহ নিশ্চিত করতে চিনির ওপর থাকা রফতানি বিধিনিষেধের মেয়াদ বাড়িয়েছে ভারত। দেশটির সরকার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, চিনি রফতানির ওপর থাকা বিধিনিষেধ ৩১ অক্টোবরের পরও অব্যাহত থাকবে।
ব্লুমবার্গ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম চিনি উৎপাদক ভারত অভ্যন্তরীণ বাজারে সরবরাহ নিশ্চিত করতে চিনির ওপর থাকা রফতানি বিধিনিষেধের মেয়াদ বাড়িয়েছে। দেশটির এমন পদক্ষেপে বিশ্ব চিনি বাজারে সরবরাহ ঘাটতি দেখা দিতে পারে। এর ফলে বেড়ে যেতে পারে বিভিন্ন ধরনের খাবারের দাম।
এর আগে গত সপ্তাহে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্রের বরাতে ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে শুষ্ক আবহাওয়ায় আখের ফলন ভালো না হওয়ায় ভারত চিনি রফতানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে এমন আভাস দেয়া হয়।
তাতে বলা হয়, ১ অক্টোরব শুরু হওয়া নতুন মৌসুমে চিনি রফতানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে দক্ষিণ এশীয় দেশটি। এক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত খুব শিগগিরই আসতে পারে।
অবশেষে সেই আশঙ্কা সঠিক প্রমাণ করে বুধবার (১৮ অক্টোরব) এক বিজ্ঞপ্তিতে ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড জানিয়েছে, ৩১ অক্টোবরের পরেও চিনি রফতানির ওপর বিধিনিষেধ অব্যাহত থাকবে।
তাছাড়া এই বিধিনিষেধে অরগ্যানিক চিনির রফতানির বিষয়টিও অন্তর্ভূক্ত রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।
প্রসঙ্গত, অসময়ে বৃষ্টিপাতের কারণে ফসল উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ২০২২-২৩ মৌসমে ভারত একটি কোটা ব্যবস্থা চালু করেছিল। এতে চিনি রফতানির পরিমাণ প্রায় ৬ মিলিয়ন টনে সীমিত করা হয়। যদিও তার আগের মৌসুমে এই কোটা ব্যবস্থা চালুর পূর্বে দেশটি ১১ মিলিটন টন চিনি রফতানি করেছে।
তবে ২০২৩-২৪ মৌসুমে মিলারদের জন্য বরাদ্দ করা চিনি রফতানির এই কোটার আকার কত হবে, সেই বিষয়টি এখনও স্পষ্ট করেনি ভারত সরকার।
২০১৮ সালের পর ভারতে চলতি বর্ষা মৌসুমে সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয়েছে, যার কারণে দেশটির কৃষি পণ্য উৎপাদনে প্রভাব পড়েছে। ছবি: ব্লুমবার্গ
ভারত ও থাইল্যান্ডের চিনি সরবরাহ কমানো উদ্বেগে ২০১১ সাল থেকে চিনির দাম সর্বোচ্চ স্তরের কাছাকাছি রয়েছে। যদিও ভারতের চিনি রফতানিতে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপের কারণে দেশটির বাজারে চিনির দাম কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে। কিন্তু তাদের এমন পদক্ষেপের কারণে বিভিন্ন ধরনের কোল্ড ড্রিংকস থেকে শুরু করে চকলেট ও বেকারি পণ্যের দামে প্রভাব পড়বে।
বিগত ৫ বছরের মধ্যে চলতি বর্ষা মৌসুমে সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয়েছে এবং এর প্রভাব পড়েছে কৃষি উৎপাদনে। ফলে খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার অশঙ্কা বিরাজ করছে। যা অবশ্যই চাইবেন না প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কারণ তার সরকার ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে মূল্যস্ফীতি নিয়ে সর্তক অবস্থানে থাকতে চায়।
এদিকে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কিছু কোটা সিস্টেমের অধীনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি করা চিনির ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য নয়।
ভারতের খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, এ বছর এখন পর্যন্ত স্থানীয় বাজারে চিনির দাম প্রায় ৩ শতাংশ বেড়েছে। তাছাড়া প্রতি মাসে মিল মালিকরা কি পরিমাণে চিনি বিক্রি করতে পারবেন, তা নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে দেশের বাজারে চিনির দাম পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে ভারত সরকার।
গত মাসে ১৪ জন বিশ্লেষক, ব্যবসায়ী ও মিল মালিকদের ওপর চালানো ব্লুমবার্গের একটি সমীক্ষায় বলা হয়, চলতি মৌসুমে চিনির উৎপাদন কম হওয়ায় বেশিরভাগ রফতানিকারক চিনি রফতানি করতে পারবে না। সমীক্ষায় অংশ নেয়া দুইজন উত্তরদাতা এমনটিও জানিয়েছিল যে এই মৌসুমে মাত্র ২ মিলিয়ন টন চিনি রফতানির অনুমতি মিলতে পারে।