মিলন হোসেন,বেনাপোল :
করোনা ভাইরাস সংক্রমণের পিক সময়ে দ্বিগুণ ভাড়া নিয়েও শারীরিক দূরত্ব না মেনেই যশোরের শার্শা উপজেলার সড়ক মহাসড়কের সর্বত্র তিন চাকার থ্রিহুইলার,নছিমন,করিমন,ইজিবাইক,পাখি ভ্যান হরহামেশায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।মহামারীর বিস্তার ঠেকানোর লক্ষ্যে তিনচাকায় অর্ধেক যাত্রী নেওয়ার কথা থাকলেও চালকরা আগের মতোই যাত্রী বহন করছেন। চালক ও যাত্রীরা শারীরিক দূরত্বের বিষয়টি মোটেও তোয়াক্কা করছেন না।
শারীরিক দূরত্ব না মেনেই ঘুরাঘুরি করতে, অফিসে যেতে,প্রয়োজন মেটাতে সব কাজেই এখন ব্যবহার হচ্ছে তিনচাকা পাবলিক বাসের ভাড়া বাড়ানোর সুযোগকে কাজে লাগিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে দ্বিগুণ ভাড়া নিয়ে এরা যশোর- বেনাপোল ও নাভারন-সাতক্ষীরা মহাসড়কও দখলে রেখেছে।প্রতিটি তিনচাকায় গাদাগাদি করে অন্তত দশ জন যাত্রী নিয়ে এরা যাতায়াত করছে।
তিন চাকার যানবাহনে ওভার লোড ও চলাচল বন্ধ না হলে ব্যাপক ভাবে করোনা ছড়িয়ে পড়ার আশংখা করছেন স্বাস্থ্য বিভাগ। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে এ ব্যাপারে নিয়মিত অভিযান চললেও রাস্তা ঘাটে তার তেমন কোন প্রভাব পড়ছে না।
মহাসড়কের বেনাপোল থেকে নাভারন, বেনাপোল চেকপোস্ট থেকে বেনাপোল বাসস্টান্ড ও নাভারন থেকে বাগআচড়াসহ গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে এইসব মহাসড়কে তিনচাকা আসা-যাওয়া করে। যে কারণে সব সময় উপজেলার সকল রাস্তা তিনচাকার দখলে থাকে।
জেএসএর একজন যাত্রী সাদিপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলাম বলেন, “এরা ডবল ভাড়া নেচ্ছে।আবার ১০জন যাত্রী না হওয়া পর্যন্ত ছাড়ছে না।তাড়াতাড়ি যাওয়ার দরকার তাই চাপাচাপি করে বসেও যাতি হচ্ছে।”বেনাপোলের হারুনুর রশিদ বলেন, “পনের মিনিটের পথ গাদাগাদি করে বইছি এতে আর কী হবে? যা হয় হবে।ভয় করলি ভয় না করলি নয়।”
কথা হয় কয়েকজন তিনচাকার চালকের। প্রথমেই তারা অকপটে বলেন,বেশি যাত্রী নিয়ে ধরা পড়লে অর্থদন্ড কিম্বা শাস্তি ভোগ করতে হচ্ছে।তারপরও বাড়ি বসে থাকলি খাবার পাবো কোথায় সাথে রয়েছে কিস্তির চিন্তা।সংশয়ে দিন কাটাচ্ছি।করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারি তাই মৃত্যুর ভয় উপেক্ষা করেও রাস্তায় নেমেছি।
থ্রিহুইলার চালক হাফিজুর রহমান বলেন, পেটের দায়ে রাস্তায় নামিছি। থ্রিহুইলার না চালালি খাবো কী? এই সময় আমারা প্যাসেঞ্জার বেশি পাচ্ছি।আয় রোজগারও ভাল হচ্ছে।শার্শার অটোচালক রবিউল ইসলাম বলেন,কিস্তিতে জেএসএ কিনিছি।প্রতিমাসে কিস্তি দিতি হয় ১৮ হাজার ৫০০ টাকা।ভয় তো করে কিন্তু করবো কী? কিস্তির টাকা তো দিতি হবে।তবে এখন একদিন খাটলি দু’দিনের টাকা আয় হচ্ছে।সুযোগ কাজে লাগাচ্ছি।
বেনাপোল একজন সংবাদকর্মী সোহাগ হোসেন বলেন,করোনার অজুহাতে চালকরা শারীরিক দূরত্বের বিষয়টি না মানলেও যাত্রীদের কাছ থেকে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করছেন ঠিকই।ভাড়া বেশি নিয়েও শারীরিক দূরত্বের বিষয়টি না মেনেই তারা গাড়ি চালাচ্ছে।প্রতিটি গাড়িতে প্রতিদিন অন্তত ১০০যাত্রী যাতায়াত করে।জীবানু নাশক স্প্রের কোন ব্যবস্থা নেই গাড়িতে।এভাবে যদি তিন চাকার যানবাহন চলতে থাকে তাহলে ব্যাপক ভাবে করোনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
শার্শা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) খোরশেদ আলম চৌধুরী বলেন,আমরা অনেক চেষ্টা করেছি,মাইকিং করেছি,নিজে সরেজমিনে বুঝিয়েছি,জরিমানা করেছি কিন্তু মানুষ তো অসচেতন,কিছুই মানতে চাচ্ছেনা। ধর্মের দোহাই দিচ্ছে,আরও কতো কি ব্যাখ্যা।আমাদের নিজ থেকে সচেতন না হলে আসলেই তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।
“করোনাভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।মানুষ কারণে-অকারণে নানা অজুহাতে বাইরে চলাচলের চেষ্টা করছে। অকারণে বাইরে বের হওয়া মানুষগুলোকে বুঝিয়ে আবার বাড়ি ফেরত পাঠানো হচ্ছে।আমরা চলে আসলে আবার অবস্থা ‘যা তাই’। তারপরও সরকারি নির্দেশনা অমান্য করলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।