নিজস্ব প্রতিনিধি:
সাতক্ষীরায় ‘আমাদের ঋণের বোঝা : বিআরআই’ একুশ শতকের সিল্ক রোড বিষয়ক মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন স্বদেশ-সাতক্ষীরা, উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্মজোট (ক্লিন) ও বাংলাদেশ ওয়ার্কিং গ্রুপ অন ইকোলোজি এন্ড ডেভেলপমেন্ট (বিডব্লিউজিইডি)’র উদ্যোগে আয়োজিত ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ বিষয়ক’ মানববন্ধন ও সমাবেশে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
১৫ অক্টোবর রবিবার সকাল ১০টায় সাতক্ষীরা শহরের প্রবেশদ্বার বিনেরপোতা এলাকায় মেঘনার মোড়ে ‘আমাদের ঋণের বোঝা : বিআরআই’ একুশ শতকের সিল্ক রোড বিষয়ক মানববন্ধন ও সমাবেশে বক্তব্য রাখেন নদী-বন ও পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের সভাপতি আদিত্য মল্লিক, ভূমিহনি নেতা আবদুস সামাদ, মানবাধিকারকর্মী মাধব চন্দ্র দত্ত, নদী-বন ও পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, ইউপি সদস্য ফাহমিদা জামান মিতু, অধিকারকর্মী আবু সুফিয়ান সজল, সাংবাদিক ফারুক রহমান, ভূমিহীন নেতা সেলিম হোসেন, পরিবেশ অধিকারকর্মী জিএম রেজাইল করিম, ইউসুফ আলী, আরশাদ আলী, কৃষক নেতা বাবুল হোসেন, শামিম আহমেদ, এনজিওকর্মী আজহারুল ইসলাম, যুবনেতা জয় সরদার, নারী অধিকারকর্মী ফরিদা আকতার বিউটি, উন্নয়নকর্মী শেখ আফজাল হোসেন প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে নেতৃবৃন্দ যেসব দাবি উত্থাপন করেন সেগুলো হচ্ছে: চীনা ঋণের সকল চুক্তি জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে। চীনা ঋণের আওতায় জীবাশ্ম জ্বালানিতে সকল বিনিয়োগ বন্ধ করতে হবে। বাস্তবায়িত প্রকল্পে পরিবেশ প্রতিবেশ মানবাধিকার শ্রমাধিকার রক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রে ক্ষতিগ্রস্ত, নিহত ও আহতদের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। বাংলাদেশে ২০৫০ সাল নাগাদ শতভাগ নবায়ণযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষে বিনিয়োগ করতে হবে। জীবাশ্ব জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ বন্ধ করতে হবে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, আগামী ১৮ অক্টোবর থেকে চীনের বেইজিংয়ে তৃতীয় সম্মেলন শুরু হবে, ১৯০টির ও বেশি দেশকে দাওয়াত দেয়া হয়েছে এই সম্মেলনে। ২০১৬ সালে চিনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্পে যোগ দেয় বাংলাদেশ। বেল্ট রোড প্রকল্পের অর্থায়নে যাতে বাংলাদেশকে কোনও ঋণের জালে জড়িয়ে না ফেলে সে দিকেও বাংলাদেশকে সতর্ক থাকতে হবে। অনেকের ধারণা চীন এই প্রকল্পের মাধ্যমে স্বল্পোন্নত এবং দরিদ্র দেশগুলোতে বিশাল অর্থ বিনিয়োগ করে দেশগুলোকে ঋণের ফাঁদে ফেলতে চায়। এর জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ শ্রীলঙ্কার হামবানটোটা বন্দর। এছাড়াও লাওস, অ্যাংগোলা, জিবুতি, কেনিয়া, মালদ্বীপ, পাকিস্তান ইতোমধ্যে চীনের ঋণের ফাঁদে পড়ে গিয়েছে। বাংলাদেশ বিআরআই প্রকল্পে সমর্থন জানিয়েছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, বিআরআই (বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ) উন্নয়নের নামে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক কর্তৃত্ত্ব প্রতিষ্ঠা ও চীনের নিজস্ব বাণিজ্য সুসংহত করার পরিকল্পনায় মত্ত। উন্নয়নের নামে বাংলাদেশকে প্রকাশ্য ও গোপন ঋণের ফাঁদে ফেলে সুদ বাণিজ্য হাতিয়ে নিতে ব্যস্ত। জ্বালানী স্বয়ংসম্পূর্ণ করার নামে জীবাশ্ম জ্বালানিতে তার বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশকে পরনির্ভরশীল করে তোলার পাশাপাশি দেউলিয়করণের দিকে ধাবিতে করানো। বিনিয়োগকৃত প্রকল্পে পরিবেশ প্রতিবেশ মানবাধিকার শ্রমাধিকারের দিকে তোয়াক্কা না করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা। প্রায় ২০০০ বছর আগে হান রাজবংশের সময় প্রতিষ্ঠিত ‘সিল্ক রোড’ এর ধারণা থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে ২০১৩ সালে চীন বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) নামে একটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়। এই প্রকল্পের আওতায় বিশ্বজুড়ে দরিদ্র দেশগুলোর অবকাঠামো খাতে ব্যাপক বিনিয়োগের মাধ্যমে চীন আধিপত্য বিস্তার করে চলছে।