বাণিজ্য ডেস্ক:
খরার কারণে আখের আবাদ কম হওয়ায় চিনি রফতানিতে পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে ভারত। বুধবার (১১ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি মৌসুম ( ১ অক্টোবর শুরু হবে) থেকেই চিনি রফতানিতে বিধিনিষেধ দিতে যাচ্ছে ভারত সরকার।
এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা খুব শিগগিরই আসছে বলে ব্লুমবার্গকে জানিয়েছে ভারতের সংশ্লিষ্ট সূত্র।
ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম চিনি উৎপাদনকারী ও তৃতীয় বৃহত্তম রফতানিকারক হওয়ায় নয়াদিল্লির এই পদক্ষেপে বিশ্বের চিনির বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়তে পারে, যার প্রভাব পড়বে বাংলাদেশেও। কারণ, ভারতের চিনির অন্যতম আমদানিকারক বাংলাদেশ। চাহিদার এক-তৃতীয়াংশ চিনি ভারত থেকেই আমদানি করা হয়।
তবে সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নতি সাপেক্ষে কিছু ক্ষেত্রে বিদেশে রফতানির অনুমতি দেয়া হতে পারে বলে ব্লুমবার্গকে জানিয়েছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ভারতীয় সূত্র।
ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত পাঁচ বছরের মধ্যে এবারই বর্ষা মৌসুমে সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয়েছে ভারতে। এ পরিস্থিতিতে কৃষি উৎপাদন ব্যাপকভাবে হুমকির মুখে পড়ায় রাজনৈতিক চাপের মুখে পড়েছে ভারতের বর্তমান ক্ষমতাসীন নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার। আগামী বছর দেশটির সাধারণ নির্বাচন সামনে রেখে খাদ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছেন নরেন্দ্র মোদি।
গত বছর বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় ভারত ৬০ লাখ টন চিনি রফতানির কোটা বেঁধে দেয় রফতানিকারকদের সামনে। অথচ এক বছর আগে যখন বিধিনিষেধ ছিল না, তখন ভারতের রফতানির পরিমাণ ছিল ১ কোটি ১০ লাখ টন।
তবে এ বছর খরা পরিস্থিতি এবং ভারতের জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে নরেন্দ্র মোদির সরকার চিনি রফতানি প্রায় পুরোপুরি স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে ব্লুমবার্গকে জানিয়েছে ভারতের চিনিশিল্প সংশ্লিষ্টরা। তবে সীমিত আকারে রফতানি হলেও তা সব মিলিয়ে ২০ লাখ টনের বেশি হবে না বলে জানান তারা।
এদিকে ভারতের চিনির বাজারে এই অস্থিরতার প্রভাব পড়ছে বিশ্ববাজারেও। বিগত ১২ বছরের মধ্যে গত সেপ্টেম্বরে চিনির আন্তর্জাতিক বেঞ্চমার্কগুলো সর্বোচ্চ ছিল। ভারতের নতুন এই রফতানি নিষেধাজ্ঞায় দামের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দিতে পারে নিউইয়র্ক ও লন্ডনে চিনির আন্তর্জাতিক বেঞ্চমার্কগুলোতে।
ভারতের আবহাওয়া দফতরের তথ্যানুযায়ী, দেশটির আখ চাষের অন্যতম কেন্দ্র মহারাষ্ট্র ও কর্ণাটকে এ বছর বর্ষা মৌসুমে খুবই কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে খরার কারণে শুধু ভারতই নয়, আখ উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম চিনি রফতানিকারক থাইল্যান্ডেও। জলবায়ু সংকট এল নিনোর প্রভাবে থাইল্যান্ডসহ পূর্ব এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক স্থানেই এ বছর খরা ও স্বল্প বৃষ্টিপাত হয়েছে।
ভারতের এই রফতানি নিষেধাজ্ঞায় ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বাংলাদেশও। কারণ, বাংলাদেশে চিনি উৎপাদন চাহিদার তুলনায় খুবই অপ্রতুল। প্রয়োজনীয় চিনির অধিকাংশই আমদানি করা হয়। যার উল্লেখযোগ্য অংশ আসে ভারত থেকে।
ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, ২০২২-২৩ (এপ্রিল-মার্চ) মৌসুমে ৫৮ লাখ টন অপরিশোধিত চিনি রফতানি করেছে দেশটি। আর এই অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে বাংলাদেশ ছিল শীর্ষে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যানুযায়ী, গত অর্থবছরে ১৮ লাখ ৩৬ হাজার টন অপরিশোধিত চিনি আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে ৩৯ শতাংশ হয়েছে ভারত থেকে।