জাতীয় ডেস্ক:
জাতীয় নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলোর পক্ষ থেকে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা তো দূরের কথা, কোনো ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার শঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
সোমবার (৯ অক্টোবর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সুইডেনের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতা ও বিদেশি বাণিজ্যবিষয়ক স্টেট সেক্রেটারি ডিয়ানা জেনসের সঙ্গে একঘণ্টার দীর্ঘ বৈঠক শেষে এ কথা বলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।
পশ্চিমা দেশগুলোর বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দেয়ার শঙ্কার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি খুব দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে পারি, এই দফতরে ১০ বছর কাজ করে যদি কিছু বুঝে থাকি, এ ধরনের (বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার) কোনো শঙ্কা নেই। মানুষের মধ্যে ভয় তৈরি করতে এটি (বাণিজ্য নিষেধজ্ঞার বিষয়টি) বলা হয়েছে। সেই ভয়ভীতি কাজে লাগিয়ে একটা গোষ্ঠী ফায়দা লুটতে পারে।
তিনি আরও বলেন, আমি অনুরোধ করবো, আপনারা (সাংবাদিক) আপনাদের মেধা দিয়ে তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে, সেই সঙ্গে বিদেশি, তা যুক্তরাষ্ট্র কিংবা ইউরোপীয় ইউনিয়ন হতে পারে, সেই সব রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে আপনারা কাজগুলো করবেন। আমি পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, জাতীয় নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা তো অনেক দূরের কথা, কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার শঙ্কা কিংবা বাস্তবতা বা কোনো প্রেক্ষাপট নেই।
বিএনপির সঙ্গে মার্কিন প্রতিনিধি দলের বৈঠকে দলটি পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে এই সরকারের অধীনে তারা নির্বাচনে আসবে না- এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৪সালে প্রধানমন্ত্রীর টেলিফোন সত্ত্বেও তারা নির্বাচনে আসেনি। না এসে তারা বাধা দেয়ার চেষ্টা করেছে। সেই সময়ের নিউইয়র্কে টাইমসে এ বিষয়ে প্রচ্ছদ প্রতিবেদনও হয়েছে। আমি বিষয়টি ডিয়ানা জেনসকে জানিয়েছি। বাংলাদেশের নির্বাচন এদেশের সংবিধান অনুসারে হবে। কেউ তা বানচালের চেষ্টা করলে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে বাংলাদেশ কী পদক্ষেপ নিয়েছে, সে সম্পর্কে ডিয়ানা জেনস জানতে চেয়েছেন। আমি তাকে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগের দুইবছর তত্ত্বাবধায়ক সরকার যখন ছিল, সেই সময়ের প্রেক্ষাপট, ২০০৮ সালের অভিজ্ঞতা, ২০১৪ সালে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নির্বাচন বয়কট ও বানচালের অপচেষ্টার ঘটনাপ্রবাহ, জ্বালাওপোড়াও, রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস, ২০১৮ সালে সেই রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে এলেও নেতৃত্বের সংকটের কারণে তারা সেই নির্বাচনে পুরো সময় থাকেনি। এছাড়াও তাদের অপচেষ্টা এখনো যে অব্যাহত আছে, একইসঙ্গে নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণে আমাদের চেষ্টার কথাও জানিয়েছি।
স্বাধীনতার পরপরই সুইডেন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল উল্লেখ করে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের খাদ্য ও শিক্ষা নিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে সুইডেনের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা সিডা ও সুইডিশ দূতাবাস বহুবছর ধরে কাজ করে যাচ্ছে। গত একদশকে অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশের অনেক উন্নতি হয়েছে। বাংলাদেশের বাণিজ্য, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণে সুইডেন আমাদের কী সহায়তা করতে পারে, তা নিয়ে আমাদের মধ্যে কথা হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের টেকনোলজি ট্রান্সফার, ডিজিটালাইজেশন ও স্মার্ট বিজনেস ইনভারনমেন্টে তারা কী ধরনের সহযোগিতা করতে পারেন, সে নিয়ে আলাপ হয়েছে। আলোচনায় জলবায়ু পরিবর্তনের বৈরী প্রভাবও উঠে এসেছে। সেখানে অভিযোজন ও প্রশমন নিয়ে কথা হয়েছে। রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও আলোচনায় ছিল। ইন্দো-প্যাসেফিক আউটলুক সম্পর্কে তিনি জানতে চেয়েছিলেন, যা আমি তাকে বলেছি।
এছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিণতি নিয়ে কথা হওয়ার বিষয়ে জানিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, এই যুদ্ধ সুইডেনের খাদ্য নিরাপত্তার জন্যও চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। রাশিয়ার সঙ্গে ঐতিহাসিক সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছি আমরা। সেটি তাকে আমি জানিয়েছি, তিনি বিষয়টিকে স্বাগতও জানিয়েছেন।