অনলাইন ডেস্ক:
যশোর জেলা আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষ শুক্রবার পৃথক কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে তাদের শক্তির মহড়া প্রদর্শন করেন। এদিন বিকেলে শহরের চৌরাস্তায় শান্তি সমাবেশ করেন যশোর সদরের এমপি কাজী নাবিল আহমেদ। আর সন্ধ্যায় দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভা করেন যশোর-৬ আসনের (কেশবপুর) এমপি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার। দুটি অনুষ্ঠানেই জেলা আওয়ামী লীগের কমবেশি নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। দুটি অনুষ্ঠানেই দুটি পক্ষই একে অপরের আকার ইঙ্গিতে সমালোচনা করেও বক্তব্য দেন।
যশোর জেলা আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগ কার্যত দুটি গ্রুপে বিভক্ত। একটি পক্ষের নেতৃত্ব দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার এমপি ও অন্যটির নেতৃত্ব দেন যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ। মূলত জেলার এই দুই শীর্ষ নেতার দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয় ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনের যশোর-৩ (সদর) সংসদীয় আসনের দলীয় মনোনয়নকে ঘিরে। যা এখনো চলমান রয়েছে রয়েছে বলে জানিয়েছে দলটির নেতাকর্মীরা।
বিএনপি জামাতের সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ নৈরাজ্য ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে শুক্রবার বিকেলে উন্নয়ন ও শান্তি সমাবেশ হয় শহরের চৌরাস্ত মোড়ে। জেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের আয়োজনে এই সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ। এই অনুষ্ঠানে নাবিল গ্রুপের নেতাকর্মীরাই উপস্থিত ছিলেন। বক্তারা যশোর-৩ আসনে আবারও নাবিল আহমেদকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানান। পাশাপাশি কয়েকজন বক্তা শাহীন চাকলাদারকে উদ্দেশ্য করে ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্যেও দেন।
সমাবেশে জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা একে এম খয়রাত হোসেন বলেন, ‘দল ক্ষমতায় এসে অনেকেই অনেক সম্পত্তি, টাকার মালিক হয়েছেন। বড় হোটেলও বানিয়েছেন। কিন্তু নাবিল সৎ মানুষ। ক্লিন ইমেজধারী। তিনি পারিবারিক অর্থবৃত্তের মানুষ। জনপ্রতিনিধি হয়ে টাকার মালিক হয়নি।
অনুষ্ঠানে সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তফা ফরিদ চৌধুরী বলেন, যশোরের মাটি নাবিলের মাটি। এই সদর আসনে কাজী নাবিল আহমেদই মনোনয়ন পাবেন। তাকেই বিজয়ী করবো। শুধু তাকে নয়; নাবিল আহমেদের নেতৃত্বে যশোরের ৬টি আসন বিজয়ী করে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করবো।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যশোরে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। যশোরে গ্রামীণ রাস্তাও সব পাকাকরণ হচ্ছে। ২০০ বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চারতলা ভবন হয়েছে। পদ্মাসেতু হওয়ায় প্রান্তিক মানুষের আয় বেড়েছে। শিক্ষা, চাকরি, ব্যবসা সর্বক্ষেত্রে প্রসারতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিএনপির আমলে কোন উন্নয়ন ছিল না। অনিয়ম, দুর্নীতি, দুঃশাসনের যাতাকলে দেশবাসী পিষ্ট ছিল। বিএনপির কথা মনে হলে এখনো সবাই শরীরের লোম শিউরে উঠে। আরো বড় উন্নয়ন হবে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে। এসময় তিনি সরকারের উন্নয়ন অব্যহত রাখতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশ দেন এবং এই আসনে আবারও মনোনয়ন প্রত্যাশী ব্যক্ত করেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও পৌরসভার মেয়র মুক্তিযুদ্ধা হায়দার গণি খান পলাশের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মেহেদী হাসান মিন্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম আফজাল হোসেন, উপ প্রচার লুৎফর কবির বিজু, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি লাইজু জামান, জেলা শ্রমিক লীগের (একাংশের) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জবেদ আলী, জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি মঞ্জুনাহার নাজনীন সোনালী, জেলা যুবলীগের সহসভাপতি সৈয়দ মেহেদী হাসান মিন্টু, লেবুতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলিমুজ্জামান মিলন, শ্রমিক লীগনেতা সেলিম রেজা পান্নু, যশোর পৌরসভার ৩ নাম্বার ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ মৌকছিমুল বারী অপু, ৫ নাম্বার ওয়ার্ড কাউন্সিলর রাজিবুল ইসলাম, যবিপ্রবি ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানা প্রমুখ।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৭ তম জন্মদিন উপলক্ষে এদিন রাতে শহরের গাড়ি খানাস্থ দলীয় কার্যালয়ে আলোচনাসভা করে জেলা আওয়ামী লীগ। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার এমপি। অনুষ্ঠানে জেলা আওয়ামী লীগের শাহীন চাকলাদার পক্ষের অনুসারীরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে শাহীন চাকলাদার বলেন, ‘সম্প্রতি আমরা কিছু জনপ্রতিনিধি ও সংসদ সদস্যদের দেখছি দেশের উন্নয়ন নিয়ে জনগণের কাছে বার্তা পৌঁছানোর বেলায় নেই। কিন্তু তারা দলের নেতাকর্মীদের সমালোচনার বেলায় আছে। যারা দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে অপপ্রচার করে তাদের চিহ্নিত করতে হবে। দল ক্ষমতায় বহু লোক আওয়ামী লীগ করার অভাব নেই। সম্প্রতি আমরা দেখছি কিছু কিছু জনপ্রতিনিধি কার্যক্রম আগের মতোই আছে। তাদের ধারণা যেভাবে নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে সংসদ সদস্য হয়েছে; এবারও মনে হয় সেইভাবে নির্বাচিত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার বলছেন অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, তাদের সেইদিকে খেয়াল নেই। নেতাকর্মীদের মাঠে নামাতে হবে। নিজেদেরও মাঠে নামতে হবে। নিজেদের উন্নয়ন বার্তা মানুষকে বলতে হবে।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের উপ দপ্তর সম্পাদক ওহিদুল ইসলাম তরফদার, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মোস্তফা আশিষ, অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন, শহর আওয়ামী লীগ নেতা ইউসুফ শাহীদ, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ফারিন রহমান, সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ বিপুল, জেলা শ্রমিক লীগের সহ সভাপতি আজিজুল আলম মিন্টু, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম জুয়েল, সাবেক সভাপতি রওশন ইকবাল শাহী, পৌর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান রনি প্রমুখ।