প্রেস বিজ্ঞপ্তি:
সাতক্ষীরার প্রথিতযশা সাংবাদিক সুভাষ চৌধুরীর ১ম মৃত্যুবার্ষিকী বুধবার ২০ সেপ্টেম্বর । ২০২২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর মফস্বল সাংবাদিকতার অন্যতম পথিকৃৎ সুভাষ চৌধুরী ৭০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।
১৯৫০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার দেড়–লি গ্রামে জন্মগ্রহণকারী সুভাষ চৌধুরী শিক্ষকতার পাশাপাশি ১৯৭৩ সালে সাংবাদিকতা শুরু করেন।
যশোরের কেশবপুর উপজেলায় সাপ্তাহিক ‘শিখা’ পত্রিকার মাধ্যমে সাংবাদিকতা শুরুর পর যশোরের ‘দৈনিক স্ফুলিঙ্গ’, ঢাকার ‘সাপ্তাহিক নিউ নেশন’ পরে ‘দ্য ডেইলি নিউনেশন’ ও ‘বাংলাদেশ টাইমস’ এ শিক্ষানবিশ রিপোর্টার হিসেবে খÐকালীন দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
সুভাষ চৌধুরী আহমেদ হুমায়ুন সম্পাদিত ‘দৈনিক বাংলা’ এর সাতক্ষীরা প্রতিনিধি হিসেবে জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন। তিনি দৈনিক বাংলা’র প্রধান সম্পাদক কবি শামসুর রাহমান, তোয়াব খান ও আহমেদ হুমায়ুন সম্পাদিত ‘দৈনিক বাংলা ট্রাস্ট’ এবং শাহাদাত চৌধুরী সম্পাদিত ‘টাইম বাংলা ট্রাস্ট’ এর জনপ্রিয় সাপ্তাহিক বিচিত্রা’র প্রতিবেদক হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৯৭ সালের ৩১ অক্টোবর ‘দৈনিক বাংলা’ বিলুপ্ত হলে তিনি ১৯৯৮ সালে দৈনিক ভোরের কাগজ-এ নিযুক্ত হন। পরে ২০০৫ সালে আবেদ খান সম্পাদিত দৈনিক যুগান্তর-এর সাতক্ষীরা প্রতিনিধি হিসাবে যোগদান করেন। এরই মধ্যে ২০০৩ সালে তিনি যোগ দেন জনপ্রিয় টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভি’তে। সাংবাদিক সুভাষ চৌধুরী এক সময়ের ব্যাপক প্রচারিত, প্রশংসিত ও জনপ্রিয় ‘দৈনিক বাংলা’ এবং ‘সাপ্তাহিক বিচিত্রা’য় গঠনমূলক, বস্তুনিষ্ঠ ও সাড়া জাগানো রিপোর্ট লিখে দেশজুড়ে পরিচিতি লাভ করেন।
এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য: ‘সাতক্ষীরা বাঁকাল ইসলামপুর চরে লাঠিবাহিনীর সন্ত্রাস’, ‘ঘের ও জলকরের সুবিধা-অসুবিধা’, ‘চোরা কারবার ও চোরা কারবারী’, ‘ভূমিহীন আন্দোলন ও ভূমিদস্যু’, ‘সুন্দরবন : আকর্ষণ বনাম বিপন্নতা’, ‘সাতক্ষীরার জন ও জনপদ’, ‘দক্ষিণ অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি’ ‘আজকের সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট’, ‘চাই চৈতন্যবোধ সম্প্রীতি’, ‘তুমি আমি আমরা’, ‘সাংবদিকতার ধরন ও গঠন’ ইত্যাদি।
সাপ্তাহিক বিচিত্রায় অগণিত সাড়া জাগানো রিপোর্ট প্রকাশের পর এক পর্যায়ে সরকার ও প্রভাবশালীদের রোষাণলে পড়ে ১৯৮৮ সালে কারাভোগ করেন তিনি।
জীবনব্যাপী সমস্ত লেখার প্রায় সবই ব্যক্তিগত সংগ্রহশালায় সংরক্ষণ করে সুভাষ চৌধুরী নিজেই বিরল তথ্য ভাÐারে পরিণত হন এবং সংবাদ জগতে চলমান ডিকশনারি হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন।
সাতক্ষীরার সবগুলো দৈনিকসহ জাতীয় দৈনিক ও সাময়িকীতে নিয়মিত কলাম লিখতেন তিনি। এসবের পাশাপাশি লিখতেন কবিতাও। তার লেখায় ফুটে উঠতো দ্রোহের চেতনা, সমাজচিত্র কখনোবা প্রকৃতি প্রেমের মূর্ছনা।
সুভাষ চৌধুরী সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের একাধিকবার নির্বাচিত সভাপতি ছিলেন। ছিলেন দৈনিক পত্রদূতের প্রতিষ্ঠাকালীন নির্বাহী সম্পাদক। ১ জুলাই ২০২২ তারিখে তাকে স্টাফ রিপোর্টার হিসাবে পদোন্নতি দেয় এনটিভি। আমৃত্যু তিনি এনটিভির স্টাফ রিপোর্টার ও যুগান্তরের সাতক্ষীরা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে গেছেন। এর আগে ২০১০ সালের ১ ফেব্রæয়ারি তিনি সাতক্ষীরা পল্লী মঙ্গল স্কুল থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সুভাষ চৌধুরী বসুন্ধরা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড ২০২২, জেলা সাহিত্য পরিষদ সম্মাননা ২০২২, দৈনিক কালের চিত্র সম্মাননা ২০২২, সাংস্কৃতিক উৎসব সম্মাননা ২০২২, জেলা শিল্পকলা একাডেমি সম্মাননা ২০২১, সাপ্তাহিক সূর্যের আলো সম্মাননা ২০২০, সাতক্ষীরা জেলা সাংবাদিক পরিষদ সম্মাননা ২০১৯, মমতাজ আহমেদ স্মৃতি পদক ২০১৮, নতুন ধারা ফাউন্ডেশন সম্মাননা ২০১৬ ও কবিতা পরিষদ সম্মাননা ২০১০-এ ভ‚ষিত হন।
২০২২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর মফস্বল সাংবাদিকতার অন্যতম পথিকৃৎ সুভাষ চৌধুরী মৃত্যুবরণ করেন।
তার ১ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সাতক্ষীরার সাংবাদিক সমাজ বুধবার সকাল ১০টায় সাতক্ষীরা লেকভিউ কনভেনশন সেন্টারে তানজির কচি সম্পাদিত ও ম্যানগ্রোভ প্রকাশিত গ্রন্থ ‘সুভাষের সৌরভ’ এর মোড়ক উন্মোচন ও স্মরণসভার আয়োজন করেছে।