হোম আন্তর্জাতিক পুতিনের বিরুদ্ধাচরণ করায় যে ৭ রুশ নাগরিককে চরম মূল্য দিতে হয়েছে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরোধিতা করলেই চরম মূল্য দিতে হয়। যার সবশেষ দৃষ্টান্ত রাশিয়ার ভাড়াটে যোদ্ধা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ওয়াগনারের প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিন।

ইউক্রেনে রুশ সেনাবাহিনীর পাশাপাশি তার নেতৃত্বে লড়াই করছিল ওয়াগনার যোদ্ধারা। কিন্তু সম্প্রতি সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব শুরু হয় প্রিগোজিনের। এরপর চলতি বছরের জুনের শেষের দিকে রুশ সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ ঘোষণা করেন তিনি।

এ ঘটনাকে ‘পিঠে ছুরি মারা’র সঙ্গে তুলনা করে প্রিগোজিনকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলে অভিহিত করেন পুতিন। গত বুধবার (২৩ আগস্ট) মস্কোর উত্তরে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত হয়েছেন প্রিগোজিন। মনে করা হচ্ছে, পুতিনের নির্দেশেই ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ে তার ব্যক্তিগত বিমানটি ধ্বংস করা হয়েছে।

প্রিগোজিনের মতো এমন পরিণতি অতীতে আরও বেশ কয়েকজন রুশ নাগরিকের ক্ষেত্রে দেখা গেছে। যেমন:-

অ্যালেক্সি নাভালনি

রাশিয়ার সবচেয়ে প্রষিদ্ধ বিরোধী নেতা আলেক্সি নাভালনি। পুতিনের একজন কঠোর সমালোচক হিসেবেও পরিচিত। ২০২০ সালের আগস্টে তাকে বিষ প্রয়োগে হত্যার চেষ্টা করা হয়। তবে জার্মানিতে চিকিৎসা নিয়ে সে যাত্রায় বেঁচে যান তিনি।

২০২১ সালে রাশিয়ায় ফেরেন নাভালনি। তবে দেশে পৌঁছানোর পরপরই তাকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর জালিয়াতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে তাকে মোট সাড়ে ১১ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। সেই থেকে তিনি জেল খাটছেন। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে আরও ১৯ বছরের কারাদণ্ড ঘোষণা করা হয়েছে।

সের্গেই স্ক্রিপাল

রাশিয়ার সাবেক সামরিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা সের্গেই স্ক্রিপাল। ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থার কাছে গোয়েন্দা তথ্য পাচার করেছিলেন তিনি। ২০১৮ সালের মার্চে ইংলিশ ক্যাথেড্রালের শহর সালিসবুরিতে একটি বিপণিকেন্দ্রের বাইরে স্ক্রিপাল ও তার মেয়ে ইউলিয়াকে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়।

গুরুতর অবস্থায় তাদের হাসপাতালে নেয়া হয়। তারা বেঁচে যান। ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের মতে, তাদের ওপর নোভিচক নামের এক ধরনের বিষ প্রয়োগ করা হয়।

ভ্লাদিমির কারা-মুরজা

রুশ মানবাধিকারকর্মী ও পুতিনের সমালোচক। রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের সমালোচনা করায় সম্প্রতি কারা মুরজাকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর রাষ্ট্রদ্রোহসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগে তাকে ২৫ বছরের কারাদণ্ড দেয় রাশিয়ার আদালত।

কারা-মুরজার কথা মতে, ২০১৫ ও ২০১৭ সালে তাকে বিষ প্রয়োগের চেষ্টা করা হয়েছিল। জার্মানির একটি ল্যাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হলে তার শরীরে বিপুল মাত্রায় পারদ, তামা, ম্যাংগানিজ ও দস্তা পাওয়া যায়। তবে কারা-মুরজার অভিযোগ অস্বীকার করেছে মস্কো।

আলেক্সান্ডার লিতভিনেঙ্কো

রুশ গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবির সাবেক কর্মকর্তা ও পুতিনের কঠোর সমালোচক। ২০০৬ সালে লন্ডনের মিলেনিয়াম হোটেলে পোলোনিয়াম-২১০ (এক ধরনের বিরল তেজস্ক্রিয় পদার্থ) মিশ্রিত গ্রিন টি খাওয়ার পর মারা যান তিনি।

সে সময় বয়স হয়েছিল মাত্র ৪৩ বছর। ২০১৬ সালে ব্রিটিশ সরকার এর তদন্ত করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, পুতিন সম্ভবত এ হত্যাকাণ্ডের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে ক্রেমলিন।

আলেক্সান্ডার পেরেপিলিচনি

২০১২ সালের নভেম্বরে লন্ডনের কাছে নিজের বাড়ির কাছে ৪৪ বছর বয়সী আলেক্সান্ডার পেরেপিলিচনির মৃতদেহ পাওয়া যায়। তিনি সেদিন জগিং-এর জন্য বের হয়েছিলেন। রাশিয়ার একটি মানি লন্ডারিংবিষয়ক ঘটনা তদন্তে সুইস কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করার পর ২০০৯ সালে ব্রিটেনে আশ্রয় নেন পেরেপিলিচনি।

তার আকস্মিক এ মৃত্যুর ঘটনায় অনেকে বলে থাকেন, তাকে হত্যা করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যে তদন্ত পূর্ববর্তী এক শুনানিতে বলা হয়, পেরেপিলিচনির পাকস্থলীতে জেলসেমিয়াম গাছের বিরল ধরনের বিষের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

পেরেপিলিচনি এক বাটি বিশেষ স্যুপ খেয়েছিলেন। ওই স্যুপটি রাশিয়ায় জনপ্রিয়। তবে পেরেপিলিচনির মৃত্যুর ঘটনাতেও নিজেদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করেছে রাশিয়া।

ভিক্টর ইয়ুশচেঙ্কো

ইউক্রেনের বিরোধীদলীয় নেতা ভিক্টর ইয়ুশচেঙ্কো। ২০০৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণা চলাকালে তাকে বিষ প্রয়োগ করা হয়। রাশিয়াপন্থি প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ইয়ানুকোভিচের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন তিনি।

ভিক্টর ইয়ুশচেঙ্কোর অভিযোগ, ইউক্রেনের নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক নৈশভোজের সময় তাকে বিষপ্রয়োগ করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করে রাশিয়া।

স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ভিক্টর ইয়ুশচেঙ্কোর দেহে স্বাভাবিকের চেয়ে ১ হাজার গুণ বেশি ডায়োক্সিন পাওয়া গিয়েছিল। বিষক্রিয়ায় তার মুখ ও শরীর বিকৃত হয়ে গিয়েছিল। ওই ঘটনার পর তার অনেকগুলো অস্ত্রোপচার করতে হয়।

আন্না পোলিতকোভস্কায়া

রাশিয়ার নারী সাংবাদিক আন্না পোলিতকোভস্কায়া মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদন করেছিলেন। ২০০৬ সালের ৭ অক্টোবর মস্কোতে নিজের ফ্ল্যাটের সামনে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। পোলিতকভস্কায়ার বয়স হয়েছিল ৪৮ বছর। এ ঘটনায় পশ্চিমা বিশ্ব তীব্র ক্ষোভ জানায়।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন