জাতীয় ডেস্ক:
পরকীয়া প্রেমের এক পর্যায়ে স্বামী, চার সন্তান ছেড়ে আরিফের সঙ্গে পালিয়ে যান ফাতেমা বেগম। কিন্তু আরিফ তাকে বিয়ে রাজী হননি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে স্বামী শুক্কুর আলীকে সঙ্গে নিয়ে আরিফকে প্রথমে মাথায় শাবল দিয়ে আঘাত করে এবং পরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন ফাতেমা।
গ্রেফতারের পর শুক্কুর আলী ও ফাতেমা বেগম প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আরিফ হত্যার কথা স্বীকার করেছেন।
বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) রাতে কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বার থানাধীন ওয়াহিদপুর এলাকায় তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে একটি অভিযান পরিচালনা করে আরিফ হত্যাকাণ্ডের এই প্রধান দুই আসামিকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
শুক্রবার (১১ আগস্ট) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অপরাধ খন্দকার আশফাকুজ্জামান।
গ্রেফতার শুক্কুর আলী (৩০) ও তার স্ত্রী ফাতেমা বেগম (২৮) সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক থানার বাসিন্দা।
পুলিশ জানায়, গত বুধবার (৯ আগস্ট) বিকেলে স্থানীয় সূত্রে তারা খবর পায় চান্দিনা থানার মাইজখার ইউনিয়নের করতলা ছাড়াগাঁও গ্রামে গিয়াসউদ্দিনের মাছের পুকুরে এক যুবকের অর্ধগলিত মরদেহ ভেসে আছে। এই সংবাদের প্রেক্ষিতে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। এরপর মরদেহের সুরতহাল করে নিহত ব্যক্তির পরিচয় জানতে পারে।
নিহত রাজমিস্ত্রি আরিফ (৩০) ছাতকের সাতগাঁও এলাকার আলাই মিয়ার ছেলে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা পুলিশকে জানায়, ১০ বছর আগে ফাতেমা বেগম ও শুক্কুর আলীর বিয়ে হয়। তাদের সংসারে চার সন্তান রয়েছে। শুক্কুর আলী রাজমিস্ত্রির কাজ করে। কাজের সুবাদে শুক্কুর আলীর সঙ্গে আরিফের প্রায় ২/৩ বছর আগে বন্ধুত্ব হয়। আরিফ শুক্কুরের বাড়িতে প্রায় আসা যাওয়া করত। একপর্যায়ে আরিফের সঙ্গে শুক্কুরের স্ত্রী ফাতেমার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এক মাস আগে স্বামী, সন্তান রেখে ফাতেমা আরিফের সঙ্গে পালিয়ে যায়। কুমিল্লার চান্দিনার বাসিন্দা মৃত আলী মিয়ার স্ত্রী কুলসুম বেগমের ভাড়া বাসায় উঠেন তারা। সেখানে ফাতেমা আরিফকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকেন। কিছুদিন পার হওয়ার পর ফাতেমা এক সময় বুঝতে পারে আরিফ তাকে বিয়ে করবে না। এতে ফাতেমা ক্ষুব্ধ হয়ে তার স্বামী শুক্কুরের কাছে ফিরে যাওয়ার জন্য মুঠোফোনে যোগাযোগ করেন।
গত ০৭ আগস্ট শুক্কুর ফাতেমাকে আনার জন্য আরিফের ভাড়া বাসায় যায়। ওই সময় আরিফ বাসায় ছিল না। এ সুযোগে ফাতেমা ও শুক্কুর মিলে আরিফকে উচিত শিক্ষা দিতে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরে ৭ আগস্ট রাতে আরিফ বাসায় আসলে পরিকল্পনা অনুযায়ী শুক্কুর আরিফের বাসার চৌকির নিচে লুকিয়ে থাকে। আরিফ ঘুমিয়ে পড়লে পূর্ব-পরিকল্পনা অনুযায়ী রাত ২ টার সময় শুক্কুর ও ফাতেমা মিলে একটি লোহার শাবল দিয়ে আরিফের মাথায় সজোরে আঘাত করে। পরে গলায় গামছা পেঁচিয়ে এবং মুখে বালিশ চাপা দিয়ে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
পরে আরিফের মরদেহ একটা প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে বিছানার চাদর দিয়ে পেঁচিয়ে তার ভাড়া বাসার পশ্চিম পাশে জনৈক গিয়াসউদ্দিনের মাছের পুকুরে ফেলে পালিয়ে যায় শুক্কুর ও ফাতেমা।
এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কুমিল্লা জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অপরাধ খন্দকার আশফাকুজ্জামান সময় সংবাদকে জানান, এই হত্যাকাণ্ডের পর নিহতের ভাই তারিছ আলী বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন। মামলার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ক্লু লেস হত্যাকাণ্ডের মূল আসামিকে গ্রেফতার করে পুলিশ।