হোম আন্তর্জাতিক পাকিস্তানে রাজনৈতিক সমাবেশে ভয়াবহ বোমা হামলা, নিহত ৩৫

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

পাকিস্তানের প্রবীন রাজনীতিবিদ মাওলানা ফজলুর রহমানের দল জমিয়ত উলামা ইসলাম-ফজলের (জেইউআই-এফ) একটি সমাবেশে ভয়াবহ বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে। আত্মঘাতী এ হামলায় কমপক্ষে ৩৫ জন নিহত এবং দুই শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সংবাদমাধ্যম দ্য ডন জানিয়েছে, রোববার (৩০ জুলাই) খাইবার পাখতুনখোয়ার বাজুয়ার বিভাগে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ওই বিভাগের জরুরি কর্মকর্তা সাদ খান হতাহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

হামলায় দলটির গুরুত্বপূর্ণ নেতা মাওলানা জিয়াউল্লাহ জান নিহত হয়েছেন বলেও জানান তিনি।

খাইবার পাখতুনখোয়ার তত্ত্বাবধায়ক তথ্যমন্ত্রী ফিরোজ জামাল শাহ জিও নিউজকে বলেন, ‘এক জেইউআই-এফ নেতার বক্তৃতার সময় বিস্ফোরণটি ঘটে। এতে দুই শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন।’

আহতদের তিমারগাড়া এবং পেশোয়ারের বিভিন্ন হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলার জরুরি সহায়তা বিভাগের কর্মকর্তারা।

খাইবার পাখতুনখোয়া (কেপি) পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) আখতার হায়াত খান হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে এটি একটি আত্মঘাতী হামলা ছিল।

তদন্ত দল বিস্ফোরণের ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করছেন বলেও জানিয়েছেন আইজিপি।

এদিকে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানিয়েছে, এরইমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ঘটনার তদন্ত করতে এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে দায়ীদের চিহ্নিত করার নির্দেশনা দিয়েছেন।

পরিস্থিতি তদারকি করতে বাজুয়ারে পৌঁছেছেন ফ্রন্টিয়ার কোরের (এফসি) আইজি মেজর জেনারেল নূর ওয়ালী খান। এদিকে, সিএমএইচ পেশোয়ারকে সতর্ক করা হয়েছে এবং নিরাপত্তা বাহিনী ও অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়েছে।

তবে এখন পর্যন্ত কোনো গোষ্ঠী এ হামলার দায় স্বীকার করেনি।

যখন ঘটেছে হামলা
জেইউআই-এফ খাইবার পাখতুনখাওয়ার মুখপাত্র আব্দুল জলিল খান জিও নিউজকে জানিয়েছেন, বিকেল ৪টার দিকে মাওলানা লায়েক সমাবেশে ভাষণ দেয়ার সময় বিস্ফোরণটি ঘটে।

প্রাদেশিক এই মুখপাত্র আরও জানান, জেইউআই-এফের এমএনএ মাওলানা জামালউদ্দিন এবং সিনেটর আবদুল রশিদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। তিনি নিশ্চিত করেছেন, নিহতদের মধ্যে জেইউআই-এফের তহসিল খার আমির মাওলানা জিয়াউল্লাহ রয়েছেন।

তদন্ত দাবি জেইউআই-এফ প্রধানের
জেইউআই-এফ প্রধান মাওলানা ফজলুর রহমান প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এবং কেপির তত্ত্বাবধায়ক মুখ্যমন্ত্রী আজম খানের কাছে বোমা হামলার ঘটনা তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।

হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে ফজলুর রহমান আহতদের সুস্থতা ও নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। দলীয় কর্মীদের হাসপাতালে পৌঁছে রক্ত দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

জেইউআই কর্মীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের উচিত আহতদের সর্বোত্তম চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা।

নিন্দার ঝড়
পাঞ্জাবের তত্ত্বাবধায়ক মুখ্যমন্ত্রী মহসিন নকভি বোমা হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, ‘পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ এবং ঐক্যের শক্তির মাধ্যমে এই হুমকির অবসান ঘটাবে। যারা নিরপরাধ মানুষের জীবন নিয়ে খেলা করে তারা মানুষ নয়।’

জামায়াতে ইসলামীর আমীর সিরাজুল হকও এই বিস্ফোরণের নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, ‘এটি দেশে বিশৃঙ্খলা ছড়ানোর লক্ষ্যেই করা হয়েছে।’
অবিলম্বে এ ঘটনার তদন্ত করার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি বলেছেন, ‘কেন্দ্রীয় এবং প্রাদেশিক সরকারের উচিত সন্ত্রাসী ও তাদের সহায়তাকারীদের বিচারের আওতায় আনা।’

নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করে বিলাওয়াল বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদের পরিকল্পনাকারীদের নির্মূল করা প্রয়োজন।’

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন