রাজনীতি ডেস্ক:
সহিংসতা এ অঞ্চলের রাজনীতিতে নিত্যকার ব্যাপার। কোনো নির্বাচন এলেই সন্ত্রাসীরা যেন আরও ফুঁসে ওঠে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপি ও জামায়াত এ সন্ত্রাস ও সহিংসতা চর্চা করে আসছে।
সহিংসতা ও আগুন-সন্ত্রাসের মধ্যদিয়ে মানুষ হত্যা করে ভীতির রাজনীতি করছে বিএনপি। আর এ ধরনের অপরাজনীতি থেকে সুফল তুলে নিতে চায় দলটি। ২০১৩ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার বানচালে তাণ্ডব চালিয়ে মানুষ হত্যা করে বিএনপির সহযোগী জামায়াত। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের নির্বাচনকে বানচাল করতে আগুন-সন্ত্রাসের মাধ্যমে মানুষ হত্যায় মেতে ওঠে বিএনপি-জামায়াত।
এ ধারাবাহিকতায় দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি অবনতির পরও মানবাধিকার বিষয়ে বাংলাদেশের বন্ধু রাষ্ট্রগুলোকে বিভ্রান্ত করেছে তারা। গুম-খুনের অভিযোগ তুলে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে মানবাধিকার ইস্যুতে বিশ্ববাসীকে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে আসছে বিএনপি।
এবারের নির্বাচনের আগেও তারা এমন একটি কৌশল নিয়ে বিদেশিদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের উন্নয়নসহযোগী বিভিন্ন দেশের কাছে বিএনপি মহাসচিব এ বিষয়ে চিঠি লেখেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া মার্কিন রাষ্ট্রদূত, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত, কানাডার হাই কমিশনার, জার্মান রাষ্ট্রদূতসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ে নেতিবাচক তথ্য দেয় দলটি।
তবে বিএনপি ও তার সহযোগীদের অভিযোগের পরও বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন বন্ধু রাষ্ট্র এখনও কোনও নেতিবাচক মন্তব্য করেনি। এতে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ভালো আছে, এমনটাই ইঙ্গিত করে বলে মত প্রকাশ করেছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা।
এদিকে নির্বাচন পরিস্থিতি এবং মানবাধিকার বিষয়ে খবর নিচ্ছে বাংলাদেশ সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রাক-নির্বাচনী অনুসন্ধানী দল।
সোমবার (১০ জুলাই) দুপুরে মানবাধিকার কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার আশঙ্কা আছে কি না জানতে চায় প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।
জবাবে মানবাধিকার কমিশন বলেছে, নির্বাচন পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালো। এ অবস্থায় আগামী নির্বাচনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন পর্যবেক্ষক পাঠাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
কমিশনের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত ধারণা আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইইউ পর্যবেক্ষক দল পাঠাতে পারে।’
নির্বাচনের সময় তেমন জটিলতা না হওয়ার কথা ইইউ প্রতিনিধিদলের কাছে তুলে ধরার কথা জানিয়ে কামাল উদ্দিন বলেন, ‘ওরা জিজ্ঞেস করেছে, আপনারা কোনো ইমপ্রুভমেন্ট দেখতে পাচ্ছেন কি না। জবাবে আমরা বলেছি, আমার মনে হয় এখন পর্যন্ত ইলেকশনগুলোতে ইমপ্রুভমেন্ট আছে। আর এ ছাড়া হরহামেশা আমাদেরতো স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলো হয়ে যাচ্ছে। বড় রক্তক্ষয় ছাড়াই ইলেকশনগুলো হচ্ছে। সে হিসাবে আমরা আশা করি, ইলেকশনের পরিবেশ এখনকার অবস্থা ভালোই।’
২০০১-র নির্বাচন পরবর্তী বিএনপির সহিংসতা
এ অবস্থায় ফেরা যাক ২২ বছর আগের এক নির্বাচন পরবর্তী সময়ে, চোখে ধরা দেয় ভয়াবহ তাণ্ডবলীলার নারকীয় চিত্র।
পূর্ণিমা রানী। ২০০১ এর জাতীয় নির্বাচনে কাজ করেছিলেন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট হিসেবে। সেই দায়ে নির্বাচন পরবর্তী সময়ে তার জীবনে নেমে আসে ঘোর অমানিশার নরক। বিএনপি কর্মীরা তাকে বাড়ি থেকে তুলে দলবদ্ধ ধর্ষণ করে। তবে স্রোতের বিপরীতে লড়াই করে ঘুরে দাঁড়িয়েছিলেন পূর্ণিমা। পড়াশোনা করে শক্তি সঞ্চয় করে দাঁড়িয়েছেন অসহায় মানুষের পাশে।
তবে সবাই কি আর উদাহরণযোগ্য হতে পারেন? পারেন না বলেই বাংলার বাতাসে কান পাতলে এখনও কানে আসে, দুই দশক আগের ভয়াবহ নির্যাতনের বোবাকান্না।
তথ্য বলছে, ২০০১ সালের নির্বাচনের পরে ১৮ হাজারের বেশি সহিংসতার ঘটনা ঘটে। হামলায় জড়িত ২৬ হাজার ৩৫২ জনের মধ্যে বিএনপির অনেক মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্য জড়িত ছিলেন।
বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সংখ্যালঘুরা
বিএনপির বিজয়ের পর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাতো হামলা নির্যাতনের শিকার হনই, তবে সবচেয়ে বেশি নিপীড়ন-নির্যাতন নেমে আসে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর। ধর্ষণ, বসতঘরে হামলা, ভাঙচুর, আগুন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল, ধ্বংস করা, দেশত্যাগে বাধ্য করাসহ নানা রকম জুলুম নির্যাতন হয় তাদের ওপর।
বিশেষ করে দেশের দক্ষিণ এবং পশ্চিমাঞ্চলে নির্যাতনের মাত্রা ছিল সবচেয়ে বেশি। ভোলা জেলার শুধু একটি উপজেলা চরফ্যাশনেই ৩০০ হিন্দু পরিবার হামলা নির্যাতনের শিকার হয়। বরিশালের স্বরূপকাঠি বানারিপাড়া উজিরপাড়া থেকে কয়েকশ’ হিন্দু পরিবার বসত বাড়ি ছেড়ে গোপালগঞ্জের রামশীলে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নেয়।
২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী বিএনপি নেতাকর্মীদের বর্বরতায় ক্ষতি হয়েছে নারীদের।
তবে নিজ নির্বাচনী এলাকার মানুষের এমন দুর্দশার পরও উদ্বেগহীন ছিলেন বিএনপির তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী। বরং সেই এলাকার ওপর দিয়ে হেলিকপ্টারে উড়ে এসে তিনি গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, ‘কোনো নির্যাতনের ঘটনা ঘটেনি।’
২০০২ সালেও চলে বিএনপির বর্বরতা
শুধু ২০০১ নয়, পরের বছর ২০০২ সালেও অব্যাহত ছিল বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের ধর্ষণ, নিপীড়ন, নির্যাতন। ২০০১ সালে বিএনপি নেতাকর্মীদের হাতে ধর্ষণের শিকার হন ৫৬৬ জন। ২০০২ সালে এই সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৯১।
এসব ঘটনার তদন্তে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার সাবেক জেলা জজ মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিশন গঠন করে। এই কমিটি ২০১১ সালের ২৪ এপিল ৫ খণ্ডে ১ হাজার ১০০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন জমা দেয় সরকারের কাছে।
কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় ঢাকায় ২৭৬টি, চট্টগ্রামে ৪৯৭টি, সিলেটে ১৭টি, খুলনায় ৪৭৮টি, রাজশাহীতে ১৭০টি এবং বৃহত্তর বরিশালে সবচেয়ে বেশি ২ হাজার ২২৭টি ঘটনার প্রমাণ মেলে।
এরমধ্যে ঢাকায়, ৯২টি হত্যা, ১৮৪টি ধর্ষণ এবং দলবদ্ধ ধর্ষণ, আগুন দেয়া ও অন্যান্য অপরাধ সংঘটিত হয়। চট্টগ্রামে হত্যা করা হয় ৯৭জনকে। অন্যান্য গুরুতর অপরাধ হয় ৩৫০টি। রাজশাহীতে ৫০টি হত্যাকাণ্ড এবং ১১৭টি গুরুতর অপরাধ হয়। খুলনাতে ৭৩জনকে হত্যা এবং ৪০৫টি গুরুতর অপরাধ হয়।
তথ্য বলছে, বাংলাদেশের ইতিহাসে নির্বাচনের পরে সবচেয়ে কম সহিংসতা হয়েছে ২০০৮ এর ভোটের পর।
২০১৩ সালে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস ও সহিংসতা
মুক্তিযুদ্ধের সময়ে গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দেশের অভ্যন্তরে ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। ২০১৩ সালে মানবতাবিরোধী বিচার বন্ধে বিএনপির সমর্থন নিয়ে জামায়াত-শিবির দেশব্যাপী তাণ্ডব চালায়। ওই সময় সহিংসতার ৪১৯টি ঘটনা ঘটে।
২০০১ নির্বাচনের পর বিএনপির যত অপকর্ম
গণমাধ্যমের হিসাব মতে, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার পরবর্তী দুদিনেই জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষে প্রায় ৫০ জন প্রাণ হারান। এদের মধ্যে কয়েকজন পুলিশ সদস্যও রয়েছেন।
দশম জাতীয় নির্বাচনে তাণ্ডব
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের বিরোধিতা করে বিএনপি-জামায়াত জোট দেশব্যাপী ভয়ংকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। সে সময় বিএনপি-জামায়াতের কর্মীরা শত শত যানবাহন ভাঙচুরের পাশাপাশি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায়।
গণমাধ্যমের তথ্যমতে, ওই ঘটনায় পেট্রোল বোমা, হাতে বানানো বোমা এবং অন্যান্য সহিংসতায় কয়েকশ’ মানুষ প্রাণ হারান। সহিংসতার সময় রাস্তার পাশে থাকা হাজার হাজার গাছ কেটে ফেলে জামায়াত-শিবির কর্মীরা। এছাড়া ছোট দোকান, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতেও আগুন দেয়া হয়।
সহিংসতার কারণে নির্বাচনের দিন প্রিসাইডিং অফিসারসহ বেশ কয়েকজন প্রাণ হারান। সারা দেশে ৫৮২টি স্কুলের ভোটকেন্দ্রে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
নির্বাচন ঘিরে শতাধিক প্রাণহানি
২০১৫ সালের ৪ জানুয়ারি নির্বাচনের এক বছর পূর্তির দিন আবারও জ্বালাও-পোড়াও শুরু করে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে বিএনপি-জামায়াত জোট, ঘটে প্রাণহানি। এদের বেশিরভাগই পেট্রোল বোমা এবং আগুনে দগ্ধ হয়ে প্রাণ হারান। ওই ঘটনায় আহত হন সহস্রাধিক। গণমাধ্যমের তথ্যমতে, সে সময় ২ হাজার ৯০৩টি গাড়ি, ১৮টি রেলগাড়ি এবং ৮টি যাত্রীবাহী জাহাজে অগ্নিসংযোগ করা হয়। হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয় সরকারি নানা দফতর।
পরবর্তীতে ২০১৬ সালে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি-জামায়াতের তাণ্ডবের বিভিন্ন পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা এবং বিএনপি নেত্রীর আদালতে হাজিরায় অনুপস্থিত থাকার উদ্দেশ্যে বিএনপি-জামায়াত অনির্দিষ্টকালের অবরোধ শুরু করে সারা দেশে তাণ্ডব ও হত্যাযজ্ঞ শুরু করে।
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, পেট্রোলবোমায় ২৩১ জন নিরীহ মানুষ প্রাণ হারান এবং ১ হাজার ১৮০ জন আহত হন। ২ হাজার ৯০৩টি গাড়ি, ১৮টি রেলগাড়ি ও ৮টি লঞ্চে আগুন দেয়া হয়। পরিকল্পিতভাবে টার্গেট করে ৭০টি সরকারি অফিস ও স্থাপনা ভাঙচুর এবং ৬টি ভূমি অফিস পুড়িয়ে দেয়া হয়।
আবারও আক্রান্ত সংখ্যালঘুরা
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে পুলিশের জমা দেয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াত দেশের ২১ জেলায় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চালায়। আর ওই সময় মোট ১৬০টি হামলা ও অত্যাচারের ঘটনার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
২০১৪ সালের ১৫ জানুয়ারি হাইকোর্ট বিভাগ একটি সুয়োমোটো রুল জারি করেন, যার মধ্যে বিভিন্ন পুলিশ রেঞ্জের কর্মকর্তারা অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসের মাধ্যমে প্রতিবেদন জমা দেন। সেখানে দিনাজপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা, শেরপুর, টাঙ্গাইল, কুমিল্লা, চাঁদপুর, বাগেরহাট, যশোর, নড়াইল, রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর, জয়পুরহাট, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, রংপুর, গাইবান্ধা নীলফামারী ও ঠাকুরগাঁও জেলায় হিন্দুদের ওপর হামলার ঘটনা উঠে আসে।
মায়ের ডাকের ব্যানারে বিএনপির রাজনীতি
এদিকে বিভিন্ন সময় গুম-খুনের শিকার পরিবারগুলোর সহানুভূতি ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারকে উৎখাতে কাজ করছে বিএনপি। এ ধারাবাহিকতায় ‘মায়ের ডাক’ প্রতিষ্ঠা করা হয় বলে জানিয়েছে ইন্ডিয়া টুডে। একটি প্রতিবেদনে সংগঠনটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকটি পরিবারের বরাত দিয়ে এমনটাই জানানো হয়েছে।
পরিবারগুলোর অভিযোগ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির পক্ষে পশ্চিমা দেশগুলোর সমর্থন যোগাতে নিখোঁজদের স্বজনদের আবেগকে পুঁজি করছে ‘মায়ের ডাক’।
জানা যায়, মায়ের ডাক আর্জেন্টিনার মাদার্স অব দ্য মায়ো’র আদলে প্রতিষ্ঠিত, যা আর্জেন্টিনার মায়েদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যাদের সন্তান ১৯৭৬ এবং ১৯৮৩ সালের মধ্যে সামরিক স্বৈরশাসনের সময় রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদীদের হাতে ‘নিখোঁজ’ হয়েছিল।
বর্তমানে এ সংগঠনটি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার উৎখাতে ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে বিরোধীদের সমাবেশে নিয়ে আসছে।
২০১৩-১৪ সালে বিএনপি-জামায়াতের তাণ্ডব থেকে বাঁচেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
ইন্ডিয়া টুডেকে নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনরা অভিযোগ করেছেন, আবেগকে পুঁজি করে সংগঠনটি সরকার পরিবর্তনের এজেন্ডা বাস্তয়াবয়নে কাজ করছে, যা তাদের কর্মকাণ্ড দেখলেই স্পষ্ট।
দেশের বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মীদের মতে, একটি গুমের ঘটনাও দুঃখজনক। তবে অনেক সময় দেখা যায় বিভিন্ন কারণে কেউ আত্মগোপন করে থাকেন। যারা পরে আবার ফিরে আসছেন। অনেক সময় এসব ঘটনাকে বিরোধীরা সরকারবিরোধী প্রচারণায় ব্যবহার করছে।
বাংলাদেশে জোরপূর্বক গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তৈরি মায়ের ডাক প্ল্যাটফর্মের প্রতিষ্ঠাতা হাজেরা খাতুন। তার ছেলে সাজেদুল ইসলাম সুমন ঢাকার একজন সুপরিচিত বিএনপি নেতা ছিলেন। তিনি ২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর নিখোঁজ হন। সুমনের বোন সানজিদা ইসলাম এই প্ল্যাটফর্মের সমন্বয়ক। মায়ের ডাক ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন প্রায় ভুক্তভোগী ৮০টি পরিবার এ সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হলেও বর্তমানে মাত্র ১৯টি পরিবার এ সংগঠনের ব্যানারে রয়েছে। জনসাধারণের নজরে আনতে বাংলাদেশের বিরোধী দলের সমাবেশগুলোতে প্রায়ই তাদের সামনে রাখা হয়।
রাষ্ট্রদূতদের বক্তব্য নিয়ে বিএনপির মিথ্যাচার
তবে এতসব চেষ্টার পরেও বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন নয় বন্ধু রাষ্ট্রগুলো। উল্টো রাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধিদের বক্তব্যকে ভুলভাবে গণমাধ্যমে তুলে দরে মিথ্যাচার করছে বিএনপি।
সম্প্রতি জার্মানি বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন বলে গণমাধ্যমকে জানায় বিএনপি। তবে দলটির এমন বক্তব্যে অসন্তোষ জানায় ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত আখিম ট্র্যোস্টার।
দলটির পক্ষ থেকে এমন বক্তব্য দেয়ার এক মাস পর তিনি বলেন, ‘বিএনপি নেতাদের উদ্ধৃতি বাস্তবতার সঙ্গে মেলে না।’
ডিপ্লোমেটিক করেসপন্ডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে জার্মান রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘এটাতে আমি কিছুটা অসন্তুষ্ট হয়েছি। আমার কর্তৃত্বের মধ্যে যা আছে, সে সম্পর্কে ব্যক্তিগতভাবে বলি আমি। এই উদ্ধৃতি নিয়ে আমি অসন্তুষ্ট ছিলাম।
আমি যে উদ্ধৃতি করেছি, তা বাস্তবতার সঙ্গে মেলে না। যেখানে বলা হয়েছে, আমি মানবাধিকার পরিস্থিতি ও গণতন্ত্র নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছি, এমন শব্দচয়ন সত্য নয়।’