স্পোর্টস ডেস্ক:
সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে শরিফুল ইসলামের গতি আর সুইংয়ে শুরুতেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে আফগানিস্তান। এরপর তাসকিন আহমেদ, সাকিব আল হাসান ও তাইজুল ইসলামদের আঘাতে ১০০ রান করাও দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল সফরকারীদের। কিন্তু সপ্তম উইকেটে নামা আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের ব্যাটে ভর করে সম্মানজনক সংগ্রহই পেল সফরকারীরা।
মঙ্গলবার ( ১১ জুলাই) চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে প্রথম ব্যাট করে ৪৫.২ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ১২৬ রান সংগ্রহ করেছে মুজিব-নবিরা। ওমরজাই ৭১ বলে ক্যারিয়ার সেরা ৫৬ রানের ইনিংস খেলে মাঠ ছাড়েন। আগের দুই ম্যাচ হেরে সিরিজ খোঁয়ানো বাংলাদেশের হোয়াইটওয়াশের লজ্জা এড়াতে প্রয়োজন মাত্র ১২৭ রান।
বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডেতে এটিই আফগানদের সর্বনিম্ন সংগ্রহ। এর আগে টাইগারদের বিপক্ষে তাদের সর্বনিম্ন স্কোর ছিল ১৩৮ রান। ২০১৬ সালে মিরপুরে অনুষ্ঠিত ওই ম্যাচে অবশ্য দ্বিতীয় ইনিংসে তারা এত কম রানে গুটিয়ে গিয়েছিল। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে তাদের সর্বনিম্ন সংগ্রহ ছিল ২১৫ রান। চট্টগ্রামে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ওই ম্যাচে ৪ উইকেটের জয় পেয়েছিল লাল সবুজের প্রতিনিধিরা।
তবে মঙ্গলবার টাইগারদের সামনে সুযোগ ছিল ১০০ রানের আগেই আফগানদের গুটিয়ে ফেলার। এদিন শরিফুল ইসলামের বোলিং তোপে মাত্র ৩২ রান তুলতেই ৫ উইকেট হারিয়েছিল সফরকারীরা। আর ৮৯ রানের মধ্যে ৮ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল তারা। কিন্তু ওমরজাইয়ের বিরোচিত ব্যাটিংয়ে শেষ পর্যন্ত সম্মানজনক স্কোর দাঁড় করায় আফগানরা।
আগের দুই ম্যাচে বেঞ্চে থাকা শরিফুল এদিন সুযোগ পেয়ে ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই দলকে জোড়া সাফল্য এনে দেন। প্রথম বলেই তিনি তুলে নেন ইব্রাহিম জাদরানের উইকেট। টাইগার পেসারের অফ স্টাম্পের বাইরের বল খোঁচা দিয়ে উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ তুলে দেন ইব্রাহিম। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান এদিন ৬ বলে মাত্র ১ রান করে সাজঘরের পথ ধরেন। ৩ বল ডট দেয়ার পর ওভারের পঞ্চম বলে তিনি ফেরান ক্রিজে নামা রহমত শাহকে। রানের খাতা খোলার আগে এই ব্যাটার ক্যাচ তুলে দেন মুশফিকুর রহিমের হাতে।
পরপর দুই উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়া আফগানদের ষষ্ঠ ওভারে এসে আরও চাপে ফেলেন তাসকিন। তার করা শর্ট ডেলিভারিতে পুল করতে চেয়েছিলেন রহমানউল্লাহ গুরবাজ। কিন্তু ব্যাটে-বলে ঠিকভাবে সংযোগ করতে পারেননি। বল চলে যায় উইকেটের পেছনে। অনেকটা লাফিয়ে উঠে দুর্দান্ত এক ক্যাচ নেন মুশফিক। আগের ম্যাচে ১৪৫ রান করা এ ব্যাটার এদিন ২২ বলে করেন মাত্র ৬ রান। গুরবাজের পর সাজঘরের পথ ধরেন মোহাম্মদ নবিও। আবারও টাইগারদের নায়ক শরিফুল। নবম ওভারে করা তার দ্বিতীয় বলটিতে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন নবি। জোরালো আবেদন সাড়া দেন আম্পায়ার। রিভিউ নিয়েও উইকেট বাঁচাতে পারেনি সফরকারীরা।
বিপর্যয় কাটিয়ে পঞ্চম উইকেটে দলের হাল ধরার চেষ্টা করেন অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ ও নাজিবুল্লাহ জাদরান। তবে সাকিব আল হাসানের ঘূর্ণিতে তাদের জুটি ১৭ রানেই থামে। দলীয় ৩২ রানে পঞ্চম উইকেট হারায় সফরকারীরা। ২২ বলে ১০ রান করা নাজিবুল্লাহকে এলবিডব্লিউ করে সাজঘরে ফেরান টাইগার অলরাউন্ডার।
ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে ওমরজাইকে নিয়ে হাত খুলে খেলার চেষ্টা করেন হাশমতউল্লাহ। আফগান অধিনায়ক ৩টি বাউন্ডারিও হাঁকান। কিন্তু অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসে ২২তম ওভারের তৃতীয় ওভারে তাইজুল ইসলামকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনেন হাশমতউল্লাহ। দলীয় ৫৩ রানে ৬ উইকেট হারায় আফগানরা। সপ্তম উইকেটে দলের খাতায় ১৫ রান যোগ করে ডিপ ফাইন লেগে তাইজুলের কাছে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন আব্দুল রহমান। এবারও শিকারি শরিফুল। এ নিয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে তৃতীয়বারের মতো চতুর্থ উইকেটের দেখা পান এ বোলার।
অষ্টম উইকেটে ওমরজাই ও জিয়াউর রেহমান মিলে টাইগার বোলারদের ধৈর্য্য পরীক্ষা নেন। দুজন মিলে ৫২ বল মোকাবিলা করে তুলে নেন ২০ রান। শেষমেশ তাইজুলের ঘূর্ণিতে পরাস্ত হন জিয়াউর। অষ্টম উইকেটের দেখা পায় বাংলাদেশ। কিন্তু এরপর মুজিব উর রহমানকে নিয়ে আবারো প্রতিরোধ গড়ে তোলে সফরকারীরা। তাদের দুজনের ৩৬ রানের জুটিতে শতরান পেরিয়ে সম্মানজনক পুঁজি পায় আফগানিস্তান। ওমরজাইও ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটির দেখা পান। দুজনের জুটিতে শেষ পর্যন্ত বাধা হয়ে দাঁড়ান মেহেদী হাসান মিরাজ। ৩৪ বলে ১১ রান করে ফেরেন মুজিব। তার বিদায়ের পর ক্রিজে আর থাকতে পারেননি ওমরজাইও। ৭১ বলে ৩ ছক্কা ও ১ চারে ৫৬ রান করে তিনি শিকার হন তাসকিনের।
টাইগার বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল শরিফুল ২১ রান খরচায় ১ মেডেনের পাশাপাশি তুলে নেন সর্বোচ্চ ৪ উইকেট। তাসকিন ও তাইজুল পকেটে পুরেন ২টি করে উইকেট।