হোম আন্তর্জাতিক সিএনএন’র সাক্ষাৎকারে ভারতে সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য ওবামার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

ভারতে সংখ্যালঘু অধিকার রক্ষা নিয়ে একটি বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। বলেছেন, সংখ্যালঘু মুসলিমদের সম্মান না করা হয়, ভারত ‘ভেঙে টুকরো টুকরো’ হয়ে যেতে পারে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সংখ্যালঘু অধিকারের বিষয়টি আলোচনার আহ্বানও জানান তিনি। খবর এনডিটিভির।

প্রতিবেদন মতে, মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফরের মধ্যে বৃহস্পতিবার (২২ জুন) মার্কিন সংবামাধ্যম সিএনএনকে সাক্ষাৎকার দেন ওবামা। এতে বৈশ্বিক গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও ইউক্রেন যুদ্ধসহ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে কথা বলেন তিনি।

ভারতের সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি মোদিকে চিনি। আমি যদি এই পরিস্থিতিতে তার সঙ্গে দেখা করতাম, তাহলে আমি তাকে বলতাম, আপনি যদি সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষা না করেন, তাহলে ভারতের টুকরো টুকরে হয়ে যেতে পারে।’

বাইডেনের সঙ্গে মোদির বৈঠক নিয়ে ওবামা বলেন, যদি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বৈঠকে বসেন, তাহলে ভারতের মুসলিম সংখ্যালঘুদের অবস্থানের বিষয়টি তার উত্থাপন করা উচিত। এনডিটিভি জানায়, ওবামার ওই মন্তব্যের কয়েক ঘণ্টা পরই প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন।

সম্মেলনে ভারতের নাগরিক অধিকার সুরক্ষার প্রশংসা করে তিনি বলেন, রাষ্ট্রের প্রত্যেক নাগরিকের মর্যাদায় বিশ্বাস করা ভারতের ডিএনএ-এর মধ্যেই রয়েছে। তার কথায় ‘আমরা প্রতিটি নাগরিকের মর্যাদায় বিশ্বাস করি। এটা আমেরিকার ডিএনএতেই রয়েছে এবং বিশ্বাস করি, ভারতেও সব নাগরিকের সমান মর্যাদা রয়েছে।’

হোয়াইট হাউজের যৌথ সম্মেলনেও ভারতের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার-নিপীড়ন ও বৈষম্য নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েন মোদি। তবে মুসলিম সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের বৈষম্যের বিষয়টি নাকচ করে দেন তিনি। বলেন, ‘ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ নির্বিশেষে ভারতে বৈষম্যের কোনো জায়গা নেই।’

ওবামা ২০০৯ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ৪৪তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ওবামার সময়কাল থেকেই একটু একটু করে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করে ভারত। সেই সময় ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন জো বাইডেন।

২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হন তিনি। তার আমন্ত্রণেই যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম রাষ্ট্রীয় সফরে যান মোদি। সেই সফরের মাঝেই ভারতে সংখ্যালঘু অধিকার নিয়ে কথা বললেন ওবামা।

এর আগে মোদির মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে চিঠি লিখেছিলেন ৭৫ জন মার্কিন আইনপ্রণেতা। মার্কিন কংগ্রেসের সিনেট ও হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের এই আইনপ্রণেতারা সবাই ডেমোক্র্যাট দলীয়। ওই চিঠিতে তারা মোদির কাছে ভারতে মানবাধিকারের বিষয়গুলো উত্থাপনের আহ্বান জানান।

সিএনএনের আন্তর্জাতিক বিষয়ক প্রধান উপস্থাপক ক্রিশ্চিয়ান আমানপোরকে দেয়া ‘গণতন্ত্র কি জিতবে’- শীর্ষক ওই সাক্ষাৎকারে ওবামা বৈশ্বিক গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি নিয়েও কথা বলেন।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বজুড়ে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রমেই দুর্বল হচ্ছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, বিশ্বে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য শক্তিশালী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে বড় বাধা হয়ে দেখা দিতে পারে। লড়াই অব্যাহত রাখলে গণতন্ত্রের বিজয় হতে পারে।’

সাক্ষাৎকারে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ওবামা বলেন, ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় পশ্চিমা বিশ্ব যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, তা দীর্ঘমেয়াদে গণতন্ত্র রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ওবামা বলেন, কিছু নিদর্শন থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, গণতান্ত্রিক নীতিগুলোর ক্ষয় হচ্ছে।

এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে নিজের কিছু অভিজ্ঞতার কথাও সাক্ষাৎকারে তুলে ধরেন ওবামা। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে কোনো স্বৈরশাসক বা অন্যান্য গণতন্ত্রবিরোধী নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার ঘটনাগুলো বেশ বিব্রতকর ও কর্মজীবনের অন্যতম জটিল অংশ। ওবামা আরও বলেন, হোয়াইট হাউজে থাকাকালীন তাকে এমন অনেক কিছু সামলাতে হয়েছে যার সঙ্গে তিনি একমত ছিলেন না।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন