জাতীয় ডেস্ক:
জামালপুরের বকশীগঞ্জে সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম হত্যাকাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদুল আলম বাবু কোথায়, এমন প্রশ্ন জেলাজুড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্যমতে, বুধবার (১৪ জুন) রাতে বকশীগঞ্জে সাংবাদিক নাদিমের ওপর হামলার সময় চেয়ারম্যান বাবু ও তার ছেলে আবদুল্লাহ রিফাত নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ঘটনার পর থেকেই তারা আত্মগোপনে চলে যান। তাদের ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারটিও বৃহস্পতিবার থেকে বন্ধ রয়েছে। তিনি কোথায় আছেন কেউ জানেন না।
বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেল রানা বলেছেন, বকশীগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অভিযান চালিয়েও তাকে আটক করা যাচ্ছে না। তিনি ও তার ছেলে পলাতক রয়েছেন।
এদিকে বকশীগঞ্জ থানা পুলিশসহ পাঁচটি টিম তাকে আটক করতে মাঠে নেমেছে। অনেকের ধারণা, তাহলে কি ভারতীয় কাঁটা তারের বেড়া ডিঙিয়ে ওপারে চলে গেছেন। এমনটাই মনে করছেন, বকশীগঞ্জের সচেতন মহল। তার বাড়িতেও কেউ নেই। বাড়িঘরে তালা লাগিয়ে সবাই সটকে পড়েছেন।
এলাকাবাসীরা বলেছেন, বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকেই বাবু চেয়ারম্যান বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। তারপরে আর বাড়িতে আসেননি। বাসায় স্ত্রী সন্তানরাও নেই। মনে হয় তিনি পরিবার নিয়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন। পরিবারের সবার ফোন বন্ধ রাখা হয়েছে। গ্রামের অনেকে সন্দেহ করছেন, তারা ভারতে চলে গেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক এলাকাবাসী জানান, পুলিশের সাবেক এক কর্মকর্তার আত্মীয় পরিচয় দিয়ে মাহমুদুল আলম বাবু শুধু এলাকায় নয়, পুরো বকশীগঞ্জ প্রভাব বিস্তার করে কোটি কোটি টাকা বানিয়েছেন। পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) মুখলেছুর রহমান পান্নার ভাই হিসেবে পুলিশ বিভাগে তার ব্যাপক পরিচিতি হয়। এরপর থেকে তাকে আর পিছনে তাকাতে হয়নি। গত কয়েক বছরে তিনি কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যান। এরপর জেলাজুড়ে তার নাম ছড়িয়ে পড়ে। এরপর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ইউনিয়ন পরিষদের দুইবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি গোপনে আরেকটি বিয়ে করেন। ওই ঘরে একটি মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়। ছোট স্ত্রীর দাবি নিয়ে তার বাড়িতে উঠলে তাকে তালাক দেয়া হয়। এ ঘটনায় দ্বিতীয় স্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করলে সেই সংবাদ প্রকাশের জের ধরে নাদিম হামলার শিকার হন।
সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম অনলাইন পোর্টাল বাংলা নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম ও একাত্তর টিভির জামালপুর জেলার প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বুধবার রাত ১০টার দিকে জামালপুরের বকশীগঞ্জের পাটহাটি মোড়ে মোটরসাইকেল থামিয়ে কিল ঘুষি মারা হয় সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিমকে। এ সময় তাকে টেনে হিঁচড়ে রাস্তার অপর প্রান্তে নিয়ে ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করে পালিয়ে যায় অপরাধীরা। সাধুরপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর নেতৃত্বে তার ছেলেসহ কয়েকজন এ হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয় বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।