নিজস্ব প্রতিনিধি :
বঙ্গবাজারের ভয়াবহ আগুনে বড় ধরনের ক্ষতির শিকার হয়েছেন কয়েক হাজার ব্যবসায়ী। এই আগুনের ক্ষত না শুকাতেই ভয়াবহ আগুনে পুড়েছে রাজধানীর নিউ সুপার মার্কেট। কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে এসব অগ্নিকাণ্ড মানুষের মনে জন্ম দিয়েছে নানা প্রশ্নের।
সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদের আগে জমে ওঠা বাজারে আগুনের ঘটনায় ক্ষতির পরিমাণ কত, তার চেয়ে বড় বিষয় হলো কয়েক হাজার ব্যবসায়ী-কর্মী পথে বসে গেছেন। এছাড়া মহাখালী সাত তলা বস্তি এবং নবাবপুরের গোডাউনে লাগা আগুনেও নিঃস্ব হয়েছেন আরও বহু মানুষ।
সবার মুখে একটাই কথা- এসব কী নিছকই দুর্ঘটনা, নাকি বড় কোনও কু-পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পুড়ছে মানুষের স্বপ্ন-আশা।
শনিবার (১৫ এপ্রিল) ভোর ৫টার কিছু পর আগুন লাগে নিউ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায়। মার্কেটটিতে বিক্রি হওয়া মূল পণ্য হলো কাপড়। আর দাহ্য এই বস্তুর আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে মার্কেটের দ্বিতীয় তলায়।
আগুনের ঘটনায় অরক্ষিত বৈদ্যুতিক লাইন এবং অধিক লোডের কথা বলছেন ব্যবসায়ীরা। এসবের সঠিক দেখভাল না হওয়ায় মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির প্রতি অভিযোগ তুলেছেন তারা। এছাড়া মার্কেটে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা না থাকার কারণেও আগুন সহজে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
অগ্নিকাণ্ডের কারণ বিষয়ে কিছু না বললেও আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে জানিয়েছেন নিউমার্কেট দোকান মালিক সমিতির সভাপতি ডা. দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহীন। তিনি বলেন, ‘যে মার্কেটের তিনতলায় আগুন লেগেছে সেটি সেন্ট্রালি এসি করা। এতে ডার্ক সিস্টেম করে জিপসাম বোর্ড দিতে হয়েছে। আমার ধারণা, আগুন যেখানেই লাগুক না কেন, জিপসাম বোর্ডের কারণে দ্রুত তা পুরো মার্কেটে ছড়িয়ে পড়েছে।’
এদিকে নিউমার্কেটের সামনের ফুটওভারব্রিজ ভাঙার সময় আগুনের সূত্রপাত হয় বলে অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ী ও তাদের স্বজনরা।
নিউ সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী হিরু ব্যাপারীর বোন নূপুর অভিযোগ করেন, ‘নিউ সুপার মার্কেটের সামনের ব্রিজ ভাঙতে আসে মধ্যরাতে। সেখান থেকেই এ আগুনের সৃষ্টি হয়।’
এদিকে বঙ্গবাজার এবং নিউমাকের্ট ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সম্পত্তি। বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ডের পর ডিএসসিসি এক তদন্ত কমিটি গঠন করে। ওই কমিটির প্রতিবেদনে জানানো হয়, সিগারেট বা মশার কয়েল থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়।
এ কারণে কাপড়সহ দাহ্য বস্তুর বিভিন্ন দোকান ও প্রতিষ্ঠানগুলোতে আরও বেশি সচেতন হওয়া দরকার। এছাড়া নিউ সুপার মার্কেট ও বঙ্গবাজারকে অনেক আগেই ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছিল ডিএসসিসি।
শনিবার নিউ সুপার মার্কেটের আগুন নিয়ন্ত্রণের পর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রি. জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন তাৎক্ষণিক এক ব্রিফিংয়ে পর পর সংঘটিত ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
তিনি বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নাশকতা কি-না তা তদন্ত করে দেখা প্রয়োজন। এ জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি খতিয়ে দেখার আহ্বান জানাচ্ছি।’
অগ্নিকাণ্ডের পর নিউমার্কেট এলাকা পরিদর্শন করেছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক। উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ঢাকা শহরে পর পর কয়েকটি বড় অগ্নিকাণ্ডের পেছনে কোনো নাশকতা আছে কি-না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন মার্কেটে আগুনের ঘটনা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, ‘এসব ঘটনার পেছনে কোনও নাশকতা আছে কি-না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
এদিকে রাজধানীর বড় বড় মার্কেট এবং প্রতিষ্ঠানে আগুনের ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (১৫ এপ্রিল) গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ড সভার সূচনা বক্তব্যে তিনি বিভিন্ন মার্কেটে আগুনের ঘটনা ষড়যন্ত্র বা নাশকতা কি-না তা খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘দেশব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ মার্কেটগুলোতে নজরদারি বাড়াতে হবে। অগ্নিকাণ্ডের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাসের বিষয়টি জড়িত আছে কি-না তাও তদন্ত করে দেখতে হবে।’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, তারা অগ্নিকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটিয়ে ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করছে কি-না তা খতিয়ে দেখতে হবে। সবাইকে আরও বেশি সচেতন থাকতে হবে। সবাইকে নিজস্ব উদ্যোগে পাহারার ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে সব প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলেও আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী।
এছাড়া ফায়ার সার্ভিসের আগুন নেভানোর সময় অযথা ভিড় না করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আগুন নেভানোর কাজে কোনো বাধা এলে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।