অনলাইন ডেস্ক :
এএক ভিন্ন আবহ। অন্যরকম বঙ্গবাজার। যে দৃশ্য আগে কেউ কখনও দেখেননি বঙ্গবাজারে। এ যেন পুড়ে যাওয়া বঙ্গবাজারের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টার প্রতিচ্ছবি। সারি সারি চৌকি পাতানো। চৌকির ওপর রাখা সামান্য কাপড়চোপড়।
এসব কাপড় রেখে দোকানীরা আজ মূলত জায়গা দখল করেছেন। ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা, আগামীকাল থেকে ক্রেতারা বঙ্গবাজারের যাবেন। ঈদের পোশাক কিনবেন। আর এতে ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার চেষ্টা করবেন বিক্রেতারা।
গত ৪ এপ্রিল ভয়াবহ আগুনে ভস্মীভূত হয় রাজধানীর বঙ্গবাজারের কাপড়ের মার্কেট। জানা গেছে, আগুনে এখানকার ৩ হাজার ৮৪৫টি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ঘটনার ৯ দিনের মাথায় আবার শুরু হলো কাপড় কেনাবেচা। এবার চৌকি পেতে তার ওপর বিকিকিনি শুরু হয়েছে। তবে, চৈত্রের তীব্র গরমে খোলা আকাশের নিচে চৌকি পেতে বসতে কষ্ট হওয়ার কথা জানান ব্যবসায়ীরা।
মূলত আজ বুধবার (১২ এপ্রিল) সকাল থেকে ব্যবসায়ীরা চৌকি সাজাতে শুরু করেন। দুপুরে তা আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। সে সময় তিনি বলেন, ‘এখানে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হবে, ওপরে ছাউনিও দেওয়া হবে। আগুন লাগার পর সারা দেশের মানুষ, প্রবাসীরাসহ সবাই যেভাবে এগিয়ে এসেছেন এটাই বাঙালির শক্তি।’
সকাল থেকে ইট-বালু ফেলে বঙ্গবাজারের জায়গা প্রস্তুত করা হয়। তারপর ব্যবসায়ীরা চৌকি নিয়ে এসে বসেন। ঠিক যে স্থানটিতে তাদের দোকান ছিল, সেখানেই চৌকি রেখেছেন। অর্থাৎ, যে ব্যবসায়ীর যেখানে দোকান ছিল, সেখানেই চৌকি রাখা হয়েছে। ঠিক ৮ দিন আগে বঙ্গবাজারের দৃশ্য আর আজকের দৃশ্যের মধ্যে যেন আকাশ-পাতাল ফারাক। অন্যদিকে আজ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার কারণে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত মালিক সমিতির ভবনটিও ভেঙে ফেলা হয়।
মনির হোসেন খান একজন দোকানী। তিনি চৌকিতে মাত্র কয়েকটি কাপড় সাজিয়ে রেখেছেন। মূলত দোকান দখল করেছেন। তার মাহাজনের নাম সাদ্দাম খান। সাদ্দামের ৭টি দোকান ছিল। এ বাজারে থাকা অধিকাংশ দোকানীর সব কাপড়চোপড় পুড়ে গেলেও সাদ্দামের কাপড় পুড়তে পারেনি। কারণ, তিনি ও তাঁর সহকর্মীরা কাছাকাছি থাকায় আগেই কাপড় সরিয়ে ফেলতে পেরেছিলেন।
মনির খান বলছিলেন, ‘আমার মালিকের সাতটি দোকান ছিল। সাতটি দোকানের অধিকাংশ মালই আমরা সরিয়ে ফেলতে পেরেছিলাম। কিন্তু, যারা দূরে থাকেন, তারা কেউ কাপড় সরাতে পারেননি। কাছাকাছি থাকি আমরা, সেজন্য এটা সম্ভব হয়েছিল। এখন আবার চৌকিতে বসেছি। কাল থেকে হয়তো বেচাকেনা শুরু হবে।’
মো. হাতেম। তিনিও চৌকিতে বসেছেন। দুপুরে এক পিস শাড়ি বিক্রি করেছেন ৫৫০ টাকায়। বলছিলেন, ‘আজ চৌকি ধরলাম। কাল থেকে ভালোভাবে বিক্রি শুরু হলেই হয়। এবার ঈদ খুব খারাপ কাটবে। ছেলে-মেয়ের জন্য এখনও কাপড় কিনতে পারেনি। কি যে করব, বুঝতে পারছি না।’
আরেকজন ব্যবসায়ীর নাম মিন্টু শেখ। তার দুটি দোকান ছিল। সেখানে ১৮ লাখ টাকার গেঞ্জি আর ট্রাইজার ছিল। আগুন লাগার দিন তিনি কিছুই বের করতে পারেননি। সব পুড়ে গেছে। আজ বসেছেন চৌকি নিয়ে। কথা প্রসঙ্গে বলছিলেন, ‘প্রচণ্ড গরম। রোজা রেখে বসতে কষ্ট হচ্ছে। ওপরে ছাউনি না দিলে এখানে বসা যাবে না।’
আরমান ফ্যাশনের মালিক জসিমউদ্দীন। তাঁর চারটি দোকান ছিল। আগুন লাগার সময় তড়িঘড়ি দোকান থেকে ১০ বস্তা কাপড় বের করে রাস্তায় রেখেছিলেন। আরও বের করছিলেন। বের করতে করতে গিয়ে দেখেন, রাস্তায় থাকা সব কাপড়ে আগুন ধরে গেছে।
নামজুল হোসেন নামের এক বিক্রেতা বলেন, ‘সব শেষ হয়ে গেছে। এখন গুছিয়ে ওঠার চেষ্টা করতে হবে। আমার একটি দোকান ছিল। সব মাল পুড়ে গেছে। আজ মূলত জায়গা দখল করেছি। কাল সকাল থেকে হয়তো বিক্রি শুরু হবে।’