শ্যামনগর প্রতিনিধি :
হাত বেঁধে রাতভর মশা দিয়ে খাওয়ানোর অভিযোগ
শ্যামনগর উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের নাসরীন পারভীন (১৭) নামের এক বালিকা বধুর চুল কেটে দেয়াসহ তার উপর অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। ভিন্ন নারীর সাথে সম্পর্ক স্থাপনের ঘটনায় প্রতিবাদ করার জেরে স্বামী রাশিদুল ইসলাম নিজ বাড়িতে আটকে রেখে দু’দিন ধরে নাসরীনের উপর ঐ নির্যাতন চালায় বলে অভিযোগ।
স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে ভুক্তোভোগী বালিকা বধুর মা নারগিছ পারভীন শনিবার বিকালে স্বজনদের নিয়ে রঘুনাথপুর গ্রামের রাশিদুলের বাড়ি থেকে নাসরীনকে উদ্ধার করে। রোববার সকালে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পর চিকিৎসকরা নাসরীনকে ভর্তি করে চিকিৎসার পরার্মশ দিয়েছেন।
নাসরীন পারভীন শ্যামনগর উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের আব্দুল বারী ও নারগিছ পারভীন দম্পতির একমাত্র মেয়ে। প্রায় ১৫ মাস আগে কালিগঞ্জের রঘুনাথপুর গ্রামের মো: শাকের সরদারের ছেলে মো; রাশিদুল ইসলাম সরদারের সাথে তার বিয়ে হয়।
বয়স কম হওয়ার কারণে কাবিনের বিষয়টি লুকিয়ে স্থানীয়ভাবে কাজীর উপস্থিতিতে পারিবারিকভাবে ঐ বিয়ে সম্পন্ন হয়। চুল কেটে দেয়াসহ স্ত্রীর উপর নির্যাতনের কথা স্বীকার করে রাশিদুল জানায়, স্ত্রীর পরকীয়ার কারণে তিনি এমনটা করেছেন।
ঘটনার শিকার নাসরীন জানায় প্রথম স্ত্রীর সাথে আদালতের মাধ্যমে বিচ্ছেদের কাগজপত্র দেখিয়ে রাশিদুল তার সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে।
প্রায় ১৫ মাস আগে দুই পরিবারের সম্মতিতে বিয়ের পর থেকে সে শ^শুর বাড়িতে বসবাস শুরু করে। চার/পাঁচ মাস আগে প্রথম স্ত্রীর সাথে রাশিদুলের পুনরায় সম্পর্ক গড়ে উঠার বিষয়টি জানতে পেরে আপত্তি করায় তার উপর শাররীক নির্যাতন শুরু হয়।
নাসরীন অভিযোগ করেন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় একই বিষয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বাদানুবাদ শুরু হয়। এক পর্যায়ে রাশিদুল তাকে শোবার ঘরের মধ্যে দু’দিন আটকে রেখে বেপরোয়া মারধরসহ তার মাথার চুল এলোমেলোভাবে কেটে দেয়।
এমনকি রাতের বেলা দু’হাত দড়ি দিয়ে বেঁধে মশারীর বাইরে রেখে তাকে মশার অতাচার সহ্য করতে বাধ্য করা হয়। তার উপর এমন নির্মম নির্যাতনের সবকিছু জেনেশুনেও তার শ^শুর বাড়ির লোকজন রাশিদুলের অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেনি বলেও তার দাবি।
নাসরীনের মা নারগীছ পারভীন জানান, সহায় সম্বলহীন দিনমজুর হওয়ায় মেয়ের সম্পর্কের কথা জানতে পেরে রাশিদুলের পিড়াপিড়িতে বাধ্য হয়ে মেয়েকে বিয়ে দেন।
গত কয়েক মাস ধরে নানাভাবে নির্যাতনের পর গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার নাসরীনের উপর নির্মম নির্যাতন চালায় রাশিদুল। এসময় মারধরসহ মাথার চুল কেটে দেয়ার পাশাপাশি দু’দিন ধরে দড়ি দিয়ে হাত বেঁধে মশা দিয়ে তাকে খাওয়ানো হয়।
বিষয়টি স্থানীয়দের ম্যাধমে জানতে পেরে শনিবার বিকালে ভাই ও ভগ্নিপতিসহ স্থানীয়দের সহায়তায় মেয়েকে উদ্ধার করেন। এঘটনায় তিনি আইনগত আশ্রয় নেবেন বলেও জানান।