হোম অন্যান্যসারাদেশ কেশবপুরে ১১৫ সেচ সংযোগ বিচ্ছিন্ন! হুমকির মুখে ৩ হাজার বিঘার বোরো আবাদ

জয়দেব চক্রবর্ত্তী, কেশবপুর (যশোর) :

বোরো আবাদের ভরা মৌসুমে কেশবপুর পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিস ১১৫ টি বৈদ্যুতিক সেচ পাম্পের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে। ফলে ওইসব সেচ পাম্পের অধীনে হাজারও কৃষকের ৩ হাজার বিঘা জমির বোরো আবাদ হুমকির মুখে পড়েছে। এছাড়া, সেচের আওতায় না আসায় অনাবাদি রয়েছে আরও কয়েক‘শ কৃষকের জমি। এনিয়ে কৃষকদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।

যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি- ২‘র কেশবপুর জোনাল অফিসের আধীনে গভীর-অগভীর মিলে ১ হাজার ৭৮টি বৈদ্যুতিক সেচ সংযোগ রয়েছে। এসব সেচ সংযোগের আওতায় প্রায় ৫০ হাজার বিঘা জমিতে বোরো আবাদ হয়। যা থেকে প্রতিবছর ১ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়ে থাকে।

চলতি বছর দেশব্যাপী খাদ্য ঘাটতির শঙ্কা মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দেন দেশের কোথাও এক ইঞ্চি জমি ফেলে রাখা যাবে না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণাকে উপেক্ষা করে কেশবপুর জোনাল অফিস চলতি বোরো মৌসুমে পর্যায়ক্রমে ১১৫ টি বৈদ্যুতিক সেচ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে।

সেচ পাম্প মালিকরা পুণ বা সাময়িক সংযোগ পেতে কেশবপুর জোনাল অফিসে আবেদন করে মাসের পর মাস ধরনা দিলেও আজও মেলেনি তাদের কাঙ্খিত সেচ সংযোগ। শেষ পর্যন্ত সংযোগ নিতে ব্যর্থ হওয়ায় হুমকির মুখে পড়ে এ উপজেলার ৩ হাজার বিঘা জমির বোরো আবাদ।

উপজেলার মঙ্গলকোট গ্রামের সেচপাম্প মালিক নুর ইসলাম মোড়ল বলেন, ৫ বছর আগে বোরো আবাদের লক্ষ্যে তিনি বৈদ্যুতিক সেচপাম্পে সংযোগ পান। এরপর থেকে তিনি প্রতিবছর এলাকার কৃষকদের ৫৫ বিঘা বোরোর জমিতে পানি দিয়ে ধান উৎপাদন করছেন।

চলতি বছরের জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে তার সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে কেশবপুর জোনাল অফিস। পরবর্তীতে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের সকল শর্ত পূরণ করে কেশবপুর জোনাল অফিসে আবেদন করেন। এছাড়া, উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এমএম আরাফাত হোসেন তার আবেদনপত্রে সেচ মৌসুম চলমান থাকায় সাময়িক বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া যেতে পারে বলে সুপারিশ করেন। ঘটনাটি এক সপ্তাহ অতিবাহিত হতে চললেও আজও তার সংযোগ দেয়া হয়নি।

শ্রীফলা গ্রামের সেচ পাম্প মালিক আবু স্ঈাদ জানায়, পুণসংযোগের আবেদন করেও সংযোগ না পাওয়ায় চলতি বোরো মৌসুমে তার বøকের ৮/১০ বিঘা জমিতে এবার বোরো আবাদ হচ্ছে না। মাইলবগা গ্রামের ইকবাল হোসেন বলেন, গত বছরের ২২ নভেম্বর তার পরিবারের ৪টি সেচ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। অদ্যাবধি সংযোগ না পাওয়ায় এবার বোরো আবাদ করা সম্ভব হয়নি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কৃষকদের ধান বাঁচিয়ে রাখতে সেচপাম্প মালিকরা ডিজেল চালিত পাম্প ভাড়া করে এনে বোরো জমিতে পানি দিচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত সংযোগ না পেলে বন্ধ হয়ে যেতে পারে বোরো আবাদ। শুধু ওইসব সেচ পাম্প মালিকই নয়, সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় এ উপজেলার শতাধিক সেচ পাম্প মালিকেরই একই অবস্থা।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ঋতুরাজ সরকার বলেন, বৈদ্যুতিক সেচ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় কি পরিমান জমিতে বোরো আবাদ হচ্ছে না, তার কোন তথ্য তার দপ্তরে নেই।
কেশবপুর জোনাল অফিসের এজিএম কম রফিকুল ইসলাম বলেন, যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি- ২ এর নীতিমালা লঙ্ঘন করে সেচ কার্যক্রম চালানোর কারণে অধিকাংশ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। যারা শর্ত পূরণ করতে পারছে তাদের সংযোগ দেয়া হচ্ছে। মঙ্গলকোট গ্রামের নুর ইসলাম মোড়লের বিরুদ্ধে পাশের পাম্প মালিক আব্দুল হালিম অভিযোগ করায় ইউএনও‘র সুপারিশের পরও তার সংযোগটি দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন