যশোর অফিস :
যশোর রেজিস্ট্রি অফিসে চরম ঘুষ বাণিজ্য। জাল-জালিয়াতি ও দুর্নীতিবাজদের আড্ডা খানায় পরিণত হয়েছে জেলা রেজিস্ট্রি অফিসটি। রেকর্ড কিপার ভৈরব চক্রবর্তী ও নকল নবিশ নূর নবীর কাছে অসহায় হয়ে পড়েছেন জেলা রেজিস্ট্রার এবং সদর উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার। সম্প্রতি ভৈরব ও নূন নবীকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে তারা। বাড়িয়ে দিয়েছেন ঘুষের রেট।
সূত্র জানায়, যশোর রেজিস্ট্রি অফিসে ভৈরব চক্রবর্তী যোগদানের পর থেকে আগের সব নিয়ম পাল্টে দেন তিনি। বাড়িয়ে দেন ঘুষের রেট। জামায়াত-শিবিরের দোষর নূর নবীর সাথে আঁতাত করে ভৈরব একের পর এক অনিয়ম করে গেলেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
গণমাধ্যমে একাধিকবার খবর প্রকাশ হলেও বহাল তবিয়তে রয়েছে এই দুই দুর্নীতিবাজ কর্মচারী। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সাহস পায়না রেজিস্ট্রি অফিসের কোন কর্মকর্তা। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করলেই উল্টো ফেঁসে যাওয়া ভয়ে কেউ কোন কথা বলেন না।
যে কারণেই তারা সব সময় থেকে যায় বহাল তবিয়তে। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে রেকর্ড কাটা বন্ধ করে দেন রেকর্ড কিপার। এতে করে সাধারণ মানুষ নানা দুর্ভোগের শিকার হন। অনেকে বাধ্য হয়ে জেলা রেজিস্ট্রার আসাদুল ইসলামের কাছে দারস্থ হন। আসাদুল ইসলাম রেকর্ড কাটার জন্য ভৈরব চক্রবর্তীকে অনুরোধ করেন।
এরপর ভৈরব চক্রবর্তী পেয়ে যান মহা-ক্ষমতা আবারও বাড়ান ঘুষের রেট। একর পর এক ঘুষের রেট বাড়লেও সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কমেনি এই অফিসে। নানা টালবাহানায় ঘুষের জন্য লাখ লাখ টাকা গ্রহণ করা হচ্ছে এখানে। সব কিছু জেলা রেজিস্ট্রার ও সদর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার জানলেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না।
সূত্র জানায়, রেজিস্ট্রি অফিসের শীর্ষ দুই কর্মকর্তা অসহায় হয়ে পড়েছে দুই কর্মচারীর হাতে। দুই কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে কর্মকর্তারা ফেঁসে যাবেন। যে কারণেই ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না।
সূত্র জানায়, একজন দলিল লেখক মাসে অন্তত: ৩০০ পাতা দলিল লেখার নিয়ম থাকলেও নকল নবিশ নূর নবী এক পাতাও লেখেন না। তিনি রেকর্ড কিপার ভৈরব চক্রবর্তীকে খুশি করে তার দায়িত্ব অবহেলা করে চলেন। নিজের ইচ্ছা মত অফিসে চলেন নূর নবী। নূর নবীর যা খুশি তাই করেন।
তার কাজের কোন হিসাব চলে না। শুধু তাই নয়, ভলম থেকে পাতা সরানো থেকে ভলম উধাও করে থাকে এই চক্রটি। যশোর ১৯৭৮ সালের ২২৭১ নং দলিলের ৭১ নম্বর ভলমের ৯৭ থেকে ১০০ পাতা পর্যন্ত উধাও করে দিয়েছে চক্রটি। এই চার পাতার দলিলে কি ছিলো তা এখন কেউই কিছু জানে না। নূর নবী ও ভৈরব এই পাতা সারানোর কজটি সুক্ষভাবে দীর্ঘদিন ধরে করে আসছে। এনিয়ে জেলা রেচিস্ট্রারের কাছে অভিযোগ করা হলেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
অভিযোগ রয়েছে, নূর নবী-ভৈরব চক্র সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে জমির শ্রেণি পরিবর্তন, সাব-কবলা দলিলের পরিবর্তে হেবাবিল এওয়াজ, অসিয়ত নামা, ঘোষণাপত্র, আমমোক্তার নামা দলিল রেজিস্ট্রি করে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এ অফিসে রেকর্ড কিপার ভৈরব চক্রবর্তী যোগদানের পর থেকে দালাল সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাধ্যতামূলকভাবে দলিল থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে। এ টাকা সিন্ডিকেটের সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করে নূর নবী। নূর নবী টাকা তুলে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ভাগ-বাঁটোয়ারা করে।
ভুক্তভোগীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, দলিলের ফি ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করলেও সেরেস্তা (অতিরিক্ত ফি) না দিলে কারো জমি রেজিস্ট্রি হয় না। দলিল রেজিস্ট্রি করতে হলে নূর নবীর মতামত লাগে। রেকর্ড কিপার ভৈরব চক্রবর্তীর ইশারায় জমি রেজিস্ট্রে করার জন্য নূর নবী দলিল লেখকদের জানান। তাদের চাহিদা মতো টাকা না পেলে বিভিন্ন কাগজপত্রের ভুল-ত্রুটির কথা বলে হয়রানি করা হয়। আবার টাকা পেলে সব বৈধ হয়ে যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক দলিল লেখক জানিয়েছেন, সেরেস্তা না দিলে জমি রেজিস্ট্রি তো দূরের কথা সীমাহীন হয়রানির স্বীকার হতে হয় ভুক্তভোগীদের। তাই বাধ্য হয়েই সেরেস্তা (অতিরিক্ত ফি) দিয়ে দলিল রেজিস্ট্রি করতে হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, এখানকার দুর্নীতিতে সবচেয়ে বেশী দুর্ভোগ পোহাতে হয় জমির মালিকদের। তাদের জমির প্রকৃত মূল্য এবং এলাকায় সরকার নির্ধারিত জমির প্রকৃত মূল্য গরমিল করে দলিল লেখকদের সহায়তায় টাকা হাতাতে নানা রকম ফন্দি ফিকির আটেন ভৈরব-নূর নবী। তাদের কথার বাইরে কিছু করা হলে বিভিন্ন ফন্দিতে আটকিয়ে দাতা ও গ্রহীতাকে নানাভাবে হয়রানি করে থাকে।
সূত্র জানায়, নূরনবী-ভৈরব সিন্ডিকেট এতই শক্তিশালী যে তাদের বিরুদ্ধে কোন কথা বলে কেউ রেজিস্ট্রি অফিসে টিকতে পারবে না। ফলে অনেকেই নিশ্চুপ থাকে এই সিন্ডিকেটের ব্যাপারে। তাদের বিরুদ্ধে পাহাড় সমান অভিযোগ জেলা রেজিস্ট্রারের কাছে জমা রয়েছে। তারপরও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করে নিশ্চুপ, থাকায় সবাই মনে করে এসব অপকর্মে তাদের সাই রয়েছে।