অনলাইন ডেস্ক :
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কয়েকটি সংঘবদ্ধ চোর চক্র জার্মানিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রফতানির জন্য প্রস্তুত করে রাখা শতকোটি টাকা মূল্যের গার্মেন্টস পণ্য চুরি করেছে। চুরির পর এসব পণ্য বিক্রি করে দেয়া হয়।
শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে পণ্য চুরির সংঘবদ্ধ চক্রের মূলহোতা শাহেদসহ ৪ জনকে গ্রেফতারের পর এ তথ্য জানায় র্যাব।
গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন: শাহেদ ওরফে সাঈদ ওরফে বদ্দা (৫২), ইমরাত হোসেন সজল (৩৭), শাহজাহান ওরফে রাসেল ওরফে আরিফ (৩০) ও হৃদয় (২৮)। শুক্রবার (৩ ফেব্রুয়ারি) মৌলভীবাজার, গোপালগঞ্জ ও ঢাকার আশপাশের এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি কাভার্ড ভ্যানসহ ব্রাজিলে রফতানি করা পণ্যের স্যাম্পল ও তিনটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, প্রায় দেড় যুগ ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানির সময় দুই হাজারের বেশি কাভার্ডভ্যান থেকে শত শত কোটি টাকার রফতানিযোগ্য গার্মেন্টস পণ্য চুরি করে আসছিল চক্রটি। ২ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের গাছা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরির পরিপ্রেক্ষিতে র্যাবের গোয়েন্দা দল এ চক্রকে ধরতে অভিযান পরিচালনা শুরু করে সফল হন।
খন্দকার আল মঈন বলেন, ৬ জানুয়ারি ব্রাজিল থেকে পাঠানো একটি ভিডিওর মাধ্যমে আমরা এ চক্রের চুরির খবর জানতে পারি। যেখানে বলা হয়, প্রায় বেশিরভাগ কার্টনের ৩০ থেকে ৩৫ ভাগ পোশাক তারা বুঝে পায়নি। এমনকি কিছু কার্টন খালি ছিল। ওই শিপমেন্টে ২৬ হাজারের বেশি পোশাক ছিল। যার প্রায় ৮ হাজারের মতো পোশাক চুরি হয়। প্রায় ৩০ শতাংশ পোশাক তারা সরিয়ে ফেলে।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, মাত্র দুই ঘণ্টায় চক্রটি এই চুরির কাজটি পরিচালনা করে। পরবর্তীকালে আমরা এই চক্রের মূলহোতাসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করি। এমনকি যে কাভার্ড ভ্যানে করে তারা ব্রাজিলের পণ্য চুরি করে সেই কাভার্ড ভ্যান জব্দ করি। সঙ্গে চালানও সংগ্রহ করি।
তিনি বলেন, এই চোর চক্র সেদিন দুটি অপারেশন পরিচালনা করে। এমনকি মাসে তারা ৫০টিরও বেশি অপারেশন পরিচালনা করে থাকে। এর আগেও আমরা একটি চক্রকে ধরতে সক্ষম হই।
কীভাবে তারা এ চুরি কার্যক্রম পরিচালনা করে জানতে চাইলে আল মঈন বলেন, মূলত বায়ারদের স্যাম্পল দেখে তারা সেই স্যাম্পল বাজারে যাচাই করে। যদি সেই পণ্যের মূল্যমান ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকার মতো হয়, তবেই তারা এ ধরনের অভিযান পরিচালনা করে। খুব কৌশলে তারা কার্টনের ভেতর থেকে কিছু পণ্য (আনুমানিক ৩০ শতাংশ পণ্য) সরিয়ে আবার সেই কার্টন আগের মতো টেপ মেরে প্যাক করে ফেলেন। যাতে কোনোভাবে টের পাওয়া না যায়। এভাবে তারা প্রতিটি বাক্স থেকে পণ্য সরিয়ে তাদেরই ভাড়া করা আরেকটি কাভার্ড ভ্যানে সরিয়ে ফেলে।
গডফাদার শাহেদ ওরফে সাঈদ ওরফে বদ্দার বিষয়ে মঈন বলেন, সবার কাছে পরিচিত ‘বদ্দা’ মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করেন ২০০৮ সাল থেকে। ১০ বছরের মাথায় ২০১৮ সালেই তিনি গডফাদার বনে যান। যার বিরুদ্ধে ১৭ থেকে ১৮ টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে দুইটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানাও আছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তার দুই স্ত্রী এবং ছেলে-মেয়ে বিদেশে পড়াশোনা করছে। এমনকি বেশ কয়েকটি বাংলোসহ বাড়ি ও বিপুল অর্থের খোঁজ মেলে তার।
এমন চক্রের জন্য আমাদের পোশাক শিল্পের ব্যাপক ক্ষতি হয় মন্তব্য করে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, এ চক্রের চোরাচালানের জন্য দীর্ঘদিন ধরে বায়িং হাউস, গার্মেন্টস শিল্প ও মালিকপক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আসছে। পাশাপাশি আমাদের দেশের ভাবমূর্তি দেশের বাহিরে ক্ষুন্ন হচ্ছে। যা আমাদের পোশাক শিল্পের জন্য হুমকিস্বরূপ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে পোশাক শিল্পের ভূমিকা অপরিসীম। আমাদের রফতানি আয়ের ৮২ শতাশংই আসে এই পোশাকশিল্প থেকে। যা কিনা পোশাকশিল্পে পৃথিবীর ২য় স্থানে রয়েছে। এই চক্র গার্মেন্টস শিল্পকে ধ্বংস করার পরিকল্পনায় নামে। আমরা বেশ কিছু গোডাউনের খোঁজ পাই। যারা চোরাই পণ্য বোঝাই করে পরে বিভিন্ন দেশে পাচার করে। এই সিন্ডিকেটের গডফাদার যাকে সবাই ‘বদ্দা’ বলে জানে তাকেই আমরা অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করতে সক্ষম হই।