যশোর অফিস :
যশোর রেজিস্ট্রি অফিসে জাল-জালিয়াতি ও দুর্নীতিবাজদের নাম-পরিচয় ফাঁস হওয়ার পরও বহাল তবিয়াতে রয়েছে ভৈরব চক্রবর্তী-নূর নবীরা। গত কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ হলেও বহাল তবিয়তে আছেন এই অভিযুক্তরা। তদন্ত কমিটি গঠন তো দূরের কথা, তাদের বিরুদ্ধে ন্যূনতম কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, ভৈরব-নূর নবীদের খুটির জোর কোথায় ?
সীমাহীন অনিয়ম, দুর্নীতি ও জাল-জালিয়াতি করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া ভৈরব-নূর নবীরা এখন অফিসের স্টাফদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছেন। ভয়ভীতির পাশাপাশি হুমকিও দেয়া হয় কর্মচারীদের। কারা গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করছে তাদেরকে দেখে নেওয়া হবে বলে বিভিন্ন জায়গায় হুমকি দিচ্ছেন। সাংবাদিদেরও দেখে নিবেন বলে হুমকি দিচ্ছেন।
এদিকে, ভৈরব চক্রবর্তী এক কুলাঙ্গার সন্তান। বাড়িতে বৃদ্ধ মা থাকলেও তার কোন খোঁজখবর নেয় না। তার গ্রামের বাড়ি আ¤্রঝুটা গ্রামে গিয়ে ভৈরব চক্রবর্তীর প্রতিবেশিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক বছর আগে ভৈরব চক্রবর্তীর বাবা মারা যান। এক ভাই সাতক্ষীরায় পুলিশ বাহিনীতে চাকরি করেন। সে সপ্তাহে একদিন বাড়িতে এসে মায়ের খোঁজখবর নিয়ে যান। মায়ের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দিয়ে যান। কিন্তু ভৈরব বড় হলেও তার মায়ের কোন খোঁজখবর রাখেন না।
প্রতিবেশিরা আরো জানান, বাবা-মা ভৈরবকে লেখাপড়া শেখালেও মানুষ বানাতে পারেনি। আমাদের দেশে এত আইন আছে, মা-বাবা ভরণ পোষণ না দেওয়া সন্তানদের জন্য কোন আইন নেই ?
সূত্র জানায়, একজন দলিল লেখক মাসে অন্তত: ৩০০ পাতা দলিল লেখার নিয়ম থাকলেও নকল নবিশ নূর নবী এক পাতাও লেখেন না। তিনি রেকর্ড কিপার ভৈরব চক্রবর্তীকে খুশি করে তার দায়িত্ব অবহেলা করে চলেছেন। নিজের ইচ্ছা মত অফিসে চলেন নূর নবী। নূর নবীর যা খুশি তাই করেন। তার কাজের কোন হিসাব চলে না। শুধু তাই নয়, ভলম থেকে পাতা সরানো থেকে ভলম উধাও করে থাকে এই চক্রটি। যশোর ১৯৭৮ সালের ২২৭১ নং দলিলের ৭১ নম্বর ভলমের ৯৭ থেকে ১০০ পাতা পর্যন্ত উধাও করে দিয়েছে চক্রটি। এই চার পাতার দলিলে কি ছিলো তা এখন কেউই কিছু জানে না।
অভিযোগ রয়েছে, সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে জমির শ্রেণি পরিবর্তন দেখিয়ে, সাব-কবলা দলিলের পরিবর্তে হেবাবিল এওয়াজ, অসিয়ত নামা, ঘোষণাপত্র, আমমোক্তার নামা দলিল রেজিস্ট্রি করে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এ অফিসে রেকর্ড কিপার ভৈরব চক্রবর্তী যোগদানের পর থেকে দালাল সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাধ্যতামূলকভাবে দলিল থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে। এ টাকা সিন্ডিকেটের সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করে নূর নবী। নূর নবী টাকা তুলে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ভাগ-বাঁটোয়ারা করে।
ভুক্তভোগীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, দলিলের ফি ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করলেও সেরেস্তা (অতিরিক্ত ফি) না দিলে কারো জমি রেজিস্ট্রি হয় না। দলিল রেজিস্ট্রি করতে হলে নূর নবীর মতামত লাগে। রেকর্ড কিপার ভৈরব চক্রবর্তীর ইশারায় জমি রেজিস্ট্রে করার জন্য নূর নবী দলিল লেখকদের জানান। তাদের চাহিদা মতো টাকা না পেলে বিভিন্ন কাগজপত্রের ভুল-ত্রæটির কথা বলে হয়রানি করা হয়। আবার টাকা পেলে সব বৈধ হয়ে যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক দলিল লেখক জানিয়েছেন, সেরেস্তা না দিলে জমি রেজিস্ট্রি তো দূরের কথা সীমাহীন হয়রানির স্বীকার হতে হয় ভুক্তভোগীদের। তাই বাধ্য হয়েই সেরেস্তা (অতিরিক্ত ফি) দিয়ে দলিল রেজিস্ট্রি করতে হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, এখানকার দুর্নীতিতে সবচেয়ে বেশী দুর্ভোগ পোহাতে হয় জমির মালিকদের। তাদের জমির প্রকৃত মূল্য এবং এলাকায় সরকার নির্ধারিত জমির প্রকৃত মূল্য গরমিল করে দলিল লিখকদের সহায়তায় টাকা হাতাতে নানা রকম ফন্দি ফিকির আটেন ভৈরব-নূর নবী। তাদের কথার বাইরে কিছু করা হলে বিভিন্ন ফন্দিতে আটকিয়ে দাতা ও গ্রহীতাকে নানাভাবে হয়রানি করে থাকে।