জাতীয় ডেস্ক :
একের পর এক বন্ধ করে দেয়া হয়েছে জামালপুরের সরিষাবাড়ি উপজেলার ৪টি পাটকল। এতে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। আর কৃষকরা পাটের আবাদ বাদ দিয়ে ঝুঁকে পড়ছেন ভুট্টা চাষে।
পাট-সরিষা-ঘোড়াগাড়ি এই তিনে মিলে সরিষাবাড়ির একসময়ের ঐতিহ্যবাহী এখন মুখ থুবড়ে পড়েছে। পাটের সোনালি স্বপ্নঘেরা এই সরিষাবাড়ি পাটশিল্পের জন্য সারা দেশে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকলেও এখন আর সেই অবস্থায় নেই। মালিকদের নানা টালবাহানায় একের পর এক বন্ধ করা হয়েছে পাটের মিল কারখানা। এখন এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা সবাই বেকার। কেউ কেউ পেশা বদলে নিজেদের জীবন বাঁচাচ্ছেন।
পাটমিলের সঙ্গে জড়িতরা জানিয়েছেন, সরিষাবাড়ির সব কটি পাটকল লাভে ছিল। উপজেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে ২২টি পাটকল ছিল। এর মধ্যে আলহাজ জুট মিলটি আধা সরকারি। বর্তমানে উপজেলার প্রায় সব কটি মিলই বন্ধ।
২০১৮ সালে উপজেলার সবচেয়ে বড় আলহাজ জুটমিলস লিমিটেড লোকসানের অজুহাত তুলে মালিক কর্তৃপক্ষ বন্ধ করে দেয়। আর করোনাকালীন ২০২০ সালে পপুলার জুট মিলস লিমিটেড, এ আর এ জুট মিলস লিমিটেড, কেএইচবি ফাইবার মিমকো জুটমিল লিমিটেড শ্রমিকদের কোটি কোটি টাকা বেতন-বোনাসসহ ব্যবসায়ীদের বিল বকেয়া রেখেই বন্ধ করে দেয়।
আলহাজ জুটমিলের প্রেস নিরাপত্তা হাবিলদার ৬৫ বছর বয়সের মুমতাজ আলী বলেন, ‘৩০ বছর এই মিলে চাকরি করেছি। প্রতিদিন হাজার হাজার শ্রমিক কর্মচারীদের পদচারণায় মুখরিত থাকত মিলটি। এই মিল লাভবান ছিল। হঠাৎ করেই মিলটি বন্ধ করে দিয়েছে। এখন আমরা বেকার হয়ে পড়েছি।’
পাট ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন জানিয়েছেন, একের পর এক পাটকলগুলো বন্ধ করে দেয়ায় তারা লোকসানে পড়েছেন। চাষিরা পাট চাষ ছেড়ে অন্য ফসল চাষ করছেন। এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। ব্যবসায়ীরা সরকারের প্রতি মিলগুলো চালুর দাবি জানান।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, সরিষাবাড়ির পাটের ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে। ৫টি জুটমিল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পাটচাষিরা দিন দিন পাট চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। তারা পাট চাষ বাদ দিয়ে অন্য ফসলে আগ্রহী হচ্ছে।
সরিষাবাড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উপমা ফারিসা বলেন, ‘সরিষাবাড়িতে একসময় ২২টি পাটকল ছিল। কালের বিবর্তনে এখন বেশ কয়েকটি পাটকল বন্ধ হয়ে গেছে। পাটকলগুলো চালুর বিষটি চিন্তায় আছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করব।’
সরিষাবাড়ি উপজেলায় ৫টি জুটমিল বন্ধ থাকায় প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন।