জাতীয় ডেস্ক :
ভোলা সদর হাসপাতালে জনবল ও শয্যা সংকটের কারণে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসাসেবা। ১০০ শয্যার পুরাতন ভবনে গড়ে প্রতিদিন সাড়ে ৩০০ রোগীর সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ৫৮ জন ডাক্তারের স্থলে বর্তমানে যে ২২ জন ডাক্তার কর্মরত আছেন তারাও নিয়মিত অফিস করেন না। এদিকে তিন বছর আগে নির্মিত সাততলা নতুন ভবনটি উদ্বোধন না করে বছরের পর বছর পুরাতন ভবনের বারান্দা ও মেঝেতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রোগী ও স্বজনরা। আর এ সংকট নিরসনে গতানুগতিক আশ্বাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে কর্তৃপক্ষ।
ভোলার ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়কের অফিস রুমের পাশের ২৬, ২৭ ও ২৮ নম্বর রুমে সার্জারি কনসালট্যান্ট ডা. সবুজ কুমার পাত্র, অর্থোপেডিকস কনসালট্যান্ট ডা. মো. ফায়জুল হক ও কার্ডিওলজির কনসালট্যান্ট ডা. মেহেদী হাসান বিপ্লবের রুম। শনিবার (২৬ নভেম্বর) সকাল থেকেই ওই তিন রুমের সামনে শতাধিক রোগী অপেক্ষা করলেও দুপুর ১২টা পর্যন্ত ডাক্তারের দেখা পাননি তারা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও বিশেষজ্ঞ এসব ডাক্তারের দেখা পাওয়া ভাগ্যের ওপর নির্ভর করছে। দুপুর ১২টার পর ডা. ফায়জুল হক কিছু সময়ের জন্য চেম্বারে এলেও বাকি দুজন অনুপস্থিত ছিলেন। সদর হাসপাতালের প্রতিদিনের চিত্র এমন হলেও উত্তরণে কোনো উদ্যোগ নেই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও জানাতে পারেনি ডা. সবুজ কুমার পাত্র ও মেহেদী হাসান বিপ্লব কেন অনুপস্থিত আছেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ১০০ শয্যার পুরাতন ভবনে এক মাস ধরে প্রতিদিন গড়ে ৩৬০ জন করে রোগী ইনডোরে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর মধ্যে অধিকাংশই শিশু। মৌসুম পরিবর্তনের প্রভাব ও চলমান গরম-ঠান্ডার কারণে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন দুই শতাধিক শিশু হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। ২৫ শয্যার শিশু ইউনিটে ধারণক্ষমতার কয়েক গুণ বেশি রোগী ভর্তি হওয়ায় বিপুল সংখ্যক শিশুকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বারান্দার মেঝেতে। একেক বেডে রাখা হচ্ছে ৪-৫ জন করে শিশু। মাত্র দুজন ডাক্তার এত রোগীর চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হিমশিম খাচ্ছেন। এ ছাড়া অস্বাস্থ্যকর মেঝে ও এক বেডে একাধিক শিশুর চিকিৎসা করতে গিয়ে সুস্থ হওয়ার পরিবর্তে সংক্রমিত হচ্ছে নতুন নতুন রোগে। এতে বাড়তি বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে মা-বাবাদের। পাশেই বহুতল ভবন রেখে এমন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চিকিৎসা দেয়ায় ক্ষুব্ধ রোগীর স্বজনরা। তাদের দাবি, দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন ভবনে কার্যক্রম শুরু ও জনবল সংকট দূর করতে হবে।
শীতের শুরুতেই শিশুদের এমন অসুস্থতাকে অস্বাভাবিক উল্লেখ করে অভিভাবকদের সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কনসালট্যান্ট (শিশু) ডা. মো. সালাহউদ্দিন।
এদিকে শয্যা ও জনবল সংকটের সমাধান না করেই সেবা চালিয়ে যাওয়ার দায়সারা কথা জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। নতুন ভবন সচল করতেও নেই কার্যকর ভূমিকা।
২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ লোকমান হাকিম জানান, নতুন ভবন উদ্বোধন ও আসবাবের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে ভোলা সদর হাসপাতালকে ১০০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নতি করা হলেও নিয়োগ দেয়া হয়নি প্রয়োজনীয় জনবল। এ হাসপাতালের ইনডোরে প্রতিদিন সাড়ে ৩০০ ও আউটডোরে পাঁচ শতাধিক রোগী চিকিৎসা নেন।
