হোম খুলনাযশোর মনিরামপুরে ক্লাস চলাকালীন সময়ে হঠাৎ অসুস্থ অর্ধশত শিক্ষার্থী

মনিরামপুরে ক্লাস চলাকালীন সময়ে হঠাৎ অসুস্থ অর্ধশত শিক্ষার্থী

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 27 ভিউজ

রিপন হোসেন সাজু:

যশোরের মনিরামপুরে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস চলাকালীন প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী আকষ্মিক চুলকানি রোগে আক্রান্ত হয়েছে। মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) সকালে মনিরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটেছে। এতে শিক্ষক-অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। পরে আক্রান্তদের মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। জানা গেছে, মনিরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী জান্নাতুল প্রিয়া বিদ্যালয়ে সমাবেশের পর শ্রেণিকক্ষে ক্লাস করছিল। আকস্মিক তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চুলকাতে শুরু করে। একপর্যায়ে চুলকানোর জায়গাটি লাল হয়ে যায়। তার এই অবস্থা দেখে জিম নামে আরেক শিক্ষার্থী এগিয়ে গিয়ে সেই লাল জায়গায় হাত দিতেই তারও (জিম) শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চুলকাতে শুরু করে এবং একই রকম উপসর্গ দেখা দেয়। এ সময় বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা দুজনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। কিছুক্ষণের মধ্যে ওই বিদ্যালয়ের একই উপস্বর্গ নিয়ে প্রায় অর্ধশত শিশু হাসপাতালে আসে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গৌতম হালদার জানান, সমাবেশ শেষে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান চলাকালে জান্নাতুল প্রিয়া নামের ৪র্থ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী প্রথমে আক্রান্ত হয়। পরপরই বিদ্যালয়ের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা আক্রান্ত হলে প্রথম ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের আলাদা করা হয়। এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. জেসমিন সুমাইয়া জানান, প্রত্যেক শিক্ষার্থীই একই উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসে। তিনি এটিকে অ্যানাফিল্যাকটিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে অভিহিত করেন। তবে, একইসঙ্গে এত শিক্ষার্থী একই উপসর্গে আক্রান্ত হওয়াটা স্বাভাবিক মনে করছেন না তিনি। এ জন্য এই রোগটি নিয়ে তদন্তপূর্বক গবেষণার দাবি জানান তিনি। এদিকে, খবর পেয়ে ওই বিদ্যালয়ে পরিদর্শনে যান উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিশাত তামান্না। এ সময় তিনি বিদ্যালয়ের মাঠে গরুবাহী বিপুল গাড়িসহ নানা ধরনের যানবাহন দেখতে পান। শিক্ষার্থীরা ওই যানবাহনে উঠে খেলাধুলা করে। তিনি প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন রোগাগ্রস্থ কোনো পশুবাহী যানবাহনের সংস্পর্শ হতে এ ধরনের রোগে আক্রান্ত হতে পারে। ইউএনও নিশাত তামান্না বলেন, বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে যানবাহন না রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা দেন। উপজেলা শিক্ষা অফিসার আবু মোত্তালেব আলম বলেন, তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা হলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও (আবাসিক মেডিকেল অফিসার) ডা. হুমায়ুন কবীর, সংশ্লিষ্ট সহকারী শিক্ষা অফিসার কামরুল বাশার উমর ফারুক ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গৌতম হালদার।

৪৪ বছর ধরে ভবদহে স্থায়ী জলাবদ্ধতা
গড়ে উঠেছে নৌকা তৈরীর কারখানা, নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত কারিগররা
রিপন হোসেন সাজু, মনিরামপুর (যশোর) ঃ বর্ষা মৌসুম শেষ হলেও যশোর-খুলনার দুঃখ হিসেবে পরিচিত ভবদহের পানি নামে না। যশোরের মনিরামপুর, কেশবপুর, অভয়নগর ও খুলনার ডুমুরিয়া, ফুলতলা এলাকার শ্রী, হরি ও টেকা নদীর মোহনাস্থল হলো ভবদহ। পলিমাটি জমে নদীর তলদেশ উঁচু ও ফসলি জমি বিশেষ করে বিলের তলদেশ নিচু হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে প্রতিবছরই ভবদহ এলাকা প্লাবিত হয়। পানি নিষ্কাষণ না হওয়ায় প্রায় সারা বছরই জলাবদ্ধতা দেখা দেয় সেখানে। পানিবন্দী হয়ে থাকেন ভবদহ তীরবর্তী ১০০টি গ্রামের ৫ লক্ষাধিক মানুষ। এমনটি হয়ে আসছে গেল ৪৪ বছর ধরে। ভবদহের জলাবদ্ধতা এখন স্থায়ী রূপ নিয়েছে। সারা বছরই খাল-বিলে পানি থৈ থৈ করে। ফলে বেঁচে থাকার তাগিদে ওই এলাকার মানুষ বেছে নিয়েছেন নানান পেশা। ফসল আবাদের পরিবর্তে ঝুঁকে পড়েন মাছ চাষের দিকে। ভবদহের স্থায়ী জলাবদ্ধতার কারণে মানুষের যাতায়াত, লোক পারাপার, বিলে মাছ ধরা, মাছের খামারে খাবার নেওয়াসহ নানা কাজের একমাত্র অবলম্বন হলো ছোট নৌকা। স্থানীয় ভাষায় যাকে বলা হয় ‘ডোঙা’। ভবদহ অঞ্চলের নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় এই ডিঙি নৌকা তৈরির জন্যও গড়ে উঠেছে কারখানা। মনিরামপুরের কুমারঘাটা বাজারে নৌকা তৈরির কারখানায় ব্যস্ত সময় পার করেন কারিগররা। সরেজমিনে দেখা যায়, কুমারঘাটা বাজারে ২২-২৩ টি নৌকা তৈরির ঘর রয়েছে। যেখানে ব্যস্ত সময় পার করছেন শতাধিক শ্রমিক। এই বাজার ছাড়াও উপজেলার কপালিয়া, কালিবাড়ি, নেহালপুর, বাহাদুরপুর ও কোনাকোলা এলাকায় চলে ছোট নৌকা তৈরির কাজ। মনিরামপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকাসহ সাতক্ষীরা, বেনাপোল, বটিয়াঘাটা, কেশবপুর, ডুমুরিয়া, অভয়নগর, নড়াইল এলাকায় বিক্রি হয় এসব নৌকা। ক্রেতারা এসে ৬-১২ হাজার টাকায় কেনেন ছোট আকারের এসব নৌকা। পেরেক এবং মেহগনি, পুইয়ে, লম্বু ও খই কাঠে তৈরি হয় নৌকা। তিনজন শ্রমিক দিনে একটি করে নৌকা তৈরি করেন। কাজ শেষে বৈদ্যুতিক মেশিনে পালিশ করে রোদে শুকিয়ে কালো রং করা হয় নৌকায়। নৌকার কারিগর স্থানীয় কুমারঘাটা গ্রামের ইনতাজ আলী বলেন, ‘ডোঙা তৈরির কাজ করি ৪৫ বছর। এ কাজ করে ৮ জন মানুষের সংসার চালাতি অনেক কষ্ট হয়।’ নৌকার কারিগর কপালিয়া গ্রামের কার্তিক মন্ডল বলেন, ‘বংশ পরস্পরায় নৌকা তৈরির কাজ করছি আজ ৪০ বছর ধরে। প্রথম দিকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাজ করতাম। ৩০ বছর ধরে কুমারঘাটা বাজারে কাজ করছি। একটা ছেলে তাকেও শিখাইছি। ১০ টাকা থেকে শুরু করে এখন ৭০০ টাকা মজুরি পাই। সারা বছর কাজ চলে। বসে থাকা লাগে না।’ খুলনার কয়রা উপজেলা থেকে কুমারঘাটা বাজারে নৌকা তৈরির কাজ করতে এসেছেন মুজিবর রহমান। তিনি বলেন, ‘তিনজনে মিলে দিনে একটা ডোঙা (নৌকা) তৈরি করি। এক হাজার টাকা থেকে ৮০০ টাকা হাজিরা পাই। শ্রমিকদের অধিকাংশ বংশ পরস্পরায় এ কাজের সাথে জড়িত।’ মোশতাক আহমেদ নামে আরেকজন বলেন, ‘ভবদহ জলাবদ্ধতার কারণে এ অঞ্চলের মানুষের নৌকা ছাড়া কোন উপায় থাকে না। সেই চাহিদা থেকে নৌকা তৈরির কাজ শুরু করি। তাছাড়া ডোবা এলাকা। ফসল তেমন হয় না। সারা বছর খাল বিলে পানি থাকে এসব এলাকায় নৌকার প্রয়োজন সারা বছরই। নৌকা তৈরির প্রয়োজনীয় উপকরণের দাম বেশি। লাভ হয় কম। তারপরও পেশাটাকে ধরে রেখেছি।’ মনিরামপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. রোকনুজ্জামান বলেন, ‘ভবদহের স্থায়ী জলাবদ্ধতার কারণে মানুষের নিত্য প্রয়োজনের তাগিদে নৌকার কারখানা গড়ে উঠেছে। ওই সকল কাজে নিয়োজিতদের এই দপ্তরের পক্ষ থেকে সুযোগ থাকলে সহযোগিতা দেওয়া হবে।’ উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মোঃ রেজাউল হক বলেন, ‘নৌকা তৈরির সাথে সংশ্লিষ্টদের যুব প্রশিক্ষণ ও যুব ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে।’

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন