হোম অর্থ ও বাণিজ্য ‌‘তলাবিহীন ঝুড়ি’র অর্থনীতির আকার বেড়ে ২৭১ গুণ, বলছে মার্কিন গণমাধ্যম

বাণিজ্য ডেস্ক:

খ্যাতনামা মার্কিন সংবাদমাধ্যম পলিসি ওয়াচারে উঠে এসেছে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক সাফল্যের বিবরণ। “বাংলাদেশের অর্থনীতি কী সত্যিই দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে” শীর্ষক এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি বৃদ্ধি পেয়েছে ২৭১ গুণ।

নিরাপত্তা-ভূরাজনীতি এবং দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি ও অর্থনীতির বিশেষজ্ঞ এবং সুইজারল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব লুসার্নের পিএইচডি গবেষক এমিলিয়া ফার্নান্দেজের লেখা প্রতিবেদনে আরও উঠে এসেছে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক সাফল্যের নানা দিক।

প্রতিবেদনে ওই গবেষক অর্থনীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানের থেকে কীভাবে এগিয়ে গেছে তার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ‌অর্থনৈতিক ও সামাজিক নানা সূচকে বাংলাদেশ ভারত ও পাকিস্তানের থেকে এগিয়ে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের মধ্যে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি নজির হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা খুব কম অর্থনীতিবিদই পূর্বে ধারণা করতে পেরেছিলেন। যখন ২০০৬ সালে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি পাকিস্তানকে অতিক্রম করেছিল, তখন অনেকে এই ঘটনাকে খুব একটা পাত্তা দেননি। গত ২০ বছরে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ৫০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

এমিলিয়া ফার্নান্দেজ বলেন, অর্থনৈতিক স্বাধীনতার সূচকেও ভারত এবং পাকিস্তানকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি। সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচকের দিক থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতি গত ৫০ বছরে বৃদ্ধি পেয়েছে ২৭১ গুণ। বাংলাদেশের এই সফলযাত্রা একটি আদর্শ উদাহরণ। বাংলাদেশ মাত্র দুই দশকের মধ্যে পাকিস্তানকে সব গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সূচকে ছাড়িয়ে গেছে। গত ২০ বছরে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে ৫০০ শতাংশ। যা পাকিস্তানের থেকে আড়াই গুণ বেশি।

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক রক্ষণশীল থিংকট্যাংক প্রতিষ্ঠান দি হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের গবেষণা অনুযায়ী ২০২১ সালে ৫৬ দশমিক ৫ পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১২০ তম। একই স্কোর নিয়ে ভারতের অবস্থান ছিল ১২১তম। অন্যদিকে পাকিস্তানের অবস্থান ছিল ১৫২তম। একই সঙ্গে বৈশ্বিক শান্তি সূচকেও বাংলাদেশ প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তানের থেকে এগিয়ে।

সিডনি ভিত্তিক আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর ইকোনোমিকস অ্যান্ড পিস প্রকাশিত গ্লোবাল পিস ইনডেক্স বা জিপিআই-এ বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত ও পাকিস্তানের থেকে এগিয়ে রয়েছে। প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে গবেষক তার লেখায় বলেছেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি সামাজিক নানা সূচকেও প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে।

তিনি বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক যাত্রা শুরু হয় ১৯৭২ সালে। ওই সময়ে ভারত ও পাকিস্তান বাংলাদেশের থেকে এগিয়ে ছিল প্রতিটি অর্থনৈতিক সূচকে। অথচ আজ অর্ধশতক পর তারা বাংলাদেশের থেকে পেছনে। যা বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহান অর্জন। বাংলাদেশ নানা সূচকে শুধু পাকিস্তানের থেকেই এগিয়ে নেই, একই সঙ্গে ভারতের থেকেও এগিয়ে রয়েছে। নারী শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিষেবা, নারীর ক্ষমতায়ন এবং মাতৃ ও শিশু মৃত্যুর হার কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পাকিস্তানের থেকে অনেক এগিয়ে।

এছাড়া কোভিড মহামারি ও মহামারি পরবর্তী বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতারও প্রশংসা করা হয় প্রতিবেদনে।

এ সময় বিশ্বের খ্যাতনামা আর্থিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান স্যাকস’র গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে লেখিকা বলেন, ‘অর্থনৈতিক উন্নয়নের এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ ২০৭৫ সালের মধ্যে বিশ্বের অন্যতম উন্নত দেশে পরিণত হবে। তবে বাংলাদেশের এই উন্নয়ন অগ্রযাত্রা বিশ্বের কোনো কোনো শক্তি ভালোভাবে নিচ্ছে না বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন গবেষক এমিলিয়া ফার্নান্দেজ।

তিনি দাবি করেন, ওই সব শক্তি বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা থামানোর চেষ্টা করছে।

এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটে বিশ্বের প্রায় সব দেশই কঠিন সময় পাড়ি দিচ্ছে। বৈশ্বিক মন্দার চাপের মুখোমুখি বাংলাদেশও। যখন বাংলাদেশের বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসে, তখন দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল তলানিতে। পাশাপাশি ওয়ান ইলেভেনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নানা বিতর্কিত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে অর্থনীতি ছিল পতনের দ্বারপ্রান্তে। তবে এরপর থেকেই বাংলাদেশের ইতিহাস সামনের দিকে এগিয়ে গেছে।’

তবে বাংলাদেশকে যে হারানো যাবে না তা গোল্ডম্যান স্যাকস’র প্রতিবেদনেই উঠে এসেছে বলে জানান ওই গবেষক। প্রতিবেদনের তথ্যমতে, বাংলাদেশ ২০৭৫ সালের মধ্যে বিশ্বের ১৬তম বৃহৎ অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হবে। তাদের এই পূর্বাভাস অনুযায়ী বাংলাদেশের জিডিপি ২০৭৫ সালের মধ্যে বৃদ্ধি পেয়ে হবে ৬ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের।

উন্নয়নের এই ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ আগামী কয়েক দশকের মধ্যেই সৌদি আরব, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশকে অতিক্রম করে বিশ্বের অন্যতম উন্নত ও ধনী দেশে পরিণত হবে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন লেখিকা এমিলিয়া ফার্নান্দেজ।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের এই অর্থনৈতিক সম্ভাবনার পেছনে রয়েছে মূলত দেশের দ্রুত বর্ধনশীল জনসংখ্যা, জনশক্তি ও বিশাল সংখ্যক মেধাবী কর্মশক্তি। বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। করোনো মহামারির কারণে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কিছুটা ধীর হলেও ফের ঘুরে দাঁড়াচ্ছে অর্থনীতি। যদি এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকে, বাংলাদেশ ২০৭৫ সালের মধ্যেই তার কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছাবে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন