হোম অন্যান্যসারাদেশ ২৫ বছরেও মেলেনি সাতক্ষীরার সেই ২৪ নাবিকের খোঁজ

২৫ বছরেও মেলেনি সাতক্ষীরার সেই ২৪ নাবিকের খোঁজ

কর্তৃক
০ মন্তব্য 118 ভিউজ

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ

ক্যাপ্টেন রবিউল ইসলাম চৌধুরী,
২৫ বছর আগে চীন সাগরে নিখোঁজ হয়েছিলেন সাতক্ষীরার ক্যাপ্টেন রবিউল ইসলাম চৌধুরীসহ ২৪ নাবিক। আজও তাদের সন্ধান মেলেনি। দেশে-বিদেশে আলোড়ন তোলা সেই ঘটনা আজও রহস্যাবৃত। ১৯৯৫ সালে নিখোঁজ হওয়া ‘এমভি আল কাশিম’ নামের ওই জাহাজেই ছিলেন বাংলাদেশের ২৩ জন নাবিক এবং ক্যাপ্টেন রবিউল ইসলাম চৌধুরী।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, সিঙ্গাপুর থেকে পণ্য নিয়ে জাহাজটি জাপানের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। তার আগেই ফিলিপাইন বা তাইওয়ানের উপকূলের কাছাকাছি এসে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ঘটনার প্রায় ৪০ দিন পর পত্রিকায় জাহাজটি নিখোঁজ হওয়ার সংবাদ প্রকাশ পায়। এটি তাইওয়ানের উপকূলে বা ফিলিপাইনের উপকূলে নিখোঁজ হতে পারে বলে খবরে উল্লেখ করা হয়। জাহাজটি পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন ক্যাপ্টেন রবিউল ইসলাম। ক্যাপ্টেনসহ বেশির ভাগ নাবিকের বাড়িই সাতক্ষীরায়।

জাহাজটি নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে শুরু হয় রহস্য! কারণ জাহাজ ডুবে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হলে সাধারণত দ্রুত বার্তা পাঠানো হয়, যাতে আশপাশের জাহাজ উদ্ধারে এগিয়ে আসে। তবে এমন কোনও বার্তা সেই জাহাজ থেকে আসেনি। জলদস্যুরা ধরে নিলেও মুক্তিপণ আদায় করতো। সেটিও হয়নি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১৯৯৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি এক চিঠিতে জানায়, জাহাজটির নিশ্চিত অবস্থান নিরূপণ করা যায়নি।

জাহাজ নিখোঁজের পাঁচ বছর পর সেই সময়কার একটি বিদেশি জাহাজের বাংলাদেশি ক্যাপ্টেন ফরিদুল আলম তখনকার সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরে একটি চিঠি দেন। সেই চিঠিতে তিনি জানিয়েছিলেন, অস্ট্রেলিয়া থেকে পণ্যবাহী জাহাজ নিয়ে ফিলিপাইনের মিন্দানাও প্রদেশের ইলিগান বন্দরে যান তিনি। সেখানকার মিন্দানাও এলাকার মসজিদ ‘আবু বকর’-এর তত্ত্বাবধায়ক তাকে জানান, কাছাকাছি মুজাহিদদের একটি শিবিরে ৩০ জন বাংলাদেশি রয়েছেন, যাদের মধ্যে নিখোঁজ জাহাজ ‘এমভি আল কাশিম’-এর নাবিকেরাও আছেন। তবে পরদিন তাদের জাহাজ বন্দর ত্যাগ করার কথা থাকায় বিষয়টির সত্যতা যাচাই করতে পারেননি তিনি। ক্যাপ্টেন ফরিদুল আলম গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, চিঠি দেওয়া ছাড়াও জাহাজের নিখোঁজ নাবিকদের কয়েকজনের পরিবারকে বিষয়টি জানিয়েছেন। এরপর কী হয়েছে, তা তার জানা নেই।
সেই ঘটনার পর ক্যাপ্টেন রবিউলের পরিবার ঘটনার খোঁজে নানা জায়গায় ধরনা দিয়েছিল। অনেক বছর পর্যন্ত নিখোঁজ নাবিকদের পরিবারের সদস্যদের সেই চেষ্টা অব্যাহত ছিল। সব চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর হতাশ হয়ে সবাই তৎপরতা বন্ধ করে দেন।

নিখোঁজ ক্যাপ্টেন রবিউল ইসলাম চৌধুরীর ভাতিজা ধুলিহর ইউপি সদস্য শামীম রেজা চৌধুরী জানান, পঁচিশ বছর ধরে তারা সংবাদটির অপেক্ষায় আছেন। সেদিন কী ঘটেছিল নাবিকদের ভাগ্যে তার রহস্য তারা আজও জানতে পারেননি।
ক্যাপ্টেন রবিউল ইসলাম চৌধুরীর ভাগ্নে মাওলানা মহসীনুল ইসলাম জানান, এত বছর ধরে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন মাধ্যমে তারা সঠিক সংবাদটির অপেক্ষায় রয়েছেন। ফিলিপাইনে দীর্ঘদিন ধরে রয়েছেন সাতক্ষীরার ফিংড়ী ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের মরহুম আব্দুল মজিদ সরদারের মেয়ে রেখা পারভীন। রেখা পারভীনের উদ্ধৃতি দিয়ে মাওলানা মহসীনুল ইসলাম জানান, প্রায় ৪০ বছর ধরে রেখা ফিলিপাইনে আছেন। তার মাধ্যমেও অনেকবার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু কোনও সুখবর তারা পাননি।

ভালুকা চাঁদপুর আদর্শ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মোবাশ্বেরুল হক জ্যোতি বলেন, ক্যাপ্টেন রবিউল ইসলাম চৌধুরী সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ভালুকা চাঁদপুর গ্রামের আলহাজ্ব আবুল কাশেম চৌধুরীর ছেলে। তিনি ভালুকা চাঁদপুর আদর্শ ডিগ্রি কলেজ, ভালুকা চাঁদপুর দাখিল মাদ্রাসা, ভালুকা চাঁদপুর এতিমখানা, ভালুকা চাঁদপুর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ, ভালুকা চাঁদপুর দাতব্য চিতিৎসালয় (হাসপাতাল) অসংখ্য সামাজিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা।

এছাড়া ভালুকা চাঁদপুর জমিদার বাড়ি জামে মসজিদের সম্প্রসারণ, সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের ভবন সম্প্রসারণ, ভালুকা চাঁদপুর আদর্শ হাইস্কুলের ভবন সম্প্রসারণসহ অসংখ্য মসজিদ-মাদ্রাসায় আর্থিক সহযোগিতা করেছেন। এলাকার উন্নয়নে তার অবদানের কথা মানুষ আজও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে। আমরা এখনও তার খবরের অপেক্ষায় আছি।

সূত্রঃ বাংলা ট্রিবিউন

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন