হোম জাতীয় ১৬ ডিসেম্বর ঘিরে গোপন পরিকল্পনা করছে আওয়ামী লীগ

১৬ ডিসেম্বর ঘিরে গোপন পরিকল্পনা করছে আওয়ামী লীগ

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 67 ভিউজ

নিউজ ডেস্ক:
পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ নির্দেশে কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ আসন্ন ১৬ ডিসেম্বরকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী নাশকতার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে পরিচয় গোপন রাখার শর্তে ছাত্রলীগের একাধিক সূত্র দাবি করেছে, ওইদিন দেশের ৬৪ জেলায় একযোগে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার কৌশল চূড়ান্ত করা হয়েছে।

সূত্রগুলোর ভাষ্য অনুযায়ী, এই পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে নাশকতার দায় ‘জঙ্গি গোষ্ঠী’ বা ‘উগ্রবাদী শক্তি’র ওপর চাপিয়ে দিয়ে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা। এতে করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রকে চাপের মুখে ফেলা এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে বিভ্রান্তিকর বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করা হতে পারে।

ছাত্রলীগের ওই সূত্রগুলো আরো দাবি করেছে, পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গান পাউডার ব্যবহার করে অগ্নিসংযোগের ছকও তৈরি করা হয়েছে। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি ভবন ও বিভিন্ন স্থানে থাকা গাড়িকে লক্ষ্যবস্তু হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় উপাদান সংশ্লিষ্টদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বলেও তারা দাবি করেছে।

সূত্রগুলো বলছে, এসব উপাদান ছোট ছোট দলে ভাগ করে রাখা হয়েছে, যাতে একসঙ্গে বড় ধরনের ঘটনা না ঘটিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে আতঙ্ক সৃষ্টি করা যায় এবং পরে সেগুলোকে ‘আকস্মিক’ বা ‘জঙ্গি হামলা’ হিসেবে উপস্থাপন করা সহজ হয়। তবে এসব দাবির পক্ষেপ্রত্যক্ষ প্রমাণ এই প্রতিবেদকের হাতে আসেনি।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, যদি এমন কোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হয়, তাহলে তা বিজয় দিবসের নিরাপত্তা পরিস্থিতির জন্য গুরুতর হুমকি হিসেবে বিবেচিত হবে। এ কারণে সম্ভাব্য ঝুঁকি মাথায় রেখে গোয়েন্দা নজরদারি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদারের প্রয়োজনীয়তার কথা তারা উল্লেখ করেছেন।

আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. এম শাহিদুজ্জামান বলেন, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ দিবসে একাধিক, পরস্পরবিরোধী কর্মসূচি একসঙ্গে সামনে এলে নিরাপত্তা ঝুঁকি বহুগুণে বেড়ে যায়। বিশেষ করে যখন কোনো কর্মসূচির পেছনে প্রকৃত উদ্যোক্তা বা দায়ভার স্পষ্ট নয়, তখন সেটি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।

তিনি আরো বলেন, বিজয় শোভাযাত্রার মতো আবেগঘন ও জনসমাগমপূর্ণ কর্মসূচির আড়ালে যদি নাশকতার চেষ্টা বা সহিংসতা ঘটে, তাহলে তার দায় নির্ধারণে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। আন্তর্জাতিকভাবে এ ধরনের কৌশলকে ‘কভারড ডিসরাপশন’ বলা হয়-যেখানে বৈধ বা সাংস্কৃতিক কর্মসূচির ছায়ায় অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করা হয়।

ড. শাহিদুজ্জামানের মতে, এমন পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলোকে আয়োজন করছে, কারা অংশ নিচ্ছে এবং অর্থ ও লজিস্টিক সহায়তা কোথা থেকে আসছে—এসব বিষয়ের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা। একই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো প্রচারণা ও গুজবকেও সমান গুরুত্ব দিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

তিনি সতর্ক করে বলেন, যদি রাষ্ট্রীয় দিবসকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কর্মসূচির মাধ্যমে সহিংসতা উসকে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়, তবে তা শুধু অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য নয়, দেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তির জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।

ছাত্রলীগের ওই সূত্রগুলো জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে দলের বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ অনলাইন গ্রুপ ও এনক্রিপটেড যোগাযোগ মাধ্যমে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। জেলা ও মহানগর পর্যায়ের কিছু সাবেক নেতাকর্মীকে ‘স্লিপার সেল’ আকারে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে বলেও তারা দাবি করেছে। সূত্রের দাবি অনুযায়ী, পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ছোট পরিসরে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে আতঙ্ক ছড়ানো, এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাজানো তথ্য ও গুজব ছড়িয়ে দায় অন্যদের ওপর চাপানোর কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে। বিশেষ করে বিজয় দিবসের মতো রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ দিনে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে জনমনে আতঙ্ক ও বিভ্রান্তি আরও গভীর হবে-এমন হিসাব থেকেই পরিকল্পনাটি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ।

এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তারা নির্দিষ্ট কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিজয় দিবস উপলক্ষে সম্ভাব্য সব ধরনের নাশকতার আশঙ্কা মাথায় রেখে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হচ্ছে।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (মিডিয়া) আমিনুর রশিদ বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা সতর্ক আছি। বিজয় দিবস উপলক্ষে নগরজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে এবং যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে। তিনি আরো বলেন, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ দিবসে কেউ যেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিঘ্নিত করতে না পারে, সে জন্য সংশ্লিষ্ট সব ইউনিটকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কোনো তথ্য বা অভিযোগ পাওয়া গেলে তা যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অতিরিক্ত কমিশনার আমিনুর রশিদ নাগরিকদের উদ্দেশে বলেন, সন্দেহজনক কোনো তৎপরতা নজরে এলে দ্রুত পুলিশকে অবহিত করার জন্য আমরা সবাইকে অনুরোধ জানাচ্ছি। এদিকে একই সঙ্গে ভিন্ন কৌশলে আরেকটি কর্মসূচি সামনে আনার পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। ছাত্রলীগের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর দাবি, ১৬ ডিসেম্বরকে ঘিরে ‘বিজয় শোভাযাত্রা’ আয়োজনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যাতে একদিকে রাষ্ট্রীয় উৎসবের আবরণ তৈরি করা যায়, অন্যদিকে সম্ভাব্য বিশৃঙ্খলা বা সহিংসতার দায় বিভ্রান্তিকরভাবে আড়াল করা সম্ভব হয়-যাকে তারা ‘এক ঢিলে দুই পাখি’ কৌশল হিসেবে বর্ণনা করছে। সূত্রের দাবি অনুযায়ী, এই কর্মসূচিটি ‘সচেতন নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রাম’ ব্যানারে বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি পোস্টারে ‘মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিজয় শোভাযাত্রা’ শিরোনামে কর্মসূচির সময় ও স্থান উল্লেখ করা হয়েছে। পোস্টারটিতে লাল-সবুজ রঙের পটভূমিতে বিজয়ের প্রতীকী দৃশ্য ব্যবহার করা হয়েছে, যা সাধারণ নাগরিকদের কাছে একটি স্বাভাবিক সাংস্কৃতিক কর্মসূচি হিসেবেই প্রতীয়মান হতে পারে।

ছাত্রলীগের সূত্রগুলোর ভাষ্য, এই পোস্টার ও কর্মসূচি ছড়িয়ে দেওয়ার কাজে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মী সক্রিয়ভাবে যুক্ত রয়েছেন। তাদের মধ্যে সাজ্জাদ হোসেন হৃদয় নামের একজনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্টারটি শেয়ার করে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি, ভারতীয় বামপন্থী কিছু সংগঠন বা গোষ্ঠীর অংশগ্রহণের সম্ভাবনার কথাও প্রচারের অংশ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে বলে সূত্রগুলো দাবি করেছে, যাতে কর্মসূচিটিকে ‘আন্তর্জাতিক সংহতি’ বা ‘প্রগতিশীল আয়োজন’ হিসেবে উপস্থাপন করা যায়।

এ প্রতিবেদনটি আওয়ামী লীগের সিক্রেট গ্রুপে থাকা ছাত্রলীগের একাধিক সূত্রের দেওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রস্তুত করা হয়েছে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন