জাতীয় ডেস্ক :
নরসিংদীর পলাশে ১৪টি ইটভাটা গিলে খাচ্ছে একটি ইউনিয়নের কৃষি জমি, রাস্তাঘাট ও পরিবেশ। বৈধ ও অবৈধ এসব ইটভাটার কারণে এলাকাটি বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় বিপাকে পড়েছেন স্থানীয়রা। নিময়নীতি না মেনে পাশাপাশি এত ইটভাটা স্থাপন হলেও নেই প্রশাসনের কোনো পদক্ষেপ।
পরিবেশ অধিদপ্তর নরসিংদী জেলা কার্যালয়ের তথ্যমতে, জেলায় ২৫টি অবৈধসহ মোট ইটভাটার সংখ্যা ১৫০ টি। এরমধ্যে পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নে ১৪টি ইটভাটার মধ্যে ৯টি বৈধ ও ৫টি অবৈধ। তবে স্থানীয়দের হিসাবমতে এ ইউনিয়নে অবৈধ ইটভাটার সংখ্যা আরও বেশি।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, এক বা দুই ফসলি কৃষিজমিতে ইটভাটা স্থাপনের নিয়ম না থাকলেও এখানে প্রায় সব ইটভাটা-ই ফসলি জমির ওপর স্থাপন করা। দীর্ঘদিন ধরে নিয়মনীতি না মেনে ধানসহ বিভিন্ন ফসলি জমির উর্বর মাটি কেটে নেয়া হচ্ছে কাজৈর, ইসলামপাড়া, গালিমপুর, ভিরিন্দা ও সান্তানপাড়ার ইটভাটায়। ট্রলি দিয়ে দিন ও রাতে সমানতালে মাটি ও ইট পরিবহনের কারণে ভেঙে পড়েছে ইউনিয়নের প্রায় সকল রাস্তাঘাট। ইটভাটার কালো ধোয়া ও ধুলাবালির কারণে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে আশেপাশের বাড়িঘর। চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে কৃষিজমি, ফলন হচ্ছে না বিভিন্ন ফলফলাদির গাছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ইটভাটার প্রভাবশালী মালিকদের এসব আগ্রাসনের প্রতিবাদ করলে এলাকাবাসী ও কৃষকদের হুমকি দেয়া হয়। রাস্তাঘাট ভেঙে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়লেও রহস্যজনক কারণে নীরব ভূমিকায় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিরাও। কৃষিজমিতে ভাটা স্থাপনের নিয়ম না থাকলেও ইউনিয়ন পরিষদ ও কৃষি বিভাগের ছাড়পত্র পেয়ে ভাটা স্থাপনের অনুমতি পেয়ে যাচ্ছে ভাটা মালিকরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইটভাটা সংলগ্ন বাসিন্দারা জানান, যেসব জমিতে ভাটা গড়ে তোলা হয়েছে এসব জমিতে ধানসহ কলা ও সবজি চাষ হতো। পরে এসব জমিসহ আশপাশের জমিগুলোতে গড়ে উঠেছে একাধিক ইটভাটা। ইটভাটার কালো ধোয়া ও ধুলাবালির কারণে আশপাশের সব জমি এখন আবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। কৃষিজমির মাটি কেটে ভাটায় নিয়ে বড় বড় গর্ত করার ফলে আশেপাশের ধানের জমিও ভেঙে পড়ছে।
এছাড়া ট্রলি চলাচলের কারণে সামনের রাস্তাও ভেঙে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এছাড়া বেশকিছু সংখ্যক সড়ক ভেঙে যাওয়ায় চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। বৃষ্টি হলে পায়ে হেঁটেও চলাচল করা দায় হয়ে পড়েছে। প্রতিবাদ করলে হুমকি দেয়া হয়। অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করাসহ নিয়মনীতি না মেনে ইটভাটা স্থাপন করা না হলে এলাকার কৃষি, জৈববৈচিত্র, আবাসন ও পরিবেশ হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়বে বলে জানান স্থানীয়রা।
কাজৈর এলাকার এক গৃহবধূ বলেন, বাড়ির আঙিনায় ফলফলাদির গাছে ফলন হতো। বাড়ির সামনে ইটভাটা হওয়ার কারণে এখন ফল ধরে না। ধুলোবালির কারণে দরজা জানালা বন্ধ করে পর্দা টানিয়েও রেহায় পাচ্ছি না। অভিযোগ জানালে ইটভাটা মালিকরা বাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিতে বলেন।
যোগাযোগ করা হলে পরিবেশ অধিদপ্তর নরসিংদী জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মুহম্মদ হাফিজুর রহমান জানান, ফসল হয় না এমন জমিতে কৃষি বিভাগের অনাপত্তিপত্র পেলেই ইটভাটা স্থাপনের অনুমতি দেয়া হয়ে থাকে। কৃষিজমিতে ইটভাটা স্থাপনের অনুমতি দেয়া হয় না। তবে আগে যেসব ইটভাটা অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে সেগুলোর ছাড়পত্র বাতিল করে জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরে তালিকা পাঠানো হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নরসিংদীর উপ পরিচালক ছাইদুর রহমান বলেন, কৃষি জমিতে ভাটা স্থাপন যেন না করতে পারে সেজন্য সকল কৃষি কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেয়া আছে। কোনো কৃষিজমিতে ভাটা করার অনাপত্তিপত্র দেয়া হয় না। কোথাও এর ব্যত্যয় হয়ে থাকলে সরেজমিন গিয়ে দেখে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
নরসিংদীর জেলা প্রশাসক আবু নইম মোহাম্মদ মারুফ খান বলেন, নতুন ইটভাটা স্থাপনের ক্ষেত্রে সার্বক্ষণিক নজরদারি রয়েছে। অনুমতিবিহীন কোনো ইটভাটা নরসিংদী জেলায় চলতে পারবে না। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করাসহ এসব অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে।