হোম ফিচার হৃদরোগ চিকিৎসায় বাংলাদেশ স্বনির্ভর হয়ে উঠেছে : প্রধানমন্ত্রী

অনলাইন ডেস্ক :

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার স্বাস্থ্যসেবাকে আরও সাশ্রয়ী করেছে এবং এটিকে প্রতিটি দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি হৃদরোগের চিকিৎসায় বাংলাদেশকে প্রায় স্বনির্ভর করে তুলেছে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন হৃদরোগের চিকিৎসায় প্রায় স্বাবলম্বী। হৃদরোগের ৯৫ থেকে ৯৮ শতাংশ চিকিৎসার সক্ষমতা রয়েছে এবং দেশে দক্ষ জনশক্তি, আধুনিক প্রযুক্তি এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি রয়েছে।’

আজ শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে বাংলাদেশ কার্ডিওভাসকুলার রিসার্চ ফাউন্ডেশন আয়োজিত তৃতীয় বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে প্রচারিত পূর্বে-রেকর্ড করা ভিডিও বার্তায় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

প্রতি বছর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে ১৭ দশমিক ৯ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যুর কথা উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘বিশ্বে মানুষের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হল হৃদরোগ।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার প্রায় ২৭ শতাংশ। প্রতি হাজারে ১০ জন শিশু হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছে এবং প্রতি পাঁচজন যুবকের মধ্যে একজন  হৃদরোগের ঝুঁকিতে রয়েছে। খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক ব্যায়ামের অভাব, ধূমপান এবং ডায়াবেটিসের কারণে হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। হৃদরোগীদের চিকিৎসা সুবিধা উন্নত করার পাশাপাশি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার ওপর আমাদের নজর দিতে হবে।’

স্বাস্থ্য খাতের সার্বিক উন্নয়নে তাঁর সরকারের পদক্ষেপের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও গত ১৪ বছরে স্বাস্থ্য খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। এ পর্যন্ত ১১টি স্নাতকোত্তর সুপার বিশেষায়িত হাসপাতাল, কার্ডিওভাসকুলার হাসপাতাল, বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, ক্যানসার হাসপাতাল, নিউরোসায়েন্স হাসপাতাল এবং অন্যান্য হাসপাতাল স্থাপনের পাশাপাশি সারা দেশে ৬০০ টিরও বেশি হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গ্রামের মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে আমরা ১৮ হাজার ৫০০টি কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছি। হাসপাতাল থেকে ত্রিশ প্রকার ওষুধ বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে। সারা দেশে ৪৩টি হাসপাতালে টেলি-মেডিসিন সেবা চালু করা হয়েছে। যেখানে মা ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ৩০ হাজার স্যাটেলাইট ক্লিনিক রয়েছে। এ ছাড়া পাঁচ লাখ অটিস্টিক শিশুকে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য ১০৩টি সেবা কেন্দ্র রয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) আমাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে বাংলাদেশকে পোলিও ও ধনুষ্টংকার (টিটেনাস) মুক্ত দেশ ঘোষণা করেছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার প্রতিটি জেলায় একটি করে মেডিকেল কলেজ নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে। ২০০৯ সালের ৫০টি থেকে দেশে মেডিকেল কলেজের সংখ্যা এখন  ১১৫টি। মেডিকেল কলেজে আসন সংখ্যা এখন ১০ হাজার ৭৮৯, যা ২০০৯ সালে ছিল মাত্র দুই হাজার ৫০টি। ডেন্টাল মেডিকেল কলেজ ও ইউনিটের সংখ্যা ৩৭টি। যা ২০০৯ সালে ছিল মাত্র ১৩টি। প্রতিটি বিভাগে একটি করে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ করব এবং ইতিমধ্যে চারটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। গত তিন বছরে ১০ হাজার চিকিৎসক এবং ১৫ হাজার নার্স ও মিডওয়াইফ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।’

সরকার প্রধান বলেন, ‘আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা ব্যাপকভাবে উন্নত হয়েছে এবং চিকিৎসকদের দক্ষতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে যেসব রোগের চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে হতো, সেসব রোগের চিকিৎসা এখন দেশেই হচ্ছে। বিভিন্ন জটিল রোগ যেমন কিডনি, লিভার, বাইপাস, নিউরো সার্জারি এবং বোন-ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট এখন বাংলাদেশে সফলভাবে চিকিৎসা হচ্ছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকরা এখন সফলভাবে হৃদরোগের চিকিৎসা দিচ্ছেন যার সুফল জনগণ পাচ্ছে এবং এর ফলে দেশের বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে। হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসার জন্য একটি সম্পূর্ণ কার্ডিয়াক ইউনিট স্থাপনের কাজ চলছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) একটি সম্পূর্ণ কার্ডিওলজি ও কার্ডিয়াক সার্জারি ইউনিট নির্মাণের মাধ্যমে আরও দক্ষ হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ তৈরির সুযোগ রয়েছে। বিএসএমএমইউতে ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট একটি বিশ্বমানের কার্ডিওভাসকুলার অব সায়েন্স অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট স্থাপন করা হয়েছে।’

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন