জাতীয় ডেস্ক:
রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যেই এবার জ্বালানি খাতে প্রভাব ফেলছে ইসরাইল-হামাস সংঘাত। বিশ্ব বাজারে এরইমধ্যে বাড়তে শুরু করেছে তেল-গ্যাসের দাম। এমন পরিস্থিতি ভাবনায় ফেলছে বাংলাদেশকেও। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংঘাত দীর্ঘায়িত হলে অনেকটা মধ্যপ্রাচ্য নির্ভর আমদানির কারণে বড় সংকটে পড়তে পারে বাংলাদেশ। তবে কয়লাভিত্তিক জ্বালানি নিশ্চিত করা গেলে কিছুটা সমাধান মিলতে পারে বলে মনে করছেন তারা।
রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে দেশের জ্বালানি খাতের দগদগে ঘা পরিস্থিতি এখনো কাটেনি পুরোপুরি। দাম কিংবা সরবরাহ—দুই ক্ষেত্রেই বিরূপ প্রভাব ফেলেছে বৈশ্বিক টালমাটাল অবস্থা। ইউক্রেন যুদ্ধের আগে দেশে গ্রাহক পর্যায়ে যে দামে মিলতো জ্বালানি তেল, এখন সেখানে গুনতে হচ্ছে ৩৬ থেকে ৪৬ শতাংশ বাড়তি দাম। গ্যাসের ঘাটতিও ভুগিয়েছে সব খাত।
এই অবস্থার মধ্যে নতুন করে উদ্বেগ জাগাচ্ছে হামাস-ইসরাইল সংঘাত। দেশে জ্বালানি আমদানির বড় অংশই মধ্যপ্রাচ্যনির্ভর। বাংলাদেশ মূলত সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকেই আমদানি করে থাকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল। এছাড়া পরিশোধিত জ্বালানি তেলেরও অন্যতম উৎস মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ। আর তরলিকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করা হয়ে থাকে কাতার ও ওমান থেকে।
এমন অবস্থায় শঙ্কা জাগছে জ্বালানির বৈশ্বিক বাজারে ইসরাইল-হামাস সংঘাতের সম্ভাব্য ধাক্কা নিয়ে। ফিলিস্তিন পরিস্থিতির অবনতিতে বৈশ্বিক জ্বালানি তেলের দাম ৪ শতাংশ আর ইউরোপে গ্যাসের দাম ১৪ শতাংশ উল্লম্ফনের প্রসঙ্গ টেনে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের পূর্বাভাস, ফের হুমকিতে পড়তে পারে বৈশ্বিক জ্বালানি পরিস্থিতি।
এমন অবস্থায় ধাক্কা এলে কীভাবে সম্ভাব্য পরিস্থিতি সামাল দিতে পারে বাংলাদেশ? আপতকালীন পরিস্থিতি তাই ঘুরেফিরেই আসছে সাশ্রয় আর জ্বালানি ব্যবহারে কৌশলী হওয়ার পরামর্শ। তাছাড়া আসছে শীতও দিতে পারে কিছুটা স্বস্তি। এমন অবস্থায় সামনে আসছে মজুদ সক্ষমতা বাড়ানোর প্রসঙ্গও।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা খুবই শঙ্কিত। আমাদের তেল এবং গ্যাস- দুটিই মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক। কিন্তু হামাস-ইসরাইল সংঘাত দীর্ঘকালীন হলে জ্বালানি খাতে বড় ধরনের সংকট তৈরি হবে। জ্বালানির মূল্য বেড়ে গেলে সব ক্ষেত্রেই দাম বাড়বে। সবাই এটার সুযোগ নিতে চাইবে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন বলেন, ‘জ্বালানির দাম বেড়ে গেলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবো। কারণ হচ্ছে, আমরা বড় ধরনের আমদানিনির্ভর। এখন বড় একটা সংঘাত চলছে। এটা শিগগিরই সমাধান হয়ে গেলে কোনো ভয় নেই। কিন্তু এই সংঘাত বেড়ে গেলে জ্বালানি ক্ষেত্রে প্রভাব পড়বে।’
জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের সাশ্রয়ী হতে হবে। তবে একটা সুবিধা হলো, শীত মৌসুম চলে আসছে। এ সময় চাহিদা কিছুটা কম থাকবে বিশেষ করে বিদ্যুতের ক্ষেত্রে।
আর অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন বলেন, এখন যে সমস্যাটা দেখা দিচ্ছে, সেটা মধ্যপ্রাচ্যে। সেখান থেকে মূলত আমাদের তেল এবং গ্যাসের সরবরাহটা হয়। এই দুইটার মধ্যে একটার সরবরাহ সমস্যা হতে পারে। কিন্তু কয়লা আসে অন্য জায়গা থেকে। তাই আমরা কয়লার সরবরাহ ঠিক রাখি এবং কিছুটা বেশি ক্রয় করে রাখি, তাহলে এই সংকট থেকে আমরা বাঁচতে পারি।