হোম জাতীয় হলমার্ক কেলেঙ্কারি: অর্থ আত্মসাৎকারীদের ফাঁসি হওয়া উচিত: আদালতের পর্যবেক্ষণ

হলমার্ক কেলেঙ্কারি: অর্থ আত্মসাৎকারীদের ফাঁসি হওয়া উচিত: আদালতের পর্যবেক্ষণ

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 80 ভিউজ

জাতীয় ডেস্ক:

নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নিয়ে ১০ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় হলমার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তানভীর মাহমুদ ও তার স্ত্রী চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলামকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। দুজনকে জরিমানা করা হয়েছে ১০ কোটি টাকা। যাবজ্জীবন সাজা দেয়া হয়েছে আরও ৭ আসামিকে। আদালত বলছেন, অর্থ আত্মসাৎকারীদের ফাঁসি হওয়া উচিত।

সোনালী ব্যাংকের তিন হাজার ৬৯৯ কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতি ও আত্মসাতের অভিযোগে হলমার্কসহ ৬টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ৩৮টি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এক যুগ আগে হওয়া এসব মামলার মধ্যে ১১টি হলমার্কের বিরুদ্ধে।

মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) হলমার্কের এমডি মো. তানভীর মাহমুদ ও তার স্ত্রী জেসমিন ইসলামসহ ৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১ এর বিচারক মো. আবুল কাশেম।

মামলায় আদালতের পর্যবেক্ষণ হলো—‘অত্র মামলা দেশের ব্যাংকিং ইতিহাসে এক বিস্ময়কর ঘটনা। যে অপরাধীরা দেশের জনগণের আমানত, দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা, দেশের অর্থনীতিকে খেলো মনে করে, তাদের মৃত্যুদণ্ডের মতো সাজা হওয়া উচিত। কিন্তু সংশ্লিষ্ট আইনে সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন। এমতাবস্থায় অপরাধের সঙ্গে সরাসরি জড়িতদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলো।’

যদিও আলোচিত এ মামলায় আদালতের রায়ে ক্ষুব্ধ আসামিপক্ষের আইনজীবীর ঘোষণা হাইকোর্টে যাওয়ার।

এর আগে গত মঙ্গলবার (১২ মার্চ) রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য এদিন ধার্য করেছিলেন আদালত।

তার আগে গত ২৮ জানুয়ারি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১ এর বিচারক মো. আবুল কাশেম রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য ২৮ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন। ওইদিন দুদকের আইনজীবী মীর আহম্মেদ সালাম মামলাটি রায় থেকে উত্তোলন পূর্বক দুই জন ম্যাজিস্ট্রেটের সাক্ষ্য নেয়ার আবেদন করেন। আদালত দুদকের আবেদনটি মঞ্জুর করেন।

এরপর আদালত মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ৪ মার্চ দিন ধার্য করেন। এদিন (৪ মার্চ) তৎকালীন ঢাকার দুই মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুর রহমান ও কেশব রায় চৌধুরী আদালতে সাক্ষ্য দেন। এদিন তাদের সাক্ষ্য শেষে যুক্তি উপস্থাপনের জন্য ১২ মার্চ দিন ধার্য করেন। পরে ১২ মার্চ রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য আজকের দিন ধার্য করেন।

২০১২ সালে সোনালী ব্যাংকের তৎকালীন শেরাটন করপোরেট শাখায় প্রায় চার হাজার কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতি ঘটনায় তোলপাড় হয় সারা দেশে। অর্থ লোপাটের ঘটনা পরিচিতি পায় হলমার্ক কেলেঙ্কারি হিসেবে।

মামলার সূত্রে জানা গেছে, ভুয়া ম্যাক্স স্পিনিং মিলসের হিসাবে সুতা রফতানির নামে ৫২৫ কোটি ৬২ লাখ ৯২ হাজার ৮০০ টাকা মূল্যের সুতা রফতানি করা হয় বলে নথিপত্রে দেখানো হয়। ওই হিসাবে পুরো অর্থ জমা করা হলে তা থেকে ১৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা হলমার্কের আরেক ভুয়া প্রতিষ্ঠান অ্যাপারেল এন্টারপ্রাইজের হিসাবে স্থানান্তর করা হয়, যা পরে তানভীর ও তার স্ত্রী তুলে নেন।

এরপর ২০১২ সালের ৪ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে প্রতারণা, জালিয়াতি, অর্থ আত্মসাৎ, পরস্পরের যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অর্থের অপব্যবহার এবং পাচারের অভিযোগে রমনা থানায় এ মামলা করে দুদক। ২০১৬ সালের ২৭ মার্চ ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লা মামলার অভিযোগ গঠন করে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১ এ বদলির আদেশ দেন।

এ মামলার আসামিরা হলেন- হলমার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. তানভীর মাহমুদ, তার স্ত্রী ও গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম, তানভীরের ভায়রা ও গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক তুষার আহমেদ। টি অ্যান্ড ব্রাদার্সের পরিচালক তসলিম হাসান, ম্যাক্স স্পিনিং মিলসের মালিক মীর জাকারিয়া, প্যারাগন গ্রুপের এমডি সাইফুল ইসলাম রাজা, নকশী নিটের এমডি মো. আবদুল মালেক ও সাভারের হেমায়েতপুরের তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. জামাল উদ্দিন সরকার। এছাড়া সোনালী ব্যাংকের হোটেল শেরাটন বা রূপসী বাংলা শাখার সহকারী উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. সাইফুল হাসান, নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল মতিন ও সোনালী ব্যাংক ধানমন্ডি শাখার জ্যেষ্ঠ নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুন্নেসা মেরি। সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের জিএম অফিসের জিএম ননী গোপাল নাথ ও মীর মহিদুর রহমান, প্রধান কার্যালয়ের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন কবির, ডিএমডি মাইনুল হক, উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) শেখ আলতাফ হোসেন ও সফিজউদ্দিন এবং এজিএম মো. কামরুল হোসেন খান।

এর মধ্যে আসামি জামাল উদ্দিন সরকার, আলতাফ হোসেন জামিনে রয়েছেন। এছাড়া সাইফুল, মতিন, হুমায়ুন, গোপাল নাথ, তসলিম, সাইফুল, মেরী ও জাকারিয়া পলাতক রয়েছেন।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন