হোম জাতীয় সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কথা জানেই না মানুষ!

সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কথা জানেই না মানুষ!

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 63 ভিউজ

জাতীয় ডেস্ক:

সড়কে প্রতিদিন ঝরছে প্রাণ। তবে ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন ক’জন? বিষয়টি জানেনও না অনেকে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, ক্ষতিপূরণ পাওয়া যেমন জটিল তেমনি সময়সাপেক্ষও। যে কারণে ২০১৮ সালে চালু হওয়া বিধি গত বছর গেজেট হিসেবে প্রকাশের পর সুবিধাভোগীর সংখ্যা ২০০ পার হয়নি। দুর্ঘটনার এক মাসের মধ্যে আবেদনের বাধ্যবাধকতার কারণে অনেকে সুযোগবঞ্চিত হচ্ছেন বলে মনে করে মানবাধিকার সংস্থাগুলো।

স্বপ্ন ছিল প্রকৌশলী হওয়ার। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে বাবার পেশাই কাঁধে তুলে নিতে হয়েছে আসিফকে। মা আর বোনের সংসারে বাবাই ছিলেন মূল অবলম্বন। গত বছরের মাঝামাঝি রাস্তা পারাপারের সময় মিরপুরে বাসের ধাক্কায় মারা যান আসিফের বাবা। সেই থেকে কাপড় বুনেই চলছে মা আর বোনকে নিয়ে আসিফের সংসার।

সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হলে সরকার ক্ষতিপূরণ দেয়–এ বিষয়টি জানা ছিল আসিফের। কিন্তু বাবার মৃত্যুতে দিশেহারা পরিবারকে সামলে উঠতেই পেরিয়ে যায় এক মাস। নিয়মানুযায়ী দুর্ঘটনার ৩০ দিনের মধ্যেই ক্ষতিপূরণের আবেদন করতে হয়। তা করতে না পারায় ক্ষতিপূরণও জোটেনি আসিফের পরিবারের ভাগ্যে।

আসিফ তবুও ক্ষতিপূরণের ব্যাপারটি জানতেন। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণের বিষয়টি দেশের বেশিরভাগ মানুষই জানেন না। যারাও-বা জানেন তারা কতটুকু সুবিধা নিতে পারছেন সেটিও প্রশ্নসাপেক্ষ।

মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, ৩০ দিনের মধ্যে আবেদন করার সময়সীমা যথেষ্ট নয়। কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, তাকে তো আবেদন করার সুযোগটা দিতে হবে। যদি সুযোগই না পায়, তাহলে তো লঙ্ঘনের কোনো শেষ নেই। সুতরাং এ জন্য অবশ্যই সময় বাড়ানো প্রয়োজন এবং দায়িত্ব বিআরটিএ-কে নিতে হবে।

আর বিষয়টি প্রচার হয়নি বিধায় অনেকেই এ সম্পর্কে জানে না বলেও মনে করছেন ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ। তাই সময় বাড়িয়ে সংবাদমাধ্যমসহ বিভিন্ন উপায়ে বেশি বেশি প্রচারের পরামর্শ দেন তিনি।

রোডসেফটি ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান এমএস সাদিকুল মনে করছেন, একটি ট্রাস্ট করতে পারলে কোনো দুর্ঘটনা ঘটার পর তারা সব ব্যবস্থা করবে। তিনি বলেন, ‘কেউ মারা গেলে পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে। তখন কেইবা আবেদন করবে, কেইবা তদবির করবে, কেইবা টাকা তুলবে। তারা তো শোক কাটাইতে ব্যস্ত। একটা ট্রাস্ট করতে হবে। তাদের কাজ হবে যেখানেই দুর্ঘটনা ঘটুক। তাকে চিহ্নিত করে টাকাটা পৌঁছে দেয়া।’

অবশ্য বিআরটিএ এই সময়কেই যথেষ্ট মনে করছে। সংস্থাটির চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলছেন, সময় বেশি দিলে ভুয়া আবেদন করার সুযোগ বাড়তে পারে। তখন একটি জটিল পরিস্থিতি তৈরি হবে।

তিনি জনবলের দিকেও তাকানোর অনুরোধ করেন। বলেন, বিআরটিএর এত জনবল নেই যে ঘরে ঘরে গিয়ে সব তথ্য নিয়ে এসে টাকা পৌঁছে দেবে। এখানে অনুসন্ধান করতে হবে। যদিও আমাদের কমিটি আছে, কিন্তু জনবল অনেক কম। প্রতিদিন এত দুর্ঘটনা হয়, এ জনবল দিয়ে চার ভাগের এক ভাগ কাজও সামাল দেয়া সম্ভব না।

আইন কার্যকরের পর এখন পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ পেতে আবেদন করেছেন ১ হাজার ৩ জন। যাদের মধ্যে ১৯৪ জনকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে প্রায় সাড়ে ৮ কোটি টাকা।

২০২৩ সালে সড়কে মৃত্যুর পরিসংখ্যান

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিবেদন অনুযায়ী গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ৯০২ জন প্রাণ হারিয়েছেন। ৬ হাজার ২৬২টি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ১০ হাজার ৩৭২ জন।

দুর্ঘটনায় ৬৪৭ জন নারী, ৪৬৬টি শিশু, ৪১৬ জন শিক্ষার্থী, ৮১ জন শিক্ষক, ১ হাজার ৫২৬ জন চালক, ২৬০ জন পরিবহন শ্রমিক, ৮ জন প্রকৌশলী, ৭ জন আইনজীবী, ৭৭ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও ২২ জন চিকিৎসক প্রাণ হারিয়েছেন।

দুর্ঘটনায় ১৩ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ১৫ জন সাংবাদিক প্রাণ হারিয়েছেন। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৭৩ সদস্যও প্রাণ হারিয়েছেন, এর মধ্যে ১৬ জন সেনাসদস্য, ৪০ জন পুলিশ, ১ জন র‌্যাব, ৭ জন বিজিবি, ৩ জন নৌবাহিনীর সদস্য, ৩ জন আনসার, ২ জন ফায়ার সার্ভিস সদস্য, ১ জন এনএসআই সদস্য রয়েছেন।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন