হোম অন্যান্যসারাদেশ স্বাস্থ্যবিধি না মানায় কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে শার্শা উপজেলায় 

স্বাস্থ্যবিধি না মানায় কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে শার্শা উপজেলায় 

কর্তৃক
০ মন্তব্য 147 ভিউজ

মিলন হোসেন বেনাপোল ;
করোনা সংক্রমনের সময়ে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে যেন ঈদ উৎসবে মেতেছে যশোরের শার্শার মানুষ। শার্শার নাভারন ও বেনাপোল এলাকা রেডজোন ঘোষণা হলেও সফলতা আসেনি। প্রতিদিন রেড জোনে কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

২২এপ্রিল শার্শা উপজেলায় প্রথম করোনা সনাক্ত হয়।এ নিয়ে উপজেলায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৭২জনে।এর মধ্যে ৬৯জন চিকিৎসাধীন আছেন এবং ১০১জন সুস্থ্য হয়েছেন। মারা গেছেন ২জন বলে জানান শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ইউসুফ আলি।

উপজেলার কোথাও সরকারের স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না কেউ। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নিয়মের বালাই নেই। নাভারন ও বেনাপোল এলাকায় করোনায় আক্রান্ত নতুন রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকিও হুমকির মধ্যে পড়ছে। রেড জোন ঘোষণার পরও ওইসব এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়েনি। আগের মতোই প্রায় স্বাভাবিকভাবেই সব কার্যক্রম চলছে।

ঈদের পর থেকে সাধারন মানুষ দ্বিগুণ ভাড়া দিয়েও শারীরিক দূরত্ব না মেনেই শার্শা উপজেলার সড়ক মহাসড়কের সর্বত্র তিন চাকার থ্রিহুইলার,নছিমন,করিমন, ইজিবাইক, পাখি ভ্যানে,মোটরসাইকেলে চেপে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।

মহামারীর বিস্তার ঠেকানোর লক্ষ্যে বাসে ও তিনচাকায় অর্ধেক যাত্রী নেওয়ার কথা থাকলেও চালকরা আগের মতোই যাত্রী বহন করছেন। চালক ও যাত্রীরা শারীরিক দূরত্বের বিষয়টি মোটেও তোয়াক্কা করছেন না।এমন কি মাস্কের ব্যবহারও উঠে গেছে।

শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ইউসুফ আলি বলেন,যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষ স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলবে ততদিন করোনা সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা বাড়তেই থাকবে। নাভারন ও বেনাপোল এলাকায় প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চললেও মানুষের মাঝে কোনো ভীতি নেই। তারা করোনাকে পরোয়া না করে ইচ্ছেমতো চলাফেরা করছেন। একপ্রকার তারা কোন কিছুই মানছেন না। এতে করে পরিস্থিতি বেসামাল।

এদিকে বাজারঘাটে কারনে অকারনে ঘুরাঘুরির পাশাপাশি শারীরিক দুরত্ব না মেনেই ঘুরতে, অফিসে যেতে,প্রয়োজন মেটাতে সব কাজেই এখন ব্যবহার হচ্ছে বাসের পাশাপাশি তিনচাকা।

পাবলিক বাসের ভাড়া বাড়ানোর সুযোগকে কাজে লাগিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে দ্বিগুণ ভাড়া নিয়ে এরা যশোর- বেনাপোল ও নাভারন-সাতক্ষীরা মহাসড়কও দখলে রেখেছে।প্রতিটি তিনচাকায় গাদাগাদি করে অন্তত দশ জন যাত্রী নিয়ে এরা যাতায়াত করছে।

তিন চাকার যানবাহনে ওভার লোড ও চলাচল নিয়ন্ত্রন না হলে ব্যাপক ভাবে করোনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য বিভাগ। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে এ ব্যাপারে নিয়মিত অভিযান চললেও রাস্তা ঘাটে তার তেমন কোন প্রভাব পড়ছে না।

তিনচাকার একজন যাত্রী সাদিপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলাম বলেন, “এরা ডবল ভাড়া নেচ্ছে। আবার ১০জন যাত্রী না হওয়া পর্যন্ত ছাড়ছে না।তাড়াতাড়ি যাওয়ার দরকার তাই চাপাচাপি করে বসেও যাতি হচ্ছে।”

কাগজ পুকুর গ্রামের হাবিবুর রহমান বলেন,পনের মিনিটের পথ গাদাগাদি করে বইছি এতে আর কী হবে?যা হয় হবে।ভয় করলি ভয়,না করলি নয়।”

যশোর ও সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকা থেকে ট্রাকে কাঠ উঠানোর কাজ করেন এমন ১৫জন শ্রমিকের একটি দলের একজনেরও মুখে মাস্ক নেই।মাস্কের কথা জানতে চাইলে ওই দলের সর্দার আব্দুর রাজ্জাক বলেন,ট্রাকে কাঠ তুলার কাজ করি।মাস্ক মুখি দিয়ে কি দম বন্ধ হয়ে মরবো ?

কথা হয় কয়েকজন তিনচাকার চালকের। প্রথমেই তারা বলেন,বেশি যাত্রী নিয়ে ধরা পড়লে অর্থদন্ড কিম্বা শাস্তি ভোগ করতে হচ্ছে।তারপরও বাড়ি বসে থাকলি খাবার পাবো কোথায় সাথে রয়েছে কিস্তির চিন্তা।সংশয়ে দিন কাটাচ্ছি।করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারি তাই মৃত্যুর ভয় উপেক্ষা করেও রাস্তায় নামিছি।

থ্রিহুইলার চালক ইলিয়াস বলেন, পেটের দায়ে রাস্তায় নামিছি। থ্রিহুইলার না চালালি খাবো কী?এই সময় আমারা প্যাসেঞ্জার বেশি পাচ্ছি।আয় রোজগারও ভাল হচ্ছে।

বেনাপোলের একজন সংবাদকর্মী ‘সোহাগ হোসেন বলেন,করোনার অজুহাতে চালকরা শারীরিক দূরত্বের বিষয়টি না মানলেও যাত্রীদের কাছ থেকে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করছেন ঠিকই।প্রতিটি গাড়িতে প্রতিদিন অন্তত ১০০যাত্রী যাতায়াত করে।অধিকাংশেরই মুখে মাস্ক নেই।জীবানু নাশক স্প্রের কোন ব্যবস্থা নেই।এভাবে যদি তিন চাকার যানবাহন চলতে থাকে তাহলে ব্যাপক ভাবে করোনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

শার্শা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) খোরশেদ আলম চৌধুরী বলেন, আমরা অনেক চেষ্টা করেছি, মাইকিং করেছি,নিজে সরেজমিনে বুঝিয়েছি,জরিমানা করেছি কিন্তু মানুষ তো অসচেতন,কিছুই মানতে চাচ্ছেনা। ধর্মের দোহাই দিচ্ছে,আরও কতো কি ব্যাখ্যা।আমাদের নিজ থেকে সচেতন না হলে আসলেই তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।

“করোনাভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। মানুষ কারণে-অকারণে নানা অজুহাতে বাইরে চলাচলের চেষ্টা করছে। অকারণে বাইরে বের হওয়া মানুষগুলোকে বুঝিয়ে আবার বাড়ি ফেরত পাঠানো হচ্ছে।আমরা চলে আসলে আবার অবস্থা ‘যা তাই’। তারপরও সরকারি নির্দেশনা অমান্য করলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন