হোম অন্যান্যসারাদেশ স্বামীকে মৃত দেখিয়ে হাসিনার নামে মামলা, সেই কুলসুম গ্রেফতার

স্বামীকে মৃত দেখিয়ে হাসিনার নামে মামলা, সেই কুলসুম গ্রেফতার

কর্তৃক Editor
০ মন্তব্য 7 ভিউজ

অনলাইন ডেস্ক:
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে শহিদ ও আহতদের বিচার দাবিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। তেমনই একটি হত্যা মামলা সাভারের আশুলিয়াতেও দায়ের করা হয়। তবে ঐ মামলাটি মিথ্যা হওয়ায় এক নারী এবং তার দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

শুক্রবার সকালে তাদের গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর।

এর আগে বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) দুপুরে কক্সবাজারের আলেকজাহান এসএম পাড়ার মোস্তাক আহমেদের বাড়ি থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করে রাতেই আশুলিয়া থানায় নিয়ে আসেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রকিবুল ইসলাম।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- মিথ্যা মামলার কারিগর মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় থানার টেপড়া গ্রামের মেছের আলীর ছেলে রুহুল আমীন, একই জেলার ঘিওর থানার ফুলহারা গ্রামের মৃত মাসুম আলীর ছেলে শফিকুর রহমান ও ঘিওর থানার স্বল্পসিংজুরি বাঙলা এলাকার আব্দুল খালেকের মেয়ে কুলসুম বেগম।

মিথ্যা মামলার বাদী কুলসুম বেগম জানান, চার বছরের সন্তানকে নিয়ে স্বামী আল-আমীনের সঙ্গে শ্বশুরবাড়ি সিলেটে থাকতেন তিনি। গত ২৮ আগস্ট দাম্পত্য কলহের জেরে সিলেট থেকে সাভারে বোনের কাছে চলে আসেন কুলসুম। আসার পথে গাড়িতে শফিকুর রহমানের সঙ্গে তার পরিচয় হয় এবং তিনি চাকরির জন্য সাভারে এসেছেন বলে জানান। এ সুযোগে শফিক কুলসুমকে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে রুহুল আমীনের কাছে নিয়ে যান।

পরে রুহুল আমীন ও শফিকুর চাকরির জন্য জন্ম নিবন্ধন চেয়ে সাভারের সেনা শপিং কমপ্লেক্সে দেখা করেন। এ সময় তারা জন্ম নিবন্ধন দিয়ে আমার স্বামীকে মৃত দেখিয়ে মামলা প্রস্তুত করেছেন বলে আমাকে জানান। আমি রাজি না হলে তারা নানা রকম ভয়ভীতি দেখিয়ে আমাকে আদালতে নিয়ে উকিলের সামনে কাগজে স্বাক্ষর নেন। রুহুল আমীন ও শফিকুর রহমান ব্ল্যাকমেইল করে মামলা করতে বাধ্য করেছেন এবং আমাকে কক্সবাজারে বাসা ভাড়া করে দিয়ে থাকতে বলেন।

কুলসুমের বোন ফাতেমা বলেন, আমার বোনকে রুহুল আমীন নানাভাবে ভয় দেখিয়েছেন। তিনি মামলা, ফাঁসি এমনকি সবসময় রুহুলের কাছে পিস্তল থাকে বলে ভয়ভীতি দেখান। রুহুল আমীন বেশ কয়েকজনের নাম মামলা থেকে কেটে দিয়েছেন। সে সময় আমার ছোটবোনকে আদালতে নিয়ে যান তারা। তারা বলতেন যে অজ্ঞাত ছেলেটা মারা গেছে তিনি যেন বিচার পান সেজন্য এই মামলা দায়ের করেছেন। পরে বুঝতে পারি তারা একটি চক্র ও মামলা বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত। আমার বোন আশুলিয়া কিংবা সাভারে থাকত না। সে থাকত সিলেটে। শফিক ও রুহুল আমার বোনকে ফাঁসিয়েছেন।

অভিযুক্ত শফিকুর রহমান বলেন, কুলসুমের সঙ্গে আমার গাড়িতে পরিচয় হয়। পরে তাকে নিয়ে আমি রুহুল আমীনের কাছে যাই। তিনি মামলার সব কাজ করেছেন।

অভিযুক্ত রুহুল আমীন বলেন, কুলসুমই আমার কাছে মামলা করার জন্য সহযোগিতা চেয়েছেন।

টাকার বিনিময়ে আসামির নাম বাদ দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, মনোয়ার মাস্টার, বাশার, ইলিয়াস শাহী ও সারোয়ার তালুকদারের নাম মামলা থেকে বাতিলের জন্য এভিডেভিড করা হয়েছে। তবে তাদের কাছে কোনো টাকা নেওয়া হয়নি।

আশুলিয়া থানার এসআই রকিবুল ইসলাম বলেন, তদন্ত করে বাদীকে উদ্ধার করে দুইজনকে আটক করা হয়েছে। তারা জীবিত স্বামীকে মৃত দেখিয়ে ছাত্র-জনতা হত্যা মামলা দায়ের করেছিলেন। যে মামলায় আসামি করা হয়েছিল ১৩০ জনকে। অথচ বাদীর স্বামী এখনো বেঁচে আছেন এবং আদালতে উপস্থিত হয়ে আল-আমীন সব স্বীকার করেছেন।

আশুলিয়া থানার ওসি আবু বকর বলেন, জীবিত স্বামীকে মৃত দেখিয়ে ছাত্র-জনতা হত্যা মামলা দায়েরের ঘটনায় শফিক, রুহুল আমীন ও কুলসুমকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা মিথ্যা মামলার বিষয়টি স্বীকার করেছে। আগামীকাল শনিবার মামলার বাদী কুলসুমকে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদানের জন্য আদালতে পাঠানো হবে।

উল্লেখ্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় ছাত্র-জনতাকে লক্ষ্য করে নির্বিচারে গুলি ছুড়া হলে অন্তত অর্ধশতাধিক লোক মারা যায়। তাদের মধ্যে বেওয়ারিশ হিসেবে একজনের মরদেহ দাফন করা হয়।

সেই লাশটিকে নিজের স্বামী আল-আমিন দাবি করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৩০ জনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন কুলসুম বেগম। অবশেষে সেই মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় এর সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করা হয়েছে।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন