হোম খেলাধুলা স্টোকসের রেকর্ডগড়া ইনিংসও বাঁচাতে পারল না ইংল্যান্ডকে

খেলাধূলা ডেস্ক:

জয় পেতে ইংল্যান্ডের দরকার ৪৪ রান, হাতে ১ উইকেট। ১৯ রান করা জশ টং ততোক্ষণে হাত খুলে খেলা শুরু করে দিয়েছেন। কিন্তু স্টার্কের বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ের কাছে শেষমেশ পরাজিত হয়ে হলেন বোল্ড। শেষ হলো টেস্টের ইতিহাসের অন্যতম এক প্রতিদ্বদ্বিতামূলক ম্যাচের। টানটান উত্তেজনার ম্যাচে ইংল্যান্ডকে ৪৩ রানে হারিয়ে স্মরণীয় এক জয় পেল অস্ট্রেলিয়া।

ক্রিকেটের তীর্থভূমি লর্ডসে অনুষ্ঠিত অ্যাশেজের দ্বিতীয় টেস্টে কী ছিল না! বিনোদন, বিতর্ক, টেনশন এবং উত্তেজনায় যেন পরিপূর্ণ ছিল এই টেস্ট ম্যাচ। ঐতিহ্যবাহী টেস্ট ক্রিকেট যে কতোটা বিনোদনমূলক হতে পারে সেটাই দেখিয়ে দিয়েছেন ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটাররা। কিন্তু শেষমেশ জয়ের আনন্দে ভাসতে পারল শুধু অজি ক্রিকেটাররা। ২১৪ বলে ১৫৫ রানের রেকর্ডগড়া ইনিংস খেলেও দলের হার এড়াতে পারলেন না ইংলিশ অধিনায়ক বেন স্টোকস।

এই ম্যাচ জিতে পাঁচ ম্যাচের অ্যাশেজ সিরিজে ২-০ তে এগিয়ে গেল অস্ট্রেলিয়া। চলতি মাসের ৬ তারিখ লিডসে সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হবে ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া।

পঞ্চম দিনে জয়ের জন্য ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল ২৫৭ রান, হাতে ৬ উইকেট। দৃঢ়তা দেখিয়ে গত দিন শেষ করা বেন স্টোকস এবং বেন ডাকেট এদিনও শুরু করলেন দুর্দান্তভাবে। আগের দিনের ১১৪ রানের সঙ্গে ৬৩ রান যোগ করার পর ভাঙে স্টোকস-ডাকেট জুটি। উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ডাকেট।

বেয়ারস্টো এসে শুরুটা করেন আত্মবিশ্বাসী। কিন্তু শেষমেশ বিতর্কিতভাবে আউট হয়ে মাঠ ছাড়তে হয় এই ইংলিশ ব্যাটারকে। ব্যক্তিগত ১০ রানের মাথায় ক্যামেরন গ্রিনের একটি বাউন্সার ‘ডাক’ করে ক্রিজ থেকে বেরিয়ে আসেন বেয়ারস্টো। উদ্দেশ্য ছিল স্টোকসের সঙ্গে পরামর্শ করা। কিন্তু বল কুড়িয়ে অস্ট্রেলিয়ার উইকেটরক্ষক অ্যালেক্স ক্যারি স্টাম্প ভেঙে দেন তখনই। ক্রিকেটের নিয়ন অনুযায়ী আম্পায়ার বেয়ারস্টোকে আউট দেন। তবে এই ঘটনায় মাঠে বেশ উত্তাপ সৃষ্টি হয়েছিল।

বেয়ারস্টো আউট হওয়ার পরেও ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল ১৭৮ রান, হাতে ৪ উইকেট। স্বীকৃত ব্যাটারদের মধ্যে উইকেটে শুধু স্টোকসই। অনেকটা মৃতপ্রায় সেই ম্যাচকে আবারও জীবন্ত রূপ দেন ইংলিশ অধিনায়ক।

বেয়ারস্টোর আউটের পরই মূলত রুদ্রমূর্তি ধারণ করেন স্টোকস। একের পর এক ছক্কায় স্টার্ক-কামিন্সদের নাভিশ্বাস তুলে ছেড়েছেন ইংলিশ অধিনায়ক। পরপর তিন ছক্কায় সেঞ্চুরি পূর্ণ করার পর করেন দেড়শ’ও। একটা সময় মনে হচ্ছিল হেডিংলির মতো এই টেস্টটাও অজিদের হাতের মুঠো থেকে ছিনিয়ে নেবেন।

তবে অস্ট্রেলিয়া এবার আর সেই সুযোগ দিল না। ১৫৫ রানে ইংল্যান্ড অধিনায়ককে অ্যালেক্স ক্যারির ক্যাচে পরিণত করেন হ্যাজেলউড। নিজের চোখকে যেন এক মুহূর্তের জন্য বিশ্বাস করতে পারছিলেন না এই অলরাউন্ডার। ম্যাচটা সেখানেই হেরে যায় ইংল্যান্ড।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এটিই স্টোকসের সর্বোচ্চ ইনিংস। আগের সেরা ছিল ২০১৯ সালের হেডিংলিতে খেলা অপরাজিত ১৩৫ রান। ওই ম্যাচে তার অতিমানবীয় ব্যাটিং ও জ্যাক লিচের সঙ্গে শেষ উইকেটে অসাধারণ জুটিতে অবিশ্বাস্য এক জয় পেয়েছিল ইংল্যান্ড। লর্ডসেও তেমন কিছুর সম্ভাবনা জাগালেও পারলেন না স্টোকস।

স্টোকস আউট হওয়ার পর আরও দুই উইকেট পড়েছে মাত্র ১ রানের ব্যবধানে। শেষদিকে জশ টং কিছুটা চেষ্টা করলেও সেটা ব্যবধান কমানো ছাড়া কোনো কাজে আসেনি।

এর আগে প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার করা ৪১৬ রানের জবাবে ৩২৫ রানে অলআউট হয় ইংল্যান্ড। ৯১ রানের লিড নিয়ে ব্যাটিংয়ে নেমে দ্বিতীয় ইনিংসে ২৭৯ রানে অলআউট হয় অজিরা। শেষ ইনিংসে ইংল্যান্ডের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩৭১ রানের। জবাবে স্টোকসের বীরত্বপূর্ণ ইনিংসের পরেও ৩২৭ রানের বেশি তুলতে পারেনি ইংলিশরা।

সম্পর্কিত পোস্ট

মতামত দিন