বাণিজ্য ডেস্ক:
নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে রুখতে সেমিকন্ডাক্টর তৈরিতে প্রয়োজনীয় দুটি বিরল ধাতু রফতানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে চীন। দেশটির এই সিদ্ধান্ত যে ‘কেবল শুরু’, এমনটাই সতর্ক করেছেন চীনের বাণিজ্যনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ওয়েই জিয়াংগু।
বুধবার (৫ জুলাই) চায়না ডেইলি নিউজপেপারের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
চীনের ওপর চাপ আরোপ করা দেশগুলোকে সতর্ক করে দেশটির সাবেক এই উপ-বাণিজ্যমন্ত্রী জানান, যে সব দেশগুলো চীনের ওপর চাপ অব্যাহত রাখবে, তাদের আরও বেশ কিছুর জন্য প্রস্তুতি রাখা উচিত। এ তো কেবল শুরু।
চীনের আরোপ করা এই সিদ্ধান্তটিতে ‘পরিকল্পিত আঘাত’ বলেও উল্লেখ করেন ২০০৩ থেকে ২০০৮ সালে চীনের উপবাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা ওয়েই।
বর্তমানে চায়না সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক এক্সচেঞ্জের ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। ওয়েই হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যদি চীনের উচ্চ-প্রযুক্তি খাতকে লক্ষ্য করে বিধিনিষেধ অব্যাহত থাকে, তাহলে তার কঠিন জবাব হিসেবে পাল্টা ব্যবস্থা নেয়ার হারও বাড়বে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে ও বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) থেকে মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি জ্যানেট ইয়েলেনের বেইজিং সফরের ঠিক আগে দেয়া এ ঘোষণাকে বাইডের প্রশাসনের প্রতি চীনের একটি স্পষ্ট বার্তা হিসেবেই দেখছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, বেশ কিছু সময় ধরে চীনের চিপ খাতে চাপ প্রয়োগের প্রচেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র। এক্ষেত্রে দেশটি জাপান ও নেদারল্যান্ডসের মতো মিত্র দেশগুলোকেও প্রভাবিত করছে।
এদিকে মঙ্গলবার (৪ জুলাই) চীনে রাষ্ট্রীয় মিডিয়া ট্যাবলয়েড গ্লোবাল টাইমস এক সম্পাদকীয়তে বলেছে, চীনের এই সিদ্ধান্ত হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্র দেশগুলোকে হুঁশিয়ারি দেয়ার একটি ‘কার্যকরি উপায়’। যে চীনকে আরও উন্নত প্রযুক্তি সংগ্রহ করা থেকে আটকানোর প্রচেষ্টা করা তাদের একটি ‘ভুল সিদ্ধান্ত’।
এ বিষয়ে জানতে চীনা বাণিজ্য মন্তণালয়ে যোগাযোগ করা হলে তারা রয়টার্সের অনুরোধে কোনো সাড়া দেয়নি।
এর আগে সোমবার (৩ জুলাই) চীনা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও কাস্টমস বিভাগের জারি করা নির্দেশনা বলা হয়েছে, চিপ তৈরিতে প্রয়োজনীয় ধাতু গ্যালিয়াম ও জার্মেনিয়াম রফতানি করতে হলে এখন থেকে আলাদা লাইসেন্সের প্রয়োজন হবে। আগামী ১ আগস্ট থেকে এ নির্দেশনা কার্যকর হবে। চীন এ দুটি খনিজ ধাতুর প্রধান উৎপাদক।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, যেসব বৈদেশিক ক্রেতা এসব ধাতু কিনতে চান তাদের উল্লেখ করতে হবে কেন তারা এসব ধাতু কিনতে চান। কারণ, বিষয়টি চীনের ‘জাতীয় নিরাপত্তা ও স্বার্থ সংরক্ষণের’ জন্য অতি জরুরি।
জার্মেনিয়াম উচ্চগতির কম্পিউটার চিপ, প্লাস্টিক এবং সামরিক অ্যাপ্লিকেশন যেমন নাইট-ভিশন ডিভাইসের পাশাপাশি স্যাটেলাইট ইমেজ সেন্সরগুলিতে ব্যবহৃত হয়। গ্যালিয়াম রাডার এবং রেডিও কমিউনিকেশন ডিভাইস, স্যাটেলাইট এবং এলইডি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট, এলইডি ও সৌর প্যানেলের ফটোভোলটাইক প্যানেলসহ বিভিন্ন ইলেকট্রিক পণ্য তৈরিতে গ্যালিয়ামের প্রয়োজন হয়। এ ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নও (ইইউ) গ্যালিয়ামকে বিশেষ কাঁচামাল হিসেবে বিবেচনা করে। ইউরোপীয় কমিশনের ২০২০ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের গ্যালিয়াম উৎপাদনের ৮০ শতাংশ একাই নিয়ন্ত্রণ করে চীন।
একই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অপটিক্যাল ফাইবার ও ইনফ্রারেড ক্যামেরা লেন্স তৈরির জন্য অপরিহার্য উপাদান হলো জার্মেনিয়াম। এই ধাতুরও ৮০ শতাংশই উৎপাদন করে চীন।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে মার্কিন চিপ ও প্রযুক্তি কিনতে বাধা দেয় ওয়াশিংটন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে একই রকম রফতানি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে চীন। এর মাধ্যমে চীন সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে চাইছে।
চিপের কাঁচামাল রফতানিতে আকস্মিক নিয়ন্ত্রণ আরোপের ঘোষণায় ইতোমধ্যে বাজারে এই ধাতু দুটি চাহিদা বেড়ে গেছে। ফলে বাড়তে শুরু করেছে এর দাম।